insta logo
Loading ...
×

টানাটানির পুরসভায় বকেয়া বেতনের দাবিতে আজ থেকে অচল হচ্ছে পুরুলিয়া শহর

টানাটানির পুরসভায় বকেয়া বেতনের দাবিতে আজ থেকে অচল হচ্ছে পুরুলিয়া শহর

নিজস্ব প্রতিনিধি, পুরুলিয়া :

পুজোর মুখে ফের অচল হয়ে যাচ্ছে পুরুলিয়া পুরসভা। ১৬ মাসের বকেয়া বেতন ও বোনাস বৃদ্ধির দাবিতে অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতির ডাক দিলেন পৌরসভার প্রায় ১,৭০০ অস্থায়ী কর্মচারী। শুধু সাফাই বিভাগ নয়, এবার জল, আলো, অফিস—সব বিভাগ মিলিয়ে এই কর্মবিরতির ডাক দেওয়া হয়েছে। ফলে সোমবার থেকে শহরের নাগরিক পরিষেবা কার্যত বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

শনিবারই কর্মীরা পুরসভা কার্যালয় ও গাড়িখানার সাফাই বিভাগে পোস্টারিং করেন। রবিবার পুরুলিয়া সদর থানায় লিখিতভাবে অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতির কথা জানানোর পাশাপাশি পুরপ্রধানকেও লিখিত নোটিস দেন। কর্মীদের দাবি—চলতি বছরের জুলাই–অগাস্টের বেতন বাকি থাকার পাশাপাশি ২০১৫-১৬ আর্থিক বছরের ১৪ মাসের বেতনও এখনও মেলেনি। সব মিলিয়ে ১৬ মাসের বকেয়া বেতন আর বোনাস বৃদ্ধির দাবিতেই তাঁদের এই কর্মবিরতি।

রবিবার তড়িঘড়ি বৈঠক ডাকেন পুরপ্রধান নবেন্দু মাহালি। কিন্তু অধিকাংশ কাউন্সিলর হাজির না হওয়ায় বৈঠক ফলপ্রসূ হয়নি। এই অবস্থায় বিজেপির কাউন্সিলর তথা বিরোধী দলনেতা প্রদীপ মুখোপাধ্যায় পুরপ্রধানের পদত্যাগ দাবি করে বলেন, ‘‘শাসকদল পরিচালিত পুরবোর্ড যদি কর্মীদের বেতন দিতে না পারে, তবে সেটাই তাদের ব্যর্থতা।’’ অন্য দিকে, পুরপ্রধান বলেন, ‘‘আমরা কর্মীদের অনুরোধ করেছি, কর্মবিরতি প্রত্যাহার করার জন্য। পুজোর মুখে শহরের মানুষ সমস্যায় পড়বেন। তাঁদের দাবিগুলো গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে।’’

অস্থায়ী কর্মীদের বক্তব্য, এর আগে দু’দুবার পুর বোর্ডের বৈঠকে আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল দেড় মাসের মধ্যে সমস্যার সমাধান হবে। তিন মাস পার হয়ে গিয়েছে, কিন্তু বেতন মেটানো হয়নি। অরাজনৈতিক সংগঠন পুরসভা অস্থায়ী কর্মচারী ইউনিয়নের তত্ত্বাবধানে ধর্মঘটের ডাক দেওয়া হয়েছে। সংগঠনের নেতা সরজিৎ স্যামুয়েল বলেন, ‘‘আমরা বারবার সমস্যার কথা জানিয়েছি। কিন্তু ফল হয়নি। সংসার চালানোর মতো পরিস্থিতি নেই। মুদি দোকানে ধার, টিউশনের ফি, এমনকি ঘরে হাঁড়ি চড়ানোও মুশকিল। তাই আমরা অনির্দিষ্টকালীন কর্মবিরতির রাস্তায় হাঁটতে বাধ্য হলাম।’’

পুরসভার আর্থিক টানাপোড়েনই এই সমস্যার মূল। মাসিক আয় গড়ে ৩০ লাখ টাকা হলেও, অস্থায়ী কর্মীদের বেতন মেটাতে মাসে খরচ প্রায় ৭০ লাখ। অর্থাৎ মাসে গড়ে ৪০ লাখ টাকার ঘাটতি। শুধু তাই নয়, পেনশনার্সদের জন্যও মাসে প্রায় ৪২ লাখ টাকা খরচ হয়, যার মধ্যে ৬০ শতাংশ বহন করে পুরসভা। স্থায়ী কর্মীদের বেতনের ৮৫ শতাংশ রাজ্য সরকার দিলেও অস্থায়ী কর্মীদের বেতন ও বোনাস পুরোটা পুরসভাকেই মেটাতে হয়। দুর্গাপুজো, ঈদ, বড়দিনে বোনাস বাবদ প্রতি বছর প্রায় ২৬ লাখ টাকা খরচ হয়।

পুরসভার আর্থিক সংকট দীর্ঘদিনের। অভিযোগ, ২০১০ সালের পুর নির্বাচনের আগে কংগ্রেস পুরবোর্ড নির্বিচারে অস্থায়ী কর্মী নিয়োগ করেছিল। পরে তৃণমূল কংগ্রেস পরিচালিত বোর্ডও একইভাবে নিয়োগ বাড়ায়। ফলে কর্মী সংখ্যা বাড়লেও আয়ের উৎস ততটা বাড়েনি। অনেক কর্মী নিয়মিত কাজ না করলেও মাসে মোটা অঙ্কের বেতন পাচ্ছেন বলে অভিযোগ। অথচ ভোটব্যাঙ্কের চাপে কাউকে ছাঁটাই করার সাহস দেখাতে পারছে না বোর্ড।

পুরপ্রধান নবেন্দু মাহালি স্বীকার করেছেন, ‘‘টেনে টুনে কোনওভাবে পুর সংসার চলছে। আয়ের উৎস বাড়ানোর চেষ্টা হচ্ছে, তবে তা যথেষ্ট নয়।’’

অস্থায়ী কর্মীরা প্রশ্ন তুলছেন—যত চেষ্টা সত্ত্বেও কেন স্থায়ী সমাধান মিলছে না? উত্তর খুঁজতে ব্যর্থ পুরসভা, ফলে ভোগান্তির মুখে সাধারণ মানুষ। আজ সোমবার সকাল থেকে বিক্ষোভে বসবেন অস্থায়ী কর্মীরা। ভোর পাঁচটা থেকে গাড়িখানায় সাফাই ইউনিটে, এরপর সকাল দশটা থেকে পুরসভা কার্যালয়ে।

সবে মিলে পুজোর মুখে পুরুলিয়ার নাগরিক পরিষেবা কার্যত স্তব্ধ হওয়ার পথে।

Post Comment