নিজস্ব প্রতিনিধি, বাঘমুন্ডি:
শুরু থেকেই সন্দেহ ছিল। মুরি–চাণ্ডিল শাখার সুইসা–তোড়াং স্টেশনের মাঝখানে মা, মেয়ে ও বোনের নিথর দেহ পড়ে থাকা ট্রেন দুর্ঘটনার সঙ্গে মেলেনি। পুলিশের প্রাথমিক তদন্তে স্পষ্ট—শ্বাসরোধ করে খুন। তারপর রাতের অন্ধকারে প্রমাণ লোপাটের জন্য দেহ তিনটি রেললাইনে ফেলে দেওয়া হয়।

সোমবার ভোরে উদ্ধার হওয়া মৃতরা—কাজল মাছোয়াড় (২৫), তার মেয়ে রাখি (৭) ও বোন রাধা (১৩)। ছোট্ট রাখির গলায় পেঁচানো ফ্রকের অংশ। মায়ের মুখে নখের আঁচড়ের দাগ। রাধার মুখে ধারালো অস্ত্রের ক্ষত। তিন দেহের কোনোটিতেই ট্রেনের ধাক্কার স্পষ্ট চিহ্ন নেই। খড়গপুর রেল পুলিশ সুপার দেবশ্রী সান্যাল বলেন, ‘‘এটা দুর্ঘটনা নয়। খুনের মামলা রুজু হয়েছে।’’

পুলিশের অনুমান, রাত আটটা থেকে সাড়ে নটার মধ্যে খুনের পর দেহগুলি রেললাইনে আনা হয়। মাথা রেললাইনের বাইরে, ধড় উল্টে রেললাইনের উপর—উদ্দেশ্য ছিল ট্রেনের আঘাতে মাথা ও ধড় আলাদা করে ‘অ্যাক্সিডেন্ট’ দেখানো। রবিবার সাড়ে ন’টার দিকে ওই পথে পণ্যবাহী ট্রেন চলে আসায় আততায়ীরা প্রথমে শুধু রাধার দেহ রেখেছিল। তার হাতে ধাক্কার দাগও রয়েছে। পরে ট্রেন চলে গেলে বাকি দুই দেহও ফেলে যায়।

ঘটনার পর থেকে নিখোঁজ নিহত কাজলের কিপ্যাড ফোন। তদন্তে নতুন প্রশ্ন—এ কি পারিবারিক দ্বন্দ্ব, পরকীয়ার জের, নাকি শারীরিক নির্যাতনের পর খুন?
রবিবার সন্ধ্যার পর থেকেই খোঁজ মিলছিল না তিনজনের। মা ছুটনি মাছোয়াড় জানান, ‘‘বিকেলে মেয়েটা মোবাইল সারাতে গিয়েছিল বাজারে। সঙ্গে ছোট মেয়ে আর নাতনি। রাতে বাড়ি না ফিরতেই খোঁজা শুরু করি।’’ রাত আটটার পর কাজলকে ফোনে ‘নট রিচেবল’ দেখায়। কিছুক্ষণ পর রিং হলেও পরে ফোন বন্ধ হয়ে যায়। ঠিক সেই সময়েই ট্রেনের গার্ড রাঁচি ডিভিশনে খবর দেন—স্টেশনের মাঝে এক নাবালিকার দেহ পড়ে আছে।

পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনাস্থলে এখনও পড়ে রয়েছে ভাঙা চুড়ি, কালো চুলের ক্লিপ, দড়ির অংশ ও শুকনো রক্তের দাগ। তদন্তকারীদের মতে, খুনের পর দেহগুলি গাড়িতে করে এনে এখানে ফেলা হয়।
বছর কয়েক আগে বাঘমুন্ডির জিলিং গ্রামের অজয় মাছোয়াড়ের সঙ্গে বিয়ে হয় কাজলের। অজয় পরিযায়ী শ্রমিক, মুম্বইয়ে কাজ করেন। ঘটনার কয়েক দিন আগে তিনি শ্বশুরবাড়ি থেকে মুম্বই ফিরে যান। কাজল গত কয়েক মাস ধরে বাপের বাড়ি সুইসায় ছিলেন।

হাড়হিম এই হত্যাকাণ্ডে রেল পুলিশ ও জেলা পুলিশ যৌথ তদন্ত শুরু করেছে। তবে সোমবার রাত পর্যন্ত রেলের কোনও পদস্থ আধিকারিক ঘটনাস্থলে না আসায় ক্ষোভ ছড়িয়েছে এলাকায়।









Post Comment