insta logo
Loading ...
×

মাধ্যমিকে জেলায় প্রথম পরিযায়ী শ্রমিকের মেয়ে

মাধ্যমিকে জেলায় প্রথম পরিযায়ী শ্রমিকের মেয়ে

দেবীলাল মাহাতো, পুঞ্চা :

জেলায় মাধ্যমিক পরীক্ষায় সম্ভাব্য প্রথম পুঞ্চা থানার নপাড়া হাই স্কুলের ছাত্রী মাম্পি দাস। মাধ্যমিক পরীক্ষায় ৭০০ এর মধ্যে তার প্রাপ্ত নম্বর ৬৮৫। বাবা উত্তম কুমার দাস পরিযায়ী শ্রমিক। হত দরিদ্র পরিবারের ছাত্রী মাম্পি নিজেও শারীরিক অসুস্থতার সঙ্গে যুঝছে বলে স্কুলের ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক শুকদেব মাহাতো জানালেন। বাংলায় ৯৬, ইংরেজিতে ৯৫, অংকে ১০০, ভৌত বিজ্ঞানে ১০০, জীবন বিজ্ঞানে ৯৭, ইতিহাসে ১০০ ও ভূগোলে ৯৭ পেয়েছে মাম্পি।

মা শান্ত দাস হস্ত শিল্পের কাজ করেন। দারিদ্রই যে তার লড়াইয়ে একমাত্র ভিলেন, তা কিন্তু নয়। শারীরিক একটা বিশাল সমস্যার সঙ্গে যুঝছে মাম্পি। তা সত্বেও মাম্পির দুর্দান্ত সাফল্য গর্বিত করছে তাঁর শিক্ষকদের।

বাবা পরিয়ায়ী শ্রমিক । কর্মসূত্রে থাকেন দক্ষিণ ভারতের তামিলনাড়ুতে। মাসে ৮০০০টাকা পান । ধার দেনা শোধ করতেই সে টাকা খরচ হয়ে যায়। মায়ের শরীর অসুস্থ। মাম্পির নিজের শারীরিক অসুস্থতা এমন যে মাঝে মাঝে হাত দিয়ে লেখা বন্ধ হয়ে যায়। ছোট দুটো ঘর। একটা মাটির। মেলেনি বাংলার আবাস যোজনার ঘর। প্রাইমারি শিক্ষক নিখিল সহিস ফ্রিতে টিউশন পড়াতেন।

শুক্রবার মাধ্যমিকের ফলাফল বের হতেই উল্লাসে ফেটে পড়ে পুঞ্চা থানার নপাড়া গ্রামের মানুষজন। খুশিতে মেতে ওঠেন নপাড়া উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরাও ।

পুঞ্চা ব্লকের নপাড়া গ্রামে বাড়ি মাম্পি দাসের। বাবা উত্তম কুমার দাস তামিলনাড়ুতে সুতা শ্রমিকের কাজ করেন । মা শান্ত দাস হস্ত শিল্পের সাথে যুক্ত। দু ভাইবোনের মধ্যে মাম্পি ছোট। বাড়িতে অভাব অনটন নিত্য সঙ্গী। ছোট থেকেই সে পড়াশোনায় মেধাবী। কিন্তু মাঝে মাঝেই শারীরিক অসুস্থতা প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে। হাঁটাচলা, সাইকেল চালানো তো বন্ধ হয়ে যায়ই, সঙ্গে হাত দিয়ে লেখাও বন্ধ হয়ে যায়। তাই ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে মাধ্যমিক পরীক্ষা দেওয়ার কথা থাকলেও শারীরিক অসুস্থতার জন্য পরীক্ষা দিতে পারেননি সে । অসুস্থ শরীরে মনকে শক্ত করে লেখাপড়া চালিয়ে গেছে। আর তাতেই সাফল্য। টেস্ট পরীক্ষায় সে পেয়েছিল ৬৬৯। তারপর প্রতিদিন অসুস্থ শরীর নিয়ে ১৮ঘন্টা পড়াশোনা করেছে।

মাম্পি জানায়, সে বড় হয়ে ডাক্তার হতে চায়। ছোটবেলা থেকেই তার ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন।এই ফলাফল খুশি স্কুলের শিক্ষকরাও। নপাড়া উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে টির্চার ইন চার্জ শুকদেব মাহাত জানান, “মাম্পি দাসের এই সাফল্যে আমরা খুশি। জেলার মধ্যে প্রথম স্থান অধিকার করে স্কুলের নাম উজ্জ্বল করেছে।”

ছোট দুটো ঘর। একটা মাটির। মেলেনি বাংলার আবাস যোজনার ঘর। প্রাইমারি শিক্ষক নিখিল সহিস ফ্রিতে টিউশন পড়াতেন। স্কুলের শিক্ষকরা পড়াশোনা দেখানোর পাশাপাশি টাকা দিয়ে চিকিৎসার জন্য আর্থিক সাহায্য করেছেন।

নাচ,গান, কবিতা শখ হলেও সে সব আপাতত সরিয়ে একমনে পড়ে গেছে সে। লক্ষ্য চিকিৎসক হওয়া। এ বড়ো কঠিন লড়াই৷ কোনিকে খিদ্দা যেমন টা বলেছিলেন, তেমন সারা পুরুলিয়া আজ তার সোনার মেয়েকে বলছে ফাইট, মাম্পি ফাইট!

Post Comment