নিজস্ব প্রতিনিধি, পুরুলিয়া :
কখনও তাঁর হাতে উঠে এসেছে কালান্তক একে ৪৭, বিরোধীদের গুলি করার হুমকি দিয়েছেন মুখে, কখনও ভোটকেন্দ্রে প্রিসাইডিং অফিসারের সঙ্গে জড়িয়েছেন বচসায়। দীর্ঘদিন দলে কোণঠাসা থাকার পর বিতর্কিত, ভাইরাল এবং ডাকাবুকো সুজয় বন্দ্যোপাধ্যায় ফিরলেন তৃণমূল কংগ্রেসের পদে। বিশেষ বিজ্ঞপ্তি জারি করে আজ তাঁকে রাজ্য তৃণমূল কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক পদে বহাল করা হয়েছে।
পুরুলিয়া জেলায় তৃণমূলের জন্মলগ্ন থেকে জড়িয়ে সুজয়বাবু। ছাত্র রাজনীতির ময়দান কাঁপানোর সঙ্গে সঙ্গে কাঁপিয়েছেন ফুটবল ময়দানও। তাঁর অভিযোগ, বাম আমলে সুজয়কে ঠেকাতে তৎকালীন সিপিএম জেলা সম্পাদক নকুল মাহাতোর খাসতালুকে বারে বারে মিথ্যে মামলায় ফাঁসানো হয়েছে তাঁকে। “দুর্দিনে তিনিই ছিলেন, সুদিনে হলেন ব্রাত্য “, অভিমত শাসক দলে এক সুজয় অনুরাগীর। ২০১১তেই টিকিট পাওয়া উচিত ছিলো। পেলেন না। ২০১৬তেও বিধানসভার টিকিটের জন্য তাঁর নাম মাথায় আসেনি দলের। শেষে যখন বিজেপি হাওয়ায় ২০১৮ সালে টলমল করছে পুরুলিয়ায় তৃণমূল একাধিপত্য, যখন বিদায়ী সভাধিপতি সৃষ্টিধর মাহাতোকে ঘিরে দলেই তীব্র অস্বস্তি, তখন হাল ধরতে ডাকা হলো সুজয় বন্দ্যোপাধ্যায়কে।
জেলা পরিষদের সভাধিপতির জন্য তৃণমূলের ভরসা হয়ে উঠলেন দলের পুরনো মুখ সুজয় বন্দ্যোপাধ্যায়। সভাধিপতি থাকাকালীনও বিতর্ক তাঁর পিছু ছাড়েনি। ইডি দিল্লিতে ডেকে পাঠিয়েছে তাঁকে। দলের মধ্যেই গোষ্ঠী দ্বন্দ্বের শিকার হয়েছেন। তীব্র সাবোতাজ ২০২১ সালে পুরুলিয়া আসনে বিধানসভার টিকিট মিললেও জিততে দেয়নি সুজয় বন্দ্যোপাধ্যায়কে। অথচ দলের অন্দরের খবর জিতলেই মন্ত্রীত্ব পেতে পারতেন বর্ষীয়ান এই নেতা।
হতে পারতেন জেলা সভাপতিও। কিন্তু ফের বিতর্ক। একটি কলেজ সংক্রান্ত বিষয়ে এমনভাবে জড়িয়ে গেল সুজয় বাবুর নাম যে, ভাবমূর্তি খেলো ধাক্কা। দলে ফের ব্যাকফুটে তিনি। নিজের অভিমান গোপন রাখেননি সুজয় বাবু। সহ সভাধিপতি রূপে প্রশাসনিক বৈঠকে উপস্থিত থাকলেও, একের পর এক দলীয় সভায় অনুপস্থিত থাকতেন।
এক সুজয় অনুগামী বলছেন, ” দাদা চিরকালই আলাদা। অন্য নেতা নেত্রীদের মতো দেখছি দেখব করেন না। পারলে দলমত নির্বিশেষে যে কারও জন্য ঝাঁপিয়ে পড়েন। না পারলে মুখের ওপরেই স্পষ্ট বলে দেন। বিরোধীরা স্বীকার করবেন দাদা উপকার করেছেন কি-না। “
দীর্ঘদিন পর দলের মূল স্রোতে গুরুত্বপূর্ণ পদে ফিরে সুজয় বন্দ্যোপাধ্যায় বলছেন, “দল যে দায়িত্ব দিয়েছে, প্রাণপণে তা পালন করে যাব।”
সামনে ফের বিধানসভা নির্বাচন। সুজয়ের নব দায়িত্ব প্রাপ্তি কি ফের জেলার রাজনৈতিক সমীকরণ নতুন করে লিখতে শুরু করল?










Post Comment