দেবীলাল মাহাতো , আড়শা :
অবশেষে বাড়ি ফিরল বিষ্ণু কুমারের দেহ। ৩২ দিনের অপেক্ষা শেষ হল বৃহস্পতিবার । দেবেন মাহাতো মেডিকেল কলেজের মর্গ থেকে আড়শার বাড়িতে আনা হয় দেহ। পরিবার জানিয়েছে, এদিনই আড়শা স্মশানে শেষকৃত্য সম্পন্ন হবে।
কিন্তু মৃত্যুর ধোঁয়াশা কাটছে না। বরং প্রশ্ন আরও ঘনীভূত হচ্ছে। কলকাতা হাইকোর্ট ইতিমধ্যেই স্থানীয় পুলিশের হাত থেকে কেড়ে নিয়েছে তদন্তভার। বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষ স্পষ্ট মন্তব্য করেছেন— ‘‘স্থানীয় পুলিশ খোলা মনে তদন্ত করতে পারছে না। তাঁদের তদন্ত পূর্বনির্ধারিত সিদ্ধান্তের উপর দাঁড়ানো।’’ তাই তদন্তভার গিয়েছে সিআইডির হোমিসাইড শাখার হাতে।
দুটি ময়নাতদন্ত, দুটি ভিন্ন ছবি। দেবেন মাহাতো মেডিকেল কলেজে করা প্রথম ময়নাতদন্তের রিপোর্টে লেখা— শরীরে কোনও আঘাত নেই, জটিল অসুখেই মৃত্যু। কিন্তু কল্যাণী এইমসের দ্বিতীয় ময়নাতদন্তে উঠে এসেছে একাধিক আঘাতের চিহ্ন। চিকিৎসকদের মতে, সেসব আঘাত বিষ্ণুর মৃত্যুর অন্তত এক দিন আগে লেগেছিল।
সূত্রপাত জুলাইয়ের মাঝামাঝি। আড়শার খেদাডি গ্রামের শঙ্কর মাহাতোর মোবাইল হারানোর পর রটে যায়— সেটি নাকি বিষ্ণুর কাছে। ১৬ জুলাই থানায় ডাকা হয় বিষ্ণুকে। পরে ফোন ফেরত এলেও লিখিত অভিযোগ দায়ের হয়নি। থানা থেকে বাড়ি ফেরেন বিষ্ণু। কিন্তু কয়েক দিনের মধ্যেই অসুস্থ হয়ে পড়েন। ১৯ জুলাই রাতে তাঁকে সিরকাবাদ গ্রামীণ স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা মৃত ঘোষণা করেন।
পরিবারের অভিযোগ, পুলিশের মারধরের কারণেই মৃত্যু। তাই প্রথম থেকেই তাঁরা দেহ নিতে অস্বীকার করেন। ভাই সমন কুমারের ই-মেল অভিযোগের ভিত্তিতে এক অজ্ঞাত সিভিক ভলান্টিয়ারের বিরুদ্ধে খুনের মামলা রুজু হয়। সেখান থেকেই শুরু রাজনৈতিক তরঙ্গ। বিজেপি নেতৃত্ব বিষ্ণুর বাড়িতে যান, বিরোধী দলনেতা সরব হন, আড়শায় স্থানীয় জনগণের ডাকে বনধ হয়। বিক্ষোভ, ধস্তাধস্তি, গ্রেফতার— তপ্ত হয়ে ওঠে পরিবেশ। মামলা যায় কলকাতা হাইকোর্টে।
অবশেষে হাইকোর্টের নির্দেশে ৭ অগস্ট দ্বিতীয় ময়নাতদন্ত হয় কল্যাণীতে। সেই রিপোর্টেই ধরা পড়ে আঘাতের তথ্য। তার পরই ১৯ অগস্ট আদালত তদন্তভার সিআইডির হাতে দেয়। পরবর্তী শুনানি ১৯ সেপ্টেম্বর।
Post Comment