সুইটি চন্দ্র , বাঘমুন্ডি:
ছৌ মুখোশের জন্য আন্তর্জাতিক খ্যাতি পেয়েছে পুরুলিয়ার চড়িদা। কিন্তু এবারের পুজোয় সেই মুখোশ গ্রাম নতুন পরিচয়ে নজর কাড়ছে। শুধু মুখোশেই আটকে নেই শিল্পীরা। দুর্গা প্রতিমার কাজ নিয়েও ভিনরাজ্যে মিলেছে দেদার বরাত। উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ, ওড়িশা, বিহার থেকে ঝাড়খন্ড—বাংলার শিল্প ঐতিহ্য ছড়িয়ে পড়ছে এক রাজ্য থেকে আরেক রাজ্যে।
চড়িদার মৃৎশিল্পীরা ভিনরাজ্যের দুর্গোৎসবে হয়ে উঠেছেন অপরিহার্য। প্রায় ১৩ জন শিল্পী এ বছর পাড়ি দিয়েছেন উত্তরপ্রদেশে। দুই দলে ভাগ হয়ে তাঁরা গড়ছেন দুর্গা প্রতিমা। একটি দলে রয়েছেন জয়দেব সূত্রধর, খুড়তুতো ভাই অজয় সূত্রধর-সহ আরও কয়েকজন। শোনভদ্র জেলার ওবরাতেই তাঁরা একসঙ্গে তৈরি করছেন ১২টি মাতৃপ্রতিমা।
প্রতিটি প্রতিমার বরাত মিলেছে ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকায়। জয়দেব জানালেন, পঞ্চমীর রাতেই কাজ শেষ করতে হবে। ষষ্ঠীর দিন প্রতিমা হাতে নেবেন আয়োজকরা। তাঁর কথায়, ‘‘প্রায় আড়াই মাস ধরে আমরা উত্তরপ্রদেশে রয়েছি। ঘর ভাড়া বাবদ ৫০ হাজার টাকা খরচ হচ্ছে। আমাদের ১২টি মায়ের প্রতিমা সম্পূর্ণ করতে হবে।’’ তাঁর বাবা দুলাল সূত্রধর ও ছোট ছেলে রাজকুমার রয়েছেন শোনভদ্র জেলার আনপাড়াতে। সেখানেও পাঁচটি প্রতিমা তৈরির বরাত মিলেছে।
ওড়িশার সুন্দরগড় জেলায় মৃৎশিল্পী ফাল্গুনী সূত্রধর এবারও কাজ পেয়েছেন। দু’টি প্রতিমার বরাত মিলেছে ৪ লক্ষ টাকায়। ৬০ বছর ধরে এই পরিবারের সঙ্গে যুক্ত প্রতিমা গড়ার ইতিহাস। ফাল্গুনীর কথায়, ‘‘কোভিডের সময়ও আমাদের গাড়ি পাঠিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। প্রতিমা ছাড়া পুজো হয় না।’’ এক একটি মূর্তির উচ্চতা ১৫ ফুট পর্যন্ত। দুর্গা ছাড়াও গণেশ, কার্তিক, লক্ষ্মী, সরস্বতী—সবার প্রতিমা গড়ে তুলছেন তাঁরা।
মধ্যপ্রদেশের সিভি জেলার বাহিরিতে রয়েছেন ভীম সূত্রধর। গত দু’মাস ধরে তিনজন শিল্পী মিলে মোট ৩০টি প্রতিমা তৈরি করছেন। প্রতিটি প্রতিমার জন্য মিলছে সাত হাজার টাকা। মহালয়ার আগেই তাঁদের হাতে প্রতিমা তুলে দিতে হবে।
চড়িদা মানেই ছৌ মুখোশ—এই ধারণাকে ভেঙে এখন প্রতিমা শিল্পই ছড়িয়ে দিচ্ছে গ্রামের নতুন পরিচিতি। মুখোশের গ্রাম থেকে প্রতিমার গ্রাম হয়ে উঠছে চড়িদা। শিল্পীদের হাত ধরে বাংলার মাটির শিল্প ছড়িয়ে পড়ছে ভিনরাজ্যে। আর সেই সঙ্গেই ভিনভূমিতেও উজ্জ্বল হচ্ছে বাংলার দুর্গোৎসবের শিল্প ঐতিহ্য।











Post Comment