নিজস্ব প্রতিনিধি, পুরুলিয়া:
ভাইরাল থানার বড়বাবু। না অপরাধী পিটিয়ে নয়, নয় পুলিশের রুটিন কাজে। বরং সমাজ মাধ্যমে তিনি ভাইরাল পুরুলিয়ায় বর্ষার পাহাড়ি সৌন্দর্য দেখে মুগ্ধ হয়ে। আর এই মুগ্ধতাকে সঙ্গী করে সহকর্মীর হাতে হাত রেখে অযোধ্যা পাহাড়ের রাস্তায় গান গেয়ে ভাইরাল পুরুলিয়া সদর থানার আই সি শিবনাথ পাল।
পাহাড়ি হাওয়ায় ভেসে আসছে গান। অযোধ্যা পাহাড়ের আঁকাবাঁকা পথে, সহকর্মীর হাত ধরে হেঁটে যাচ্ছেন তিনি। খাঁকি পোশাকে, হাতে মাইক্রোফোন নেই, নেই সঙ্গত বাদ্য। তবু খালি গলা ভরে উঠেছে শিবদাস বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা — “ভারত আমার ভারতবর্ষ, স্বদেশ আমার স্বপ্ন গো…” গানে। স্বাধীনতা দিবসের প্রাক্কালে, দেশাত্মবোধে ভেজা সেই সুরেই ভাইরাল হলেন পুরুলিয়া সদর থানার আইসি।
শনিবার বিকেলে অযোধ্যা পাহাড়ের হিলটপ থেকে মুরগুমা নামার পথে পুরুলিয়া জেলা পুলিশের এক অনুষ্ঠান শেষ করে ফেরার সময়েই শুরু হয় গানের আসর। পাহাড়ি মেঘ রৌদ্রের খেলা, বর্ষার ঝরনা, আর তার মাঝেই দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের অমর দেশাত্মবোধক গান— “ধনধান্য পুষ্পে ভরা আমাদের এই বসুন্ধরা… এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবে নাকো তুমি…”। ভিডিওটি নিজের ফেসবুক প্রোফাইল থেকেই পোস্ট করেছিলেন আইসি। মুহূর্তে ছড়িয়ে পড়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। লাইক, শেয়ার, ভিউ— সবই বাড়ছে ঝড়ের গতিতে।
সময়ও যেন গানকে প্রাসঙ্গিক করেছে। বাংলা ভাষাভাষীদের উপর অন্য রাজ্যে যখন অত্যাচারের খবর শিরোনামে, তখন দেশের বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্যের বার্তা আরও বেশি করে পৌঁছে দিচ্ছে এই সুর। সহকর্মীদের কথায়, পাহাড়ি সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়েই গানে গলা মেলান তাদের ‘বড়বাবু’।
তবে এ প্রথম নয়। ২০১৯ সালেও ‘আমি বাংলায় গান গাই’ গেয়ে ভাইরাল হয়েছিলেন শিবনাথবাবু। গল্পকার হিসেবেও পরিচিত— ‘ট্রেনের দেওয়ালে একটি নষ্ট মেয়ের ফোন নম্বর’ তাঁর লেখা, যা থেকে ‘মন্দ মেয়ে’ নামে স্বল্পদৈর্ঘ্যের ছবি তৈরি হয়েছিল, অভিনয়ে ছিলেন মমতা শঙ্কর। হিরাপুর সিআই, ব্যারাকপুর পুলিশ একাডেমির প্রশিক্ষক, উত্তরদিনাজপুরে দায়িত্ব— সব জায়গাতেই সাংস্কৃতিক চর্চা তাঁর নিত্যসঙ্গী। গান, আবৃত্তি, গল্প, আঁকা, হস্তশিল্প— কলেজ জীবন থেকে যে প্রেম শুরু, চাকরির চাপেও তাতে ভাটা পড়েনি।
ফেব্রুয়ারি মাসে পুরুলিয়া জেলা পুলিশের উদ্যোগে দেশের প্রথম নাইট ম্যারাথনের থিম সঙ— লেখা, সুর, গাওয়া— সবটাই তাঁর হাত ধরে হয়েছিল। উত্তর ২৪ পরগনার কাঁচরাপাড়ার বাসিন্দা এই পুলিশ আধিকারিকের সাম্প্রতিক স্টোন আর্টও নজর কেড়েছে নেট দুনিয়ায়। লেখা ‘অজগরের সাথে সহবাস’ গল্পটিও হিট। এখন রাজ্যের সেরা কাজ করা পুলিশ আধিকারিকদের নিয়ে সিরিজ লিখছেন।
আইসির ভূমিকায় শহরে অপরাধ দমন আর সংস্কৃতিচর্চার এই অদ্ভুত মিশ্রণই তাঁকে আলাদা করে তুলেছে। আর অযোধ্যা পাহাড়ের রাস্তায় সেই খাঁকি পোশাকের মানুষটির গলায় দেশাত্মবোধের সুর— যেন স্বাধীনতার আগে থেকেই উৎসবের ডাক দিয়ে যাচ্ছে।










Post Comment