insta logo
Loading ...
×

ভাষা ‘সন্ত্রাস’ রুখতে তৃণমূলের হাতিয়ার পুরুলিয়ার ইতিহাস

ভাষা ‘সন্ত্রাস’ রুখতে তৃণমূলের হাতিয়ার পুরুলিয়ার ইতিহাস

নিজস্ব প্রতিনিধি,পুঞ্চা:

বাঙালিদের উপর ধারাবাহিক নির্যাতনের প্রতিবাদে মানভূমের ঐতিহাসিক ভাষা আন্দোলনকে হাতিয়ার করল শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস। রবিবার পুরুলিয়ার পুঞ্চা ব্লকের পাকবিড়রা থেকে একটি প্রতিবাদ মিছিলের আয়োজন করা হয়, যেখানে অংশ নেন জেলার তৃণমূল নেতৃত্ব ও কর্মী-সমর্থকেরা।

সম্প্রতি বিজেপি শাসিত একাধিক রাজ্যে বাংলা ভাষাভাষী পরিযায়ী শ্রমিকদের উপর অত্যাচারের অভিযোগ সামনে এসেছে। সেই প্রেক্ষিতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ২১ জুলাইয়ের সভামঞ্চ থেকে বাঙালি সত্তা ও ভাষার মর্যাদার প্রশ্নে আন্দোলনের ডাক দেন। তারই অংশ হিসেবে পাকবিড়রা থেকে শুরু হয় প্রতিবাদ মিছিল।

এই মিছিল সূচিত হয় ভাষা আন্দোলনের স্মারকস্থান কালাপাথর গ্রামের হাতিবাঁধা বটতলা থেকে। এখান থেকেই ১৯৫৬ সালের ২০ এপ্রিল শুরু হয়েছিল ঐতিহাসিক ভাষা পদযাত্রা, যেখানে ১০২৫ জন সত্যাগ্রাহী কলকাতার উদ্দেশ্যে রওনা দেন। সেই আন্দোলনের ফলেই মানভূমের একাংশ, যার মধ্যে রয়েছে বর্তমান পুরুলিয়া জেলা, ১৯৫৬ সালের ১ নভেম্বর পশ্চিমবঙ্গের অন্তর্ভুক্ত হয়।

রবিবারের প্রতিবাদ মিছিল পাকবিড়রা গ্রামের বিভিন্ন পথ পরিক্রমা করে পাকবিড়রা মন্দির প্রাঙ্গণে এসে শেষ হয়। সেখানে আয়োজিত জনসভায় তৃণমূল নেতৃত্ব বিজেপির বিরুদ্ধে কড়া ভাষায় আক্রমণ শানান।

পুরুলিয়া জেলা তৃণমূল সভাপতি রাজীবলোচন সরেন বলেন, “নানা ভাষা, নানা মত, নানা পরিধান—এই বৈচিত্র্যই ভারতের পরিচয়। কিন্তু বিজেপি এই বহুত্ববাদকে ধ্বংস করতে চায়। আমাদের পরিযায়ী শ্রমিকরা বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলোতে নিয়মিত হেনস্থার শিকার হচ্ছেন। আমরা সেই নির্যাতনের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছি।”

এদিনের মিছিলে অংশ নেওয়া কর্মীরা নানা প্রতিবাদী প্ল্যাকার্ড হাতে বাঙালি জাতিসত্তা ও ভাষার প্রতি অবমাননার বিরোধিতা জানান। উঠতে থাকে নানা প্রতিবাদী স্লোগান।

সভায় ভাষা আন্দোলনের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট তুলে ধরেন পুরুলিয়ার পুরপ্রধান নবেন্দু মাহালি। তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক ও প্রাক্তন মন্ত্রী শান্তিরাম মাহাতো বক্তব্যে বলেন, “বাংলা ভাষার অবমাননা আজ জাতীয় স্তরেও দৃষ্টিগোচর। আমাদের সাংস্কৃতিক ও ভাষাগত অস্তিত্ব রক্ষায় এই আন্দোলন।”

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন বিভাগের স্বাধীন দায়িত্বপ্রাপ্ত রাষ্ট্রমন্ত্রী সন্ধ্যারানী টুডু, জেলা পরিষদের সভাধিপতি নিবেদিতা মাহাতো, সহ-সভাধিপতি সুজয় বন্দ্যোপাধ্যায়, আদিবাসী নেতা গুরুপদ টুডু-সহ তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব।

পুরুলিয়ার ঐতিহাসিক ভাষা আন্দোলনের পটভূমিতে দাঁড়িয়ে শাসক দলের এই প্রতিবাদ কর্মসূচি রাজ্যের বাঙালি সত্তার প্রশ্নে ফের নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

Post Comment