নিজস্ব প্রতিনিধি, পুরুলিয়া :
বিজেপির রাজ্য সভাপতির আসন বদলের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। সুকান্ত মজুমদারের মেয়াদ শেষের পথে, ‘এক ব্যক্তি, এক পদ’ নীতি মেনে তাঁকে সরিয়ে নতুন সভাপতির খোঁজে নেমেছে গেরুয়া শিবির। এমন পরিস্থিতিতে বঙ্গ বিজেপির পরবর্তী সভাপতির দৌড়ে উঠে এসেছে একাধিক নাম। সেই তালিকায় জায়গা করে নিয়েছেন পুরুলিয়ার সাংসদ জ্যোতির্ময় সিং মাহাতো-ও।
মঙ্গলবার বিজেপি নেতৃত্ব ‘সংগঠন পর্ব – ২০২৪’ (বিজেপির সাংগঠনিক নির্বাচন) এর নোটিফিকেশন জারি করেছে। বুধবার দুপুর ২টা থেকে বিকেল ৪টার মধ্যে মনোনয়ন জমা নেওয়া হবে। পরবর্তী এক ঘণ্টায় স্ক্রুটিনি ও সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে প্রত্যাহারের সুযোগ থাকবে। যদি প্রতিদ্বন্দ্বিতা থাকে, তাহলে বৃহস্পতিবার ভোটগ্রহণ হবে এবং বেলা দেড়টা থেকে গণনা শুরু হবে।
শমীক ভট্টাচার্য, দিলীপ ঘোষ, জগন্নাথ সরকার, অগ্নিমিত্রা পাল, লকেট চট্টোপাধ্যায়, জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায়-সহ একাধিক নেতা সভাপতি হওয়ার দৌড়ে রয়েছেন। সেই দৌড়ে জোরালো সম্ভাবনা তৈরি করেছেন জ্যোতির্ময় মাহাতোও। সম্প্রতি জেলার পাশাপাশি রাজ্য রাজনীতিতেও তাঁর প্রভাব বেড়েছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক মহল। বিশেষত দক্ষিণবঙ্গের সংগঠন মজবুত করতে এবং জঙ্গলমহলে প্রভাব বিস্তারের ক্ষেত্রে জ্যোতির্ময়ের নাম গুরুত্ব পাচ্ছে।
২০১৯ লোকসভা ভোটে তিনি তুলেছিলেন গেরুয়া ঝড়। জিতেছিলেন ২ লাখের বেশি ভোটে। তখনই ছিলেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রীত্বের দাবিদার। হননি। ২০২৪-এ ১৭ হাজারের বেশি ভোটে জিতেও ফের দাবি জোরদার হয়েছিল। তিনি জ্যোতির্ময় সিং মাহাতো। রাজনীতি অভিজ্ঞ মহল জানে রাজ্য বিজেপির সাধারণ সম্পাদক তথা পুরুলিয়ার সাংসদের দিল্লিতে বেশ দহরম মহরম। মন্ত্রীত্ব পাননি ঠিকই, কিন্তু এবার রাজ্য বিজেপির রাজ্য সভাপতি পদের অন্যতম দাবিদার হিসেবে উঠে এসেছে তাঁর নাম।
সাংসদ জ্যোতির্ময় সিং মাহাতো নিজে অবশ্য বলছেন, “এ খবর সঠিক নয়।” কিন্তু দলে তাঁর বিক্ষুব্ধ গোষ্ঠীও মেনে নিচ্ছে যে, জ্যোতির্ময় দিল্লির নেতাদের গুডবুকে। স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী থেকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তাঁর ভোট প্রচারে এসেছেন। ২০১৯ সালে লোকসভা ভোটের আগে পুরুলিয়ায় সৈনিক স্কুলের মাঠের জনসভা থেকে প্রধানমন্ত্রী জ্যোতির্ময়কে তিন-তিনবার পিঠ চাপড়ানি দিয়েছিলেন। বলেছিলেন, ” দিল্লি আপকে সাথ মে হ্যায় । হামে খবর হে আপ জিতো গে। পুরুলিয়া কো আগে বড়ানা হে।”
স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীর হাত যাঁর পিঠে তিনি এবার বিজেপির রাজ্য সভাপতি হয়ে যেতেই পারেন।
ঝালদা ১ নং ব্লকের পুস্তি গ্রাম পঞ্চায়েতের পাতরাডি গ্রামে তাঁর পরিবার যুক্ত কৃষির সঙ্গে। ৪০টি বসন্ত পার করেছেন অকৃতদার জ্যোতির্ময়। আরএসএস কর্মী থেকে বিজেপিতে তাঁর আগমন। ঝালদার জারগো হাইস্কুল থেকে মাধ্যমিক পাশ করেন তিনি।অর্থনীতিতে স্নাতক হয়েছেন রাঁচি বিশ্ববিদ্যালয়ের গোসনার কলেজ থেকে। কিন্তু তার আগেই জীবন নিয়েছে এক অপ্রত্যাশিত মোড়। একাদশ শ্রেণীতে পড়ার সময় রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের সদস্য হয়ে খাকি হাফপ্যান্ট, আর সাদা জামা পরে ডুব দেন সংগঠনের কাজে। ডুবে যান। হয়েছেন সংগঠনের পুরুলিয়ার জেলা সংযোজক। আরএসএস জেলা প্রমুখ। প্রতিবেশী ঝাড়খন্ড এবং ওড়িশাতেও তাঁর অভিজ্ঞতা কাজে লাগায় আরএসএস। পুরুলিয়ায় একসময় জেলা যুব মোর্চার দায়িত্ব সামলেছেন জ্যোতির্ময়। জেলা সাধারণ সম্পাদক থেকে যুব সভাপতি। ২০১৯-এ পেয়েছেন দলের জেলা সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব। এখন তিনি রাজ্যের সাধারণ সম্পাদক। একেবারে ধাপে ধাপে উত্তরণ তাঁর। এবার তিনি যে একেবারে রাজ্য সভাপতি পদের অন্যতম দাবিদার সে বার্তাও রটে গেছে দলে তো বটেই, বিরোধী শিবিরেও।
২০২৬-এর বিধানসভা ভোট বিজেপির জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। ২০২৪ লোকসভা নির্বাচনে বাংলায় বিজেপির আসন কমে ১২-তে দাঁড়িয়েছে। বিধানসভায় ক্ষমতায় যেতে হলে প্রাসঙ্গিক হবে নয়া সভাপতির নেতৃত্বে সংগঠনকে ঐক্যবদ্ধ করা। রাজনৈতিক মহলের মতে, নতুন সভাপতিকে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব সামলে, অন্তত ৬০টি আসনে জয়ের রূপরেখা তৈরি করতে হবে।
এখন দেখার কাঁটার মুকুট পরে কে বসবেন কাঁটার সিংহাসনে!
Post Comment