সুইটি চন্দ্র, কোটশিলা :
চিতাবাঘের স্থায়ী বসবাস হয়ে উঠেছে পুরুলিয়ার কোটশিলা বনাঞ্চল। চিতাবাঘের প্রজননের চিহ্ন স্পষ্ট হয়ে উঠছে এখানে। সম্প্রতি সিমনি বিটের জঙ্গলে একটি ট্র্যাপ ক্যামেরায় ধরা পড়েছে দুই পূর্ণবয়স্ক চিতাবাঘের দৃশ্য—বনদপ্তরের মতে তারা একই মায়ের সন্তান। বছর তিনেক আগে জন্ম নেওয়া এই জোড়া ভাই-বোন শাবক থেকে সাব-এডাল্ট পর্যায় অতিক্রম করে এখন প্রায় পূর্ণবয়স্ক।

পুরুলিয়া বনবিভাগের ডিএফও অঞ্জন গুহ জানান, “এই দুই চিতা আমাদের ট্র্যাপ ক্যামেরায় ধরা পড়েছে। পাশাপাশি ছবি, পায়ের ছাপ এবং স্থানীয় বাসিন্দাদের বয়ান থেকে আমরা নিশ্চিত হয়েছি—ওরা বছর তিনেক আগে সিমনি বিটেই জন্মেছে। ওদের মা-বাবাও আশেপাশেই রয়েছে। অর্থাৎ, কোটশিলার জঙ্গলে চিতাবাঘের এক পূর্ণাঙ্গ পরিবার এখন স্থায়ীভাবে বসবাস করছে।”

২০২২ সালের আগে থেকেই সিমনি বিটের জঙ্গলে গবাদি পশু নিখোঁজ হওয়া ও মৃতদেহে দংশনের চিহ্ন থেকে চিতাবাঘের উপস্থিতির ইঙ্গিত মিলেছিল। পরে একের পর এক ট্র্যাপ ক্যামেরায় ধরা পড়ে পূর্ণবয়স্ক পুরুষ এবং স্ত্রী চিতার ছবি। ২০২৩ সালে দেখা যায় তাদের শাবকদের। ২০২৪ সালের গোড়ার দিকে এই চিতারা লোকালয়ে প্রবেশ করে নোয়াহাতু বিটের তাহেরবেড়া গ্রামে পৌঁছে গবাদি পশু টেনে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে—যার ফলে গ্রামে চরম আতঙ্ক ছড়ায়।

পরিস্থিতি মোকাবিলায় বনদপ্তর মাইকিং করে সচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি নজরদারি জোরদার করে। কিছু সময় পরে চিতাবাঘের গতিবিধির তথ্য কমে যায়। তবে বনদপ্তর ও ‘হিল’ নামে একটি বন্যপ্রাণ সংস্থার যৌথ উদ্যোগে বসানো নতুন ট্র্যাপ ক্যামেরা আবার তুলে আনে জোড়া চিতার হৃষ্টপুষ্ট ও নিরাপদ উপস্থিতির প্রমাণ।

সিমনি গ্রামের বাসিন্দা বাইসু কিসকু ও পদক হেমব্রম জানান, “যখন শাবক ছিল, তখন পায়ের ছাপ ছিল ছোট। এখন যে চিহ্নগুলো দেখছি, তা বড়—ওরা বড় হয়েছে। আগের মতো গরু খেয়ে নিচ্ছে না। মনে হয়, এখন জঙ্গলে খাবার পাচ্ছে।” বনবিভাগও বলছে, বর্তমানে ওই অঞ্চলে বন্য শূকর ও হরিণের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে চিতাবাঘের খাদ্যাভাব নেই, এবং তারা জঙ্গলের গভীরেই থাকতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করছে।
এই ঘটনার মাধ্যমে প্রমাণিত হল, কোটশিলার জঙ্গল এখন চিতাবাঘের নিরাপদ আশ্রয়। জঙ্গল সমৃদ্ধ হচ্ছে, বাস্তুতন্ত্রও হচ্ছে আরও ভারসাম্যপূর্ণ। বন্যপ্রাণের বাস্তুতন্ত্র পুনরুদ্ধারে এটি নিঃসন্দেহে একটি উল্লেখযোগ্য সাফল্য।
দেখুন ভিডিও👇🏻
Post Comment