insta logo
Loading ...
×

জীবনরেখায় আঘাত! কুড়মি আন্দোলনে কড়া পদক্ষেপ নিচ্ছে রেল

জীবনরেখায় আঘাত! কুড়মি আন্দোলনে কড়া পদক্ষেপ নিচ্ছে রেল

সুইটি চন্দ্র , আদ্রা :

জীবনরেখায় আঘাত! ফের আদিবাসী কুড়মি সমাজের রেল টেকা ও ডহর ছেঁকা (রেল ও সড়ক অবরোধ) কর্মসূচিকে ঘিরে চরম উত্তেজনা তৈরি হয়েছে জঙ্গলমহলে। উপজাতি তালিকাভুক্তির দাবিতে আগামী ২০ সেপ্টেম্বর থেকে অনির্দিষ্টকালীন রেল ও সড়ক অবরোধের ডাক দিয়েছে ওই সামাজিক সংগঠন। প্রশাসনের কাছে ইতিমধ্যেই স্মারকলিপি জমা পড়েছে। তবে রেল কর্তৃপক্ষ সাফ জানিয়েছে—রেল পরিষেবা স্তব্ধ করা আইন বিরুদ্ধ পদক্ষেপ। কেউ এই পথে হাঁটলে কঠোর আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আদ্রা রেল ডিভিশনের তরফে বুধবার এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘‘টামনা, ছররা, কুস্তাউর, পুরুলিয়া, কাঁটাডি, আনাড়া, উরমা, বাগালিয়া, বরাভূম, চাণ্ডিল, আদ্রা, গৌরীনাথধাম, কোটশিলা, পুন্দাগ, রাধাগাঁও, সাঁওতালডিহি, রুকনি, সিরজাম, ইন্দ্রাবিল, গোদাপিয়াসাল, শালবনি ও চন্দ্রকোণা রোড—এই সব স্টেশনে অবরোধের পরিকল্পনা রয়েছে কুড়মি সমাজের। রেল প্রশাসন স্পষ্ট জানাচ্ছে, এ ধরনের পদক্ষেপ সম্পূর্ণ অসাংবিধানিক।’’

কর্তৃপক্ষের দাবি, কলকাতা হাইকোর্ট ২০২৩ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর এক রায়ে জানিয়েছিল, জনসাধারণের পথ অবরোধ অসাংবিধানিক। এমনকি সুপ্রিম কোর্টও ২০২০ সালে ‘অমিত সাহনি বনাম কমিশনার অব পুলিশ’ মামলায় বলেছিল, আন্দোলনের নামে গণপরিষেবা বন্ধ করা যায় না। রেল দপ্তরের বক্তব্য, ‘‘রেল সাধারণ মানুষের জীবনরেখা। এই পরিষেবায় বাধা মানে যাত্রীদের নিরাপত্তা, জরুরি পরিষেবা এবং রেলের সম্পত্তি সবকিছুর উপরই সঙ্কট নেমে আসবে।’’

রেলের আশঙ্কা, রেল অবরোধে চলাচল বিঘ্নিত হলে কেবল রাজস্ব ক্ষতি হবে না, বহু যাত্রীর যাত্রা ব্যাহত হবে, চিকিৎসা থেকে শুরু করে অন্যান্য জরুরি পরিষেবাও মারাত্মকভাবে প্রভাবিত হবে। তাই বিবৃতিতে দক্ষিণ-পূর্ব রেলের অনুরোধ, ‘‘আদালতের নির্দেশের মর্যাদা দিয়ে সকলে রেল অবরোধ থেকে বিরত থাকুন। রেল যাত্রীদের নিরাপদ ও নিরবচ্ছিন্ন যাত্রা নিশ্চিত করতে প্রশাসনকে সহযোগিতা করুন।’’

আদিবাসী কুড়মি সমাজ সূত্রে জানানো হয়েছে, পুরুলিয়ায় মোট ২৯টি স্টেশন, ঝাড়গ্রামে ৩টি, মেদিনীপুরে ৭টি, ঝাড়খন্ডে ১৪টি ও ওড়িশার একটি জায়গায় রেল অবরোধের ডাক দিয়েছে সংগঠন।

এই অবরোধ নিয়ে সমগ্র জঙ্গলমহলে চাপা উত্তেজনা ছড়িয়েছে। সাধারণ মানুষজনের মধ্যে যেমন বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে, তেমনি কুড়মি সমাজের মধ্যেও বিভাজন তৈরি হয়েছে। প্রশাসন সূত্রে খবর, রেল অবরোধ ঠেকাতে রাজ্য ও রেল পুলিশ বৃহস্পতিবার বৈঠকে বসছে। ইতিমধ্যেই আরপিএফ ও জিআরপি মিলিয়ে মহড়াও সম্পূর্ণ হয়েছে। পুরুলিয়া জেলা পুলিশও পুজোর মুখে যেকোনও পরিস্থিতি সামলাতে প্রস্তুত বলে জানিয়েছে।

অন্যদিকে এই অবরোধের বিরুদ্ধে সচেতন নাগরিক মঞ্চের ব্যানারে বৃহস্পতিবার বিকেল তিনটেয় পুরুলিয়া ট্যাক্সি স্ট্যান্ডে বিক্ষোভ সমাবেশের ডাক দেওয়া হয়েছে। আবার এদিনই রেল টেকা বিষয়ে দায়ের হওয়া জনস্বার্থ মামলায় শুনানি রয়েছে হাইকোর্টে। ফলে আদালতের রায়ের দিকে তাকিয়ে রেল ও রাজ্য পুলিশ।

যদিও কুড়মি সমাজের তরফে নেতা অজিতপ্রসাদ মাহাতো সাফ জানিয়েছেন, ‘‘এতদিন পর প্রশাসনের ঘুম ভাঙল। এখন বৈঠক ডাকছে। আগে যদি উদ্যোগ নিত, তাহলে কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়া যেত। আমরা সর্বস্তরে আমাদের কর্মসূচির কথা জানিয়েছিলাম, কিন্তু সাড়া পাইনি বলেই এবার আবার অনির্দিষ্টকালের অবরোধের ডাক দিতে হয়েছে।’’ তবে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার দিনগুলিতে শুধুমাত্র পরীক্ষার্থীদের জন্য সড়ক অবরোধে ছাড় দেওয়া হবে বলে জানিয়েছে কুড়মি সমাজ।

সব মিলিয়ে ২০ সেপ্টেম্বরের দিকে তাকিয়ে প্রশাসন, রেল ও সাধারণ মানুষ। দিন যত এগোচ্ছে, অবরোধকামী সংগঠন ও প্রশাসনের মধ্যে সংঘাত ততই বাড়ছে। আদালত কী রায় দেয়, তার উপরই এখন নির্ভর করছে জঙ্গলমহলের রেলপথ ও সড়কপথের ভাগ্য।

Post Comment