সুজয় দত্ত, কোটশিলা:
পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় কোটশিলা থেকে গ্রেফতার আদিবাসী কুড়মি সমাজের ১২ জন সমর্থক। শনিবার বিকেলে রেললাইনে নেমে বিক্ষোভ চলাকালীনই উত্তেজনা চরমে ওঠে। অভিযোগ, পুলিশ অবরোধ ঠেকাতে গেলে কুড়মি সমাজ কর্মী-সমর্থকেরা রেল লাইনের পাথর ছুঁড়তে থাকেন। চলে ভাঙচুর। অন্তত ১০ জন পুলিশ আধিকারিক ও কর্মী জখম হন। কারও মাথায় গুরুতর আঘাত লাগে।

পুলিশ সূত্রে খবর, আদালতের নির্দেশ অমান্য করে রেললাইনে নেমে অশান্তি পাকানোর অভিযোগেই এই সংঘাত। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ লাঠিচার্জ করে ও কাঁদানে গ্যাসের সেল ফাটায় বলে অভিযোগ। প্রায় ১২ মিনিটের অভিযানের পর ফাঁকা হয়ে যায় স্টেশন। এরপরই ঘটনাস্থল থেকে ১২ জনকে গ্রেফতার করা হয়। তাঁদের বিরুদ্ধে হামলা, ভাঙচুর এবং সরকারি কাজে বাধা দেওয়ার মতো একাধিক ধারায় মামলা রুজু করা হচ্ছে।

পুরুলিয়ার পুলিশ সুপার অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় ঘটনাস্থলে পৌঁছান। তিনি বলেন, “রেললাইনে নেমে অশান্তি পাকানোর চেষ্টা হলে আইন অনুযায়ী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। সন্ধ্যার আগেই পরিস্থিতি স্বাভাবিক।”

এর আগে শুক্রবার রাতেই কোটশিলার জিউদারু গ্রামে অবরোধের প্রস্তুতি নেওয়ার অভিযোগে কুড়মি সমাজের মুখ্য মানতা অজিতপ্রসাদ মাহাতো-সহ ৬০ জনকে আটক করেছিল পুলিশ। কিন্তু তাতেও উত্তেজনা ঠেকানো যায়নি। শনিবার বিকেলে এক কুড়মি নেতার সমাজ মাধ্যমে উসকানিমূলক মন্তব্য—“মার গুলি! কাকে আইন শেখাচ্ছে?”—ভিডিও আকারে ভাইরাল হতেই পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে।

তফশিলি জনজাতির স্বীকৃতির দাবিতে শনিবার অনির্দিষ্টকালের রেল ও সড়ক অবরোধের ডাক দেয় আদিবাসী কুড়মি সমাজ। যদিও এর আগেই কলকাতা হাইকোর্ট এই কর্মসূচিকে অসাংবিধানিক ও বেআইনি ঘোষণা করেছিল। তবুও অবরোধ সফল করার চেষ্টা চলে সকাল থেকেই। ঝাড়খণ্ডের একাধিক জায়গায় সকালে রেল অবরোধ শুরু হয়। তবে পুরুলিয়ায় বিভিন্ন স্টেশনে কড়া নজরদারিতে ছিল পুলিশ। গোয়েন্দা তথ্য ছিল, জঙ্গলমহলের কিছু অংশে কুড়মিরা রেললাইনে নেমে পড়তে পারে। তাই কোটশিলার পাশে জিউদারু গ্রামে আগে থেকেই এরিয়া ডমিনেশন চালায় জেলা পুলিশ।

কুড়মিদের দাবি, তাঁরা হাইকোর্টের নির্দেশ মেনে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন চালাচ্ছিলেন। সেক্ষেত্রে পুলিশ কেন বাধা দিল—সেই প্রশ্ন তুলে বিক্ষোভ শুরু করেন সমর্থকেরা। তবে পুরুলিয়া জেলা পুলিশ এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে। পুলিশের বক্তব্য, রেল বা সড়ক অবরোধের যেকোনও প্রচেষ্টাই আইনের চোখে অপরাধ। এর মধ্যেই এক কুড়মি নেতার উসকানিমূলক মন্তব্যের ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়। ভিডিও ঘিরে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে (সেই ভিডিওর সত্যতা যাচাই করেনি পুরুলিয়া মিরর)। আদালতের নির্দেশ অমান্য করে কুড়মিরা রেললাইনে নেমে পড়েন বলে অভিযোগ পুলিশের। সেখান থেকেই শুরু হয় সংঘাত। পুলিশ আদৌ ওই ভিডিও বার্তাকে হালকা নিচ্ছে না।

অন্যদিকে, পুরুলিয়ার কোটশিলায় সংঘাত হলেও জঙ্গলমহলের অন্যত্র বড়সড় অশান্তি হয়নি। বাঁকুড়া, ঝাড়গ্রাম, পশ্চিম মেদিনীপুর ও পুরুলিয়ার অন্য অংশে অবরোধ কার্যকর হয়নি। তবে ঝাড়খণ্ড ও ওড়িশার একাধিক জায়গায় রাত পর্যন্ত অবরোধ চলতে থাকে।

দক্ষিণ-পূর্ব রেলের পঞ্চম বুলেটিন অনুযায়ী জানা গেছে শনিবার ৩০টি ট্রেন বাতিল হয়েছে। ৯টি ট্রেন বিকল্প রুটে ঘোরানো হয়েছে। ২১টি ট্রেনের যাত্রাপথ সংক্ষিপ্ত করা হয়েছে। আরও ৯টি নিয়ন্ত্রিত গতিতে চলছে। ফলে সাধারণ যাত্রীরা পড়েছেন চরম ভোগান্তিতে।
Post Comment