insta logo
Loading ...
×

নিজের ঘরে ফিরল বাঘ, তবে আছে শর্ত!

নিজের ঘরে ফিরল বাঘ, তবে আছে শর্ত!

নিজস্ব প্রতিনিধি, রাঁচি :

না, চিড়িয়াখানা নয়। সরাসরি পালামৌর জঙ্গলের কোর এলাকায় ছেড়ে দেওয়া হলো বান্দোয়ানের ভবঘুরে রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারকে।
ন্যাশনাল টাইগার কনজারভেশন অথরিটির নির্দেশে শেষ মুহূর্তে বদলানো হয় সিদ্ধান্ত। তাই কোনও খাঁচাবন্দি পুনর্বাসন নয়, বরং বৃহস্পতিবার সকাল সাতটায় ‘সফট রিলিজ’-এ ফিরল সে নিজের জঙ্গলে—নিয়ন্ত্রিত হলেও অনেকটাই স্বাধীনতায়।

ঝাড়খণ্ডের পালামৌ ব্যাঘ্র প্রকল্পের সবুজ জঙ্গলে তখন আলো ফোটার মুহূর্ত। ঘাসে বোলানো বৃষ্টির ফোঁটা। চিতল হরিণের দল ঘুরছে নির্ভয়ে। ঠিক তখনই খোলা হলো সবুজ খাঁচার দরজা। গন্ধ শুঁকে, কান খাড়া করে, আর এক মুহূর্ত না ভেবে ছুটে গেল বাঘ।
এ যে ফেরার আনন্দ। নিজের ভিটে মাটিতে, নিজের ছন্দে।

তবে এই মুক্তি নিখাদ নয়।
সফট রিলিজ মানেই ২৪ ঘণ্টা নজরদারি। ট্র্যাপ ক্যামেরার নজরে থাকবে সে। তার চলাফেরা, শিকারের ক্ষমতা, শরীরী ভাষা—সবই বিশ্লেষণ হবে পর্যবেক্ষকের চোখে। যদি প্রমাণ করে দেয় সে পুরোপুরি উপযুক্ত, তবে মিলবে স্থায়ী মুক্তির ছাড়পত্র।

বুধবার ভোরে ঝাড়খণ্ডের সিল্লি থানার মারদু গ্রামের পুরন্দর মাহাতোর বাড়িতে ঢুকে পড়ে জিনাত বাঘিনীর এই বনজারা প্রেমিক। বাড়িতে তখন পুরন্দর বাবু আর তাঁর দূর সম্পর্কের কিশোরী শ্যালিকা স্বপ্না কুমারী। গোয়াল থেকে ফিরে পুরন্দর বাবুর কিশোরী কন্যা সনিকা কুমারী দেখে ঘরের মধ্যে বাঘ। সেই লোমহর্ষক অভিজ্ঞতার বর্ণনা করতে গিয়ে শিউরে উঠছে তারা। পুরন্দর বাবু কোনমতে দুই কিশোরীকে বাড়ির বাইরে বার করে নিজে বাঘের সামনে আটকে থাকেন প্রায় ১ ঘন্টা। অথচ ভদ্রলোক বাঘ এক ঘরে থাকতেও কিচ্ছু করেনি তাঁকে। এর আগেও পুরুলিয়ার বান্দোয়ানে পরপর দুবার মানুষের মুখোমুখি হয়। ঝাড়খণ্ডেও মানুষের সম্মুখীন হয়েছে প্রেমিক বাঘটি। কিন্তু একবারও আক্রমণ করেনি।

বন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, বুধবার সন্ধ্যেবেলায় ঝাড়খণ্ডের রাঁচিতে পৌঁছনোর পরেই তার স্বাস্থ্য পরীক্ষা হয়। দীর্ঘ ৬ মাস ধরে প্রায় হাজার কিমি ট্র্যাভেলের পরও তার শরীরে ক্লান্তির ছাপ ছিল না। খাওয়া-দাওয়া, চলাফেরা—সব কিছুতেই ছিল স্বাভাবিকতা। এর পরেই বৃহস্পতিবার সকাল নাগাদ এনটিসিএ-র নির্দেশ আসে—সিডেটেড বা খাঁচাবন্দি রাখার দরকার নেই, বরং অবিলম্বে সফট রিলিজ করতে হবে।

পালামৌ ব্যাঘ্র প্রকল্পের ডেপুটি ফিল্ড ডিরেক্টর প্রজেশকান্ত জেনা বলেন, “রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারটিকে সফট রিলিজ করা হয়েছে। ট্র্যাপ ক্যামেরায় যদি দেখা যায় সে নিজে শিকার করছে, তাহলে আরও গভীর অরণ্যে চিরতরে মুক্ত করে দেওয়া হবে।”

তবে অতীত অভিজ্ঞতা সতর্ক করছে কর্তৃপক্ষকে।
ওড়িশার সিমলিপালে যে জিনাত ওরফে গঙ্গা আর যমুনাকে আনা হয়েছিল মহারাষ্ট্রের তাডোবা থেকে, তাদের মধ্যে গঙ্গা সফট রিলিজ থেকেই ঘরছাড়া হয়ে যায়। পরে উদ্ধার হয় দক্ষিণ বাঁকুড়া থেকে। যমুনাকে ধরা পড়তে হয় ওড়িশার জঙ্গলে। আর এই জিনাতের ভবঘুরে আশিক? গত ছ’মাসে সে ঘুরে ফেলেছে তিন রাজ্য, প্রায় হাজার কিমি পথ। বন দফতর জানে, এই বাঘের পায়ে সরষে। তাই সফট রিলিজ হলেও নজরদারিতে কোনও ফাঁক রাখা হচ্ছে না।

অতএব, আপাতত নিজের অরণ্যে ফিরে এলেও—এখনও পরীক্ষা বাকি। জঙ্গলই ঠিক করবে, ভবঘুরে জিনাতের আশিকের জন্য স্থায়ী ঠিকানা হবে কি না এই পালামৌ।

আশিক নামা

◾৩১ শে ডিসেম্বর ঝাড়খণ্ডের সরাইকেলা- খরসোঁওয়া বনবিভাগের চান্ডিল বনাঞ্চলের বালিডিতে একটি গবাদি পশু ও বাছুর মেরে নিজের অস্তিত্ব জানান দিয়েছিল।

◾চান্ডিল বনাঞ্চল থেকে খুঁটি বনাঞ্চলের তামাড় এলাকাও ঘুরে আসে সে।

◾এরপর আশ্রয় দলমা পাহাড়ে। মাঝেমধ্যে লোকালয়ে তাকে দেখতে পাওয়ার দাবি উঠেছেম

◾১২ই জানুয়ারি দলমা থেকে প্রবেশ করে বাংলায়।

◾১৭ জানুয়ারি শুক্রবার বান্দোয়ানের জানিঝোড় গ্রামের বাসিন্দা যুধিষ্ঠির মাহাতো সন্ধ্যায় বান্দোয়ানের তালপাত থেকে নিজের বাড়ি জানিঝোড় যাওয়ার পথে নেকড়া গ্রামের কাছে বাঘের দেখা পেয়েছিলেন। তিনি জানিয়েছিলেন একেবারে মুখোমুখি হয়েও বাঘ স্রেফ মুখ ঘুরিয়ে চলে গিয়েছিল

◾১৮ জানুয়ারি শনিবার বান্দোয়ানের ভাঁড়ারির জঙ্গলে ভোর ৩ টে ২৪ মিনিট ৫৯ সেকেন্ডে প্রথমবার ট্র্যাপ ক্যামেরায় ধরা পড়েছে তার ছবি।

◾২০ জানুয়ারি। ৪৮ ঘন্টার লাগাতার বাঘবন্দি অভিযানে রীতিমতো বিরক্ত হয়ে ফের ঝাড়খন্ডে চলে যায় সে।

◾ ২৩ জানুয়ারি ফের বাংলায়। বেলপাহাড়িতে ট্র্যাপ ক্যামেরায় ছবি তুলিয়ে দক্ষিণ বাঁকুড়ায় চলে যায় সে।

◾২৬ জানুয়ারি আবার বান্দোয়ানে চলে আসে বাঘটি। উপস্থিত বুদ্ধির বলে গায়ের চাদর মাথার ওপর বনবন ঘুরিয়ে বাঘের মুখোমুখি হয়েও বাঁচলেন পুরুলিয়ার বান্দোয়ানের পুকুরকাটা গ্রামের কৃষক যুবক সর্বেশ্বর মান্ডি।
বান্দোয়ান থেকে আবার দক্ষিণ বাঁকুড়া যায় বাঘটি। সেখান থেকে ফের পুরুলিয়ার যমুনাগোড়া।
◾২৮ জানুয়ারি আবার দলমায় বাঘ।

◾১ মার্চ শেষবার দলমার ট্র‍্যাপ ক্যামেরায় ধরা পড়ে সে।

◾২৫ জুন ঝাড়খণ্ডের সিল্লি থানার মারদু গ্রামে গৃহস্থের বাড়ি থেকে বাঘবন্দি।

◾২৬ জুন পালামৌ জঙ্গলে সফট রিলিজ।

Post Comment