insta logo
Loading ...
×

সুবিচার নইলে স্বেচ্ছামৃত্যু,এবাররাষ্ট্রপতির কাছে আবেদন যোগ্য শিক্ষকদের

সুবিচার নইলে স্বেচ্ছামৃত্যু,এবাররাষ্ট্রপতির কাছে আবেদন যোগ্য শিক্ষকদের

নিজস্ব প্রতিনিধি, পুরুলিয়া :

সাত বছর পার হয়েছে চাকরি জীবনের। তাঁরা শিক্ষক শিক্ষিকা। সমাজ গড়ে ওঠে তাঁদেরই হাত ধরে। অথচ রাজ্যে শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতির কারণে সুপ্রিম কোর্টের রায়ে চাকরি হারিয়েছেন তাঁরা। এবার যোগ্য শিক্ষকরা সরাসরি রাষ্ট্রপতির দ্বারস্থ হলেন। আবেদন একটাই, হয় সুবিচার দিন, নয়তো সপরিবারে দিন স্বেচ্ছামৃত্যুর অনুমতি। রেজিস্টার্ড পোস্টে যাচ্ছে একের পর এক চিঠি। চিঠির পাহাড়ে ঢেকে যাবে রাইসিনা হিলস।

সম্প্রতি রাজ্যের স্কুল শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় সুপ্রিম কোর্টের রায়ে বাতিল হয়েছে ১৭,২০৬ জন শিক্ষকের চাকরি। যোগ্য শিক্ষকদের কথায়, “এর মধ্যে প্রায় ১৫,৪০৩ জন শিক্ষককে ‘অপরাধহীন’ বা আদালতের ভাষায় ‘not-tainted’ হিসেবেই চিহ্নিত করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিবিআই-র রিপোর্ট এবং নিয়োগকারী এস এস সি-র বক্তব্যও এই শিক্ষকদের নির্দোষ বলেই স্বীকৃতি দিয়েছে। তবুও গিয়েছে তাঁদের চাকরি। “

সাত বছর ধরে সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত স্কুলে নিষ্ঠার সঙ্গে শিক্ষকতা করে এই নির্দোষ অথচ দণ্ডিত শিক্ষকদের প্রত্যেকে এই চিঠিগুলিতে রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর কাছে এক আবেগঘন আবেদন জানিয়েছেন। সেখানে তাঁরা আর্জি জানিয়েছেন — হয় সুবিচার দেওয়া হোক , অথবা তাঁর ও তাঁর পরিবারের জন্য ‘স্বেচ্ছামৃত্যুর’ অনুমতি দেওয়া হোক।

চিঠিতে শিক্ষকরা লিখেছেন, “আমি এবং আমার মতো আরও অনেকেই, যাদের বিরুদ্ধে কোনও দুর্নীতির প্রমাণ নেই, তাদের দীর্ঘ সাত বছরের চাকরিজীবনের পর বিনা বিচারে চাকরি হারিয়েছি। এখন আবার নতুন করে পরীক্ষা দিতে বলা হচ্ছে। বয়স, পরিস্থিতি ও সময়ের বিচারে তা কার্যত অসম্ভব।”

যোগ্য শিক্ষক শিক্ষিকা অধিকার মঞ্চের পক্ষ থেকে পাঠানো এই চিঠিতে তাঁরা আরও উল্লেখ করেছেন, “সুপ্রিম কোর্টের রায়ে পথ খুঁজে না পেয়ে হয়ে একাধিক সহকর্মী আত্মহত্যা করেছেন, চরম মানসিক যন্ত্রণায় ভুগে অনেকে আত্মহননের চেষ্টা করেছেন।” তাঁদের বক্তব্যে উঠে এসেছে, “যখন নির্দোষদের দণ্ড দেওয়া হয়, তখন তা কেবল ব্যক্তিগত ক্ষতি নয়, দেশের গণতান্ত্রিক কাঠামোর উপরও গভীর আঘাত।”

রাষ্ট্রপতির কাছে আবেদনপত্রে তাঁরা রাষ্ট্রপতিকে লিখেছেন —
“আপনি এই দেশের সর্বোচ্চ সাংবিধানিক প্রধান। আপনি দণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তিদেরও ক্ষমা করার অধিকার রাখেন। আমি বিনীত অনুরোধ করছি, আমাকে এই দণ্ড থেকে মুক্তি দিন, অথবা স্বেচ্ছামৃত্যুর অনুমতি দিন। অথবা এমন একটি নির্দেশ দিন যাতে এই রায় পুনর্বিবেচনার সুযোগ হয়।”

চিঠির শেষে তারিখ, নিজেদের ঠিকানা এবং পরিচয় উল্লেখ করে আবেদনকারী জানিয়েছেন, তাঁর পরিবারের ভরণপোষণ, সন্তানের শিক্ষার ভবিষ্যৎ ও সামাজিক সম্মান সবই এই রায়ের ফলে ভেঙে পড়েছে।

এই চিঠি সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়তেই চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। বিশিষ্ট আইনজীবী, মানবাধিকার কর্মী, এমনকি রাজনৈতিক মহলেও এ নিয়ে প্রতিক্রিয়া শুরু হয়েছে। যোগ্য শিক্ষক শিক্ষিকা অধিকার মঞ্চের পক্ষ থেকে শিক্ষক তথা স্কুল সার্ভিস কমিশনের পরীক্ষায় ইংরেজি বিষয়ে প্রথম স্থানাধিকারী শুভাশিস পান বলেন,” যখন আদালত নিজেই কাউকে ‘not-tainted’ ঘোষণা করছে, তখন কেন সেই ব্যক্তি চাকরি হারালেন ? দুর্নীতি করে দোষ করেছে যারা, তাদের বদলে যাদের দোষ নেই, তাঁরা সাজা পাবেন কেন? এবার যে পরীক্ষা দিতে বলা হচ্ছে তাতে যে দুর্নীতি হবে না তার গ্যারেন্টি কে দেবে? এস এস সি যখন দুর্নীতি করেছিল, আমাদের জিজ্ঞাসা করে তো করেনি। সুপ্রিম কোর্টের এই রায় আমাদের কাছে মৃত্যুদণ্ডের সামিল। ভারতবর্ষের ইতিহাসে বোধহয় এই প্রথম রায়ে যাঁদের দোষী বলা নেই, তাদের সাজা দেওয়া হলো। আমরা এখন রাষ্ট্রপতির বিবেচনার দিকে তাকিয়ে।”

Post Comment