insta logo
Loading ...
×

‘সেফ ড্রাইভ, সেভ লাইফ’–রঙবাহারি প্রচার, তবুও দুর্ঘটনা থামানো যাচ্ছে না পুরুলিয়ায়

‘সেফ ড্রাইভ, সেভ লাইফ’–রঙবাহারি প্রচার, তবুও দুর্ঘটনা থামানো যাচ্ছে না পুরুলিয়ায়

সুইটি চন্দ্র, পুরুলিয়া:

শহর থেকে জেলা। ক্রমেই বাড়ছে পুরুলিয়ার পরিধি। আর তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মোটরবাইকের চলাচল। সেই সঙ্গে চার চাকার গাড়ি। আর তেমনই বাড়ছে দুর্ঘটনা। সঙ্গে মৃত্যু। সেই সঙ্গে বাড়ছে জখমের সংখ্যা। কেন? দুর্ঘটনা কমাতেই যে ২০১৬ সালে
‘সেফ ড্রাইভ, সেভ লাইফ’ প্রকল্প চালু হয়। তারপর এই প্রকল্পের প্রচারে কম জাঁকজমক সামনে আসেনি!
শহরের মোড়ে মোড়ে রঙিন ব্যানার, দেওয়াল জোড়া পোস্টার, নানা সচেতনতা বার্তায় ছেয়ে গিয়েছে চারদিক। একসময় যা ছিল শুধুই প্রশাসনিক উদ্যোগ। তা আজ এক সামাজিক প্রতিজ্ঞায় পরিণত হয়েছে। কিন্তু কোথায় কি?


বাস্তবের চিত্র যে সম্পূর্ণ ভিন্ন। ২০২৪ সালেই পুরুলিয়ায় ঘটেছে ২৪৮টি সড়ক দুর্ঘটনা, মৃত্যু হয়েছে ১৯৬ জনের। এই পরিসংখ্যানই জানান দেয়—প্রচারের গাঢ় রঙের নিচে লুকিয়ে আছে দুর্ঘটনার নির্মম রক্ত রঙ! রাস্তা হোক বা সভাকক্ষ। সচেতনতা কর্মসূচির অভাব নেই। কখনও বাইক মিছিল। কখনও আবার সভা-সেমিনারে পথ নিরাপত্তা নিয়ে বক্তব্য। কিন্তু বাস্তবে জেলার শহর থেকে গ্রাম রাস্তাগুলি যেন এখনও মৃত্যুফাঁদ। তবে দুর্ঘটনা রুখতে চেষ্টার শেষ নেই পুরুলিয়া জেলা পুলিশের। নানান পদক্ষেপ, নানান সচেতনতা। আর এই প্রচেষ্টার মাঝে আশার আলো হয়ে উঠছে কিছু তরুণ কণ্ঠ। নিস্তারিণী কলেজের এনসিসি ক্যাডেট উমা মন্ডল বললেন, “পুলিশ দিবসে আমাদের একটি অনুষ্ঠানে ডাক পড়েছিল। আমরা রাস্তায় দাঁড়িয়ে হেলমেট পরার আবেদন জানাই, ছোট্ট একটি বার্তা ও চকলেট দিয়ে মানুষকে সচেতন করার চেষ্টা করি। সেই সঙ্গে হেলমেটহীন বাইক আরোহীদের লজ্জা দিতে গোলাপ ফুলও দেওয়া হয়। আর এইসব কাজে মানুষের প্রশংসা আর গর্বের কথা শুনে আমাদের দায়িত্ববোধ আরও বেড়ে যায়।” উমার কণ্ঠে ফুটে উঠল আরেকটা অভিজ্ঞতা, “বৃষ্টির কারণে র‍্যালি বাতিল হলেও, অনুষ্ঠান থামেনি। গান, কবিতা, বক্তব্যের মাধ্যমে আমরা নতুনভাবে শিখেছি। এখন শুধু নিজেরাই নয়, আমাদের আশপাশের মানুষকেও সচেতন করার দায়িত্ব নিয়েছি।”

দুর্ঘটনা না কমলেও পুরুলিয়া জেলা পুলিশের ধারাবাহিক প্রচারে এই সচেতনতাটা কিন্তু ফিরছে। তাই তো বুধবার পুরুলিয়া শহরের রবীন্দ্র ভবনে পথ নিরাপত্তা সপ্তাহের সমাপ্তি অনুষ্ঠানে পুরুলিয়ার পুলিশ সুপার অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় বললেন, ” আমরা যখন ঘর থেকে বার হই তখন কিন্তু আমরা সকলেই আমাদের মোবাইলটা সঙ্গে নিতে ভুলি না। স্কুল পড়ুয়ারা যখন স্কুলে যায় তখন তারা স্কুল ব্যাগ নিয়ে যেতে ভোলে না। তাহলে যাঁরা মোটরবাইক চালান তাঁরা কেন বাড়ি থেকে বার হওয়ার সময় হেলমেট নেবেন না? ” পুরুলিয়ার সাধারন মানুষজনের মধ্যে এই সংবেদনশীল প্রশ্ন ছুঁড়ে হেলমেট সঙ্গে নিয়ে চলার অভ্যাস গড়ার এইভাবেই বার্তা দেন এস পি। আর তাই শুধু ছাত্র-ছাত্রী নয়। বদলের ডাক উঠেছে প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের মধ্যেও। পুরুলিয়া পুরসভার চেয়ারম্যান নবেন্দু মাহালি বললেন, “আমরা জনপ্রতিনিধিরা যদি নিজেরা হেলমেট পরি, তবেই তো মানুষ বোঝে বিষয়টির গুরুত্ব। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি পুরসভায় যেই কাউন্সিলর হোন না কেন। স্কুটি, মোটরবাইকে হেলমেট বাধ্যতামূলক। আমরাই যদি বদলাই, শহরও বদলাবে।”

সত্যিই, প্রচারের আলো যতই ঝলমলে হোক। তার নিচের অন্ধকার সবসময় চোখে পড়ে না। কিন্তু পথ নিরাপত্তা সপ্তাহের সমাপ্তি অনুষ্ঠানে তরুণদের অংশগ্রহণ, প্রশাসনের আন্তরিকতা, আর সামাজিক দায়িত্ববোধ মিলিয়ে ধীরে ধীরে গড়ে উঠছে এক সচেতন ভবিষ্যতের স্বপ্ন।

একটা নিরাপদ রাস্তা আর সতর্ক নাগরিক সমাজ—এই তো আসল লক্ষ্য। শুধু প্রচার নয়। প্রয়োজন বাস্তবের সাহসিকতা। তাই পুরুলিয়া জেলা পুলিশের উদ্যোগে
যে সকল ছাত্র-ছাত্রী একেবারে পুলিশের সঙ্গে মিশে ট্রাফিক সামলানো প্রকল্পে শামিল তারা কিন্তু বদলের বার্তাটা প্রচার করতে চাইছে চুপিসারেই। ধীরে হলেও পুলিশের সহায়তায় পুরুলিয়া জুড়ে এখন একটাই স্লোগান, সঙ্গে থাকুক হেলমেট। আর কমে যাক গাড়ির গতি। তাহলেই নিশ্চিন্তে বাড়ি।আর সেই পথেই এগোচ্ছে পুরুলিয়ার কলেজ প্রজন্ম, যারা জানে—পরিবর্তনের শুরু হয় নিজের থেকে!

Post Comment