দেবীলাল মাহাতো, আড়শা :
মোবাইল ফোন চুরির অভিযোগ ঘিরে ঘটনার শুরু, শেষ এক যুবকের মৃত্যুতে। আর সেই মৃত্যুর কারণ ঘিরেই প্রশ্ন।
মৃতের পরিবারের আবেদনে সাড়া দিয়ে দ্বিতীয় বার ময়নাতদন্তের নির্দেশ দিল কলকাতা হাইকোর্ট। কল্যাণীর এইমসে হবে ময়নাতদন্ত। সময় বেঁধে দিয়েছেন বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষ— বৃহস্পতিবার সকাল ১১টার মধ্যে। হাসপাতালকে নির্দেশ, রিপোর্ট পাঠাতে হবে আড়শা থানার তদন্তকারী অফিসার ও আদালতে।পরবর্তী শুনানি সোমবার।
হাইকোর্টের এই নির্দেশে আশার আলো দেখছে মৃত বিষ্ণু কুমারের পরিবার। মৃতের ভাই সমন কুমার বললেন, “আমরা চাই শুধু সত্যিটা বেরিয়ে আসুক। আদালতের উপর ভরসা ছিল, আছে।”
ঘটনার শুরু গত ১৬ জুলাই। আড়শা থানার খেদাডি গ্রামের শঙ্কর মাহাতোর মোবাইল ফোন হারিয়ে যায়। পরে শোনা যায়, ফোনটি নাকি বিষ্ণু কুমারের হাতে।
শঙ্কর থানায় মৌখিক অভিযোগ জানান। পুলিশ ডাকে বিষ্ণুকে। মোবাইল ফেরত আসে। কোনও লিখিত অভিযোগ করেননি শঙ্কর। থানা থেকে ছাড়া হয় বিষ্ণু কুমারকে। পরিবারের অভিযোগ সেই বিষ্ণু থানা থেকে ফিরেই অসুস্থ হয়ে পড়েন। তিন দিন পর, ১৯ জুলাই, অবস্থার অবনতি দেখে পরিবার তাকে নিয়ে যায় সিরকাবাদ স্বাস্থ্যকেন্দ্রে।
চিকিৎসক জানান, যুবক আর নেই।অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা দায়ের করে পুলিশ। ভিডিওগ্রাফি করে হয় সুরতহাল। পরের দিন পুরুলিয়া মেডিক্যাল কলেজে হয় ময়নাতদন্ত। পুলিশ সুপার অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছিলেন, “ময়নাতদন্তের রিপোর্টে কোনও আঘাতের চিহ্ন নেই। চিকিৎসক জানিয়েছে, যকৃত, কিডনি আর হৃদজনিত কারণে মৃত্যু।”
কিন্তু ময়নাতদন্তের এই রিপোর্ট মানতে রাজি নয় মৃতের পরিবার। তাদের দাবি, পুলিশি মারেই অসুস্থ হয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েছেন বিষ্ণু। তাই দেহ নিতে অস্বীকার করেন তারা। হাসপাতালের মর্গেই পড়ে থাকে দেহ। মৃতের ভাই সমন কুমারের মেইল মারফত অভিযোগের ভিত্তিতে অজ্ঞাত পরিচয় সিভিক ভলান্টিয়ারের বিরুদ্ধে খুনের মামলা রুজু করে পুলিশ।
ঘটনায় উত্তাল হয়ে ওঠে আড়শা।রাজ্যের বিরোধী দলনেতা সমাজ মাধ্যমে ঘটনা নিয়ে পোস্ট করেন। বিজেপি নেতারা পৌঁছান মৃতের বাড়িতে। দাবি ওঠে, ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত হোক।আন্দোলনে নামে বিজেপি। স্থানীয় জনগণের ডাকে ১২ ঘণ্টার আড়শা বনধ হয়। হয় বিক্ষোভ, পুলিশি ধস্তাধস্তি, একাধিক গ্রেফতার।
২১ জুলাই হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন সমন কুমার। ৩১ জুলাই বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষ কেস ডায়েরি দেখতে চান।
সেই শুনানিতে ওঠে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন—
যে বছর চৌত্রিশের যুবক কয়েক ঘণ্টা আগেও সুস্থ ছিলেন, তার দেহে ১৮ ঘণ্টার মধ্যেই পচন ধরবে কেন?আবেদনকারীর আইনজীবী প্রশ্ন তোলেন, “এটা কি স্বাভাবিক?”
সরকারি কৌসুলি বলেন, “মৃত ব্যক্তি মদ্যপান করতেন। সম্ভবত চিকিৎসক ‘পচন’ শব্দটা ভুলভাবে লিখেছেন।”
কিন্তু সন্দেহ থেকেই যায়। অবশেষে আদালতের নির্দেশ— দ্বিতীয় বার হোক ময়নাতদন্ত। এইমসে।
কল্যাণীর হাসপাতাল। পুরুলিয়া থেকে দূরত্ব ২৩০ কিমি। ময়নাতদন্তের সময় আবেদনকারী ছাড়াও থাকবেন পরিবারের আরও দুই সদস্য। পুলিশ চাইলে বাড়তি নিরাপত্তা দিতে পারে।
আড়শার মানুষ তাকিয়ে সেই নতুন রিপোর্টের দিকে। এই রিপোর্টই বলবে— বিষ্ণুর মৃত্যু নিছক দুর্ভাগ্য, না কি সত্যিই আড়াল আছে অন্য কোনও কাহিনি।











Post Comment