নিজস্ব প্রতিনিধি, অযোধ্যা :
সৌজন্যে মালতীবালা, ভোল বদলাচ্ছে জিলিংসেরেঙ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের, বরাদ্দ হলো ৩৮ লক্ষ টাকা।
চাঙড় খসে পড়ছে মাথার উপর থেকে। শ্রেণিকক্ষের মেঝেতে জমছে জল। শিক্ষকের টেবিলও ভিজে একেবারে অচল। আলো ও পাখা থাকলেও বিদ্যুৎ না থাকায় দিনের বেলাতেও অন্ধকারে ডুবে থাকে ক্লাস। মিড-ডে মিলের চাল ভিজে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। রান্না করা হচ্ছে খাবার। স্কুলের সদর দরজা নেই, ভাঙা সীমানা প্রাচীর ঘিরে ঘুরে বেড়ায় সাপ। শৌচাগার আছে, কিন্তু নেই জলের ব্যবস্থা। সৌর চালিত পানীয় জলের প্রকল্প থাকলেও পয়েন্ট অচল।

এই সব দুর্দশার মধ্যে চলছে পুরুলিয়ার বাঘমুন্ডি ব্লকের জিলিংসেরেঙ প্রাথমিক বিদ্যালয়। আর তাই স্কুলছুট পড়ুয়ারা পড়তে চলে যাচ্ছে এক কিমি দূরের ‘মালতীবালা বিদ্যালয়ে’। যেখানে শিক্ষকতা করেন মালতী মুর্মু, এক সাধারণ গৃহবধূ। সমাজ মাধ্যমে যাঁর দাবি, নিজের উদ্যোগে তৈরি করেছেন বিনা পয়সার অবৈতনিক বিদ্যালয়। যদিও সেই দাবি অর্ধ সত্য। অনেক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা সাহায্য করে চলে ওই স্কুলটিকে। এমনকি শিক্ষা প্রদানের জন্য মাসোহারাও দেয়।
যদিও সেই অর্ধ সত্য সহ সমাজমাধ্যমে ভাইরাল হয় মালতীর নিষ্ঠা, স্কুল আর গ্রামের শিশুদের পড়ানোর গল্প। তাতে আলো পড়ে সরকারি বিদ্যালয়ের করুণ চিত্রেও। এরপরই পশ্চিমবঙ্গ সমগ্র শিক্ষা মিশনের তরফে বরাদ্দ হয় ৩৮,২০,৮৮৪ টাকা। তাতে তৈরি হবে চারটি নতুন শ্রেণিকক্ষ, হবে শৌচাগার, পরিকাঠামোগত উন্নয়নের কাজের জন্য ইতিমধ্যেই আহ্বান করা হয়েছে দরপত্র।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অনাদি কুমার টুডু জানান, “এই সমস্যাগুলির কথা আমরা আগেই জানিয়েছিলাম ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে।”
বাঘমুন্ডি ২ নং চক্রের আওতায় থাকা এই স্কুল সম্পর্কে বিডিও আর্য তা বলেন, “শ্রেণিকক্ষ ও শৌচাগার তৈরি হবে, উন্নয়ন প্রকল্প শুরু হবে শিগগিরই।”
মালতী মুর্মু ও তাঁর স্বামী বাঙ্কা মুর্মু বলেন, “আমরা চাই সরকারি বিদ্যালয়টা সুন্দরভাবে গড়ে উঠুক। গ্রামের উন্নয়নের অংশ হোক আমাদের স্কুলটিও।”

মালতীর স্কুল ভাইরাল হতেই গ্রামে গিয়ে পরিস্থিতি পরিদর্শন করেন ঝালদা মহকুমাশাসক রাখি বিশ্বাস। আশ্বাস দেন, জলসংকট থেকে শুরু করে পরিকাঠামোগত সব সমস্যার দ্রুত সমাধান হবে।
এক সময় যেখান থেকে শিশুরা মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছিল, এখন সেখানেই গড়ে উঠতে চলেছে নতুন এক পাঠশালা। মালতীর নিষ্ঠা আর সামাজিক চেতনার পরোক্ষ প্রভাবেই যেন অন্ধকার ঘরেও আলো জ্বলতে শুরু করেছে।

এদিকে মর্নিং গ্রুপ পুরুলিয়ার পক্ষ থেকে রবিবার জিলিংসেরেঙে মালতীর বিনে পয়সার স্কুলে গিয়ে মালতীদেবীকে সংবর্ধনা জ্ঞাপন করা হয়। সাহায্যও তুলে দেওয়া হয় স্কুলকে। উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট সাহিত্যিক ড. দয়াময় রায়।









Post Comment