insta logo
Loading ...
×

অযোধ্যা পাহাড়ে সিধু-কানুর মূর্তি ঘিরে উত্তেজনা, পুলিশের হস্তক্ষেপে মিটলো ভুল বোঝাবুঝি

অযোধ্যা পাহাড়ে সিধু-কানুর মূর্তি ঘিরে উত্তেজনা, পুলিশের হস্তক্ষেপে মিটলো ভুল বোঝাবুঝি

নিজস্ব প্রতিনিধি, অযোধ্যা :

ফের শান্তির অযোধ্যা পাহাড়ে বহিরাগত উস্কানি! সিধু-কানুর মূর্তি বসানোকে কেন্দ্র করে ফের উত্তাল হয়ে উঠল অযোধ্যা পাহাড়। বহিরাগতদের উস্কানিতে সোমবার বিকেলে অযোধ্যার অন্যতম প্রখ্যাত সাইট সিয়িং ময়ূর পাহাড় এলাকায় দেখা দিল উত্তেজনা। পরিস্থিতি এমন জায়গায় পৌঁছায় যে, পুলিশের হস্তক্ষেপ ছাড়া পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব ছিল না। ঝালদা মহকুমা পুলিশ আধিকারিক গৌরব ঘোষ ও বলরামপুর সার্কেল অফিসার তথা বাঘমুণ্ডি থানার ইনচার্জ বাপ্পা মিত্রর নেতৃত্বে পুলিশ দ্রুত এলাকায় পৌঁছে ৭ জনকে আটক করে। পরে অবশ্য দুই পক্ষ নিজেদের ভুল বুঝতে পেরে সংঘাত মিটিয়ে নেয়। উঠে আসে একসঙ্গে পাহাড় উন্নয়নে এগিয়ে আসার বার্তা।

ঘটনার কেন্দ্রে রয়েছে আগামী ৩০ জুন হুল দিবসে সিধু-কানুর মূর্তি বসানোর সিদ্ধান্ত। অযোধ্যা পাহাড় আদিবাসী উন্নয়ন কমিটি সিদ্ধান্ত নেয়, পর্যটন কেন্দ্র ময়ূর পাহাড়ে সাঁওতাল বিদ্রোহের দুই অমর শহিদের স্মৃতিসৌধ তৈরি করা হবে। ওই প্রকল্পে রেস্টরুম ও শৌচাগারও তৈরি করার পরিকল্পনা ছিল। জমিদাতা বাঘমুন্ডি ব্লকের বীরগ্রামের অঞ্চলের গঁধুডি গ্রামের বাসিন্দা অবনী মাহাতো কমিটিকে ১৫ ডেসিমেল জমি দান করেন এবং জমির ‘নো অবজেকশন’ শংসাপত্রও প্রশাসনের কাছে পেশ করা হয়।

কাজ চলাকালীনই বাধা দিয়ে হাজির হয় ‘প্রকৃতি বাঁচাও এবং আদিবাসী বাঁচাও’ কমিটির কিছু সদস্য। তারা অযোধ্যা পাহাড় আদিবাসী উন্নয়ন কমিটির কর্মকর্তাদের ওপর চড়াও হয় বলে অভিযোগ। এমনকি নাকি মারধরও করে। উত্তেজনার মধ্যেই পুলিশ এসে পরিস্থিতি সামাল দেয়।

পুলিশ জানিয়েছে, জমি সংক্রান্ত সব কাগজপত্র বৈধ বলে প্রমাণিত হয়েছে। যাঁরা বাধা দেন, তাঁরা কোনও কাগজ দেখাতে পারেননি। ঝামেলায় আটক হওয়া সাতজনকে পরে ‘প্রিভেনটিভ অ্যারেস্ট’ দেখিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়। সমাজকর্মী ঝর্ণা আচার্য বলেন, “আদিবাসীদের ওপর নির্বিচারে লাঠিচার্জ হয়েছে, তার নিরপেক্ষ তদন্ত হওয়া উচিত।” পুলিশের তরফে লাঠিচার্জের অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে। যুযুধান কোনো পক্ষই লাঠিচার্জের অভিযোগ আনেনি।

অযোধ্যা পাহাড় আদিবাসী উন্নয়ন কমিটির সভাপতি বলিবাস মুর্মু বলেন, ” আমাদেরকে যে জমি দান করা হয়েছিল সেই জমিতে আমরা হুল দিবসে সিধু-কানুর মূর্তি তৈরি করবো বলে কাজ শুরু করেছিলাম। মাপজোক হওয়ার পর মাটি কাটার কাজ শেষে বেদি তৈরির কাজ চলছিল। সেই সময় প্রকৃতি বাঁচাও এবং আদিবাসী বাঁচাও কমিটির লোকজন আমাদের উপর চড়াও হয়। এমনকি মারধরও করেন। আমরা প্রতিরোধ করে জবাব দিই। পরবর্তীকালে তারা ভুল স্বীকার করেন। এখন আর কোথাও কোন ভুল বোঝাবুঝি নেই। এই ঘটনায় পুলিশ দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে অশান্তি বড় আকার ধারণ করত। “

বাধা দেওয়া পক্ষের প্রতিনিধি ধীরেন সরেন বলেন, “ভুল বোঝাবুঝি মিটে গিয়েছে। আমরা একসাথে পাহাড়ের উন্নয়নে কাজ করব। হুল দিবসের অনুষ্ঠানও মিলেমিশে পালন করা হবে।”

উল্লেখ্য, এর আগেও ফেব্রুয়ারি ও মার্চ মাসে অযোধ্যা পাহাড়ে নাইট ম্যারাথন ও গ্রামসভার সীমা নির্ধারণকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা তৈরি হয়েছিল। অভিযোগ, সেসব ক্ষেত্রেও বহিরাগতদের উস্কানিই ছিল মূল কারণ। কিন্তু প্রতিবারই অযোধ্যা পাহাড় আদিবাসী উন্নয়ন কমিটি প্রশাসনের পাশে থেকে পরিস্থিতি সামাল দিয়েছে।

স্থানীয়দের মতে, রাজ্যে রাজনৈতিক পালাবদলের পর পাহাড় অঞ্চলে যে উন্নয়নের জোয়ার এসেছে, বহিরাগতদের উস্কানি উপেক্ষা করে তা রক্ষা করা দরকার। উস্কানিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করে কোন স্বার্থে কারা পাহাড়ের শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বিঘ্নিত করতে চাইছে সে বিষয়ে কঠোর পদক্ষেপ নিক প্রশাসন।

Post Comment