নিজস্ব প্রতিনিধি, পুরুলিয়া:
দুপুর ১২টা থেকে পুরুলিয়া শহরের পথে নামছেন আদিবাসী কুড়মি সমাজের কর্মী-সমর্থকরা। ফলে পুরুলিয়া শহরের নানা রাস্তায় বুধবার যানজটের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। শহরের বিভিন্ন মোড়ে মোতায়েন করা হবে বিশাল পুলিশবাহিনী। জেলা পুলিশের দাবি, সাধারণ মানুষ যাতে যাতায়াতে সমস্যায় না পড়েন, তা নিশ্চিত করতেই এই ব্যবস্থা।
বুধবার বেলা ১২টা থেকে দুটি আলাদা পথ দিয়ে সভাস্থলের দিকে যাবেন কুড়মি সমাজের সমর্থকেরা। একদল জড়ো হবেন গোশালা মোড়ে। সেখানে পুঞ্চা, হুড়া, কাশিপুর, পুরুলিয়া ২, রঘুনাথপুর ১-২, পাড়া, নিতুড়িয়া, সাঁতুড়ির কর্মীরা আসবেন। ওই দলটি গাড়িখানা, সদর পাড়া, পোস্ট অফিস মোড়, চাইবাসা রোড হয়ে জেলা স্কুল মোড় পেরিয়ে যাবে সভাস্থলের দিকে। অন্যদিকে রাঁচি রোডে পুরনো তথ্য ও সংস্কৃতি দপ্তরের পাশে জমায়েত হবেন অন্য অংশের কর্মীরা—যারা পুরুলিয়ার অন্যান্য ব্লক, ভিন জেলা ও ঝাড়খণ্ড থেকে আসছেন। ওই দলটি বাসস্ট্যান্ডের পেছন দিয়ে জেলা স্কুল মোড়ে এসে একত্রিত হয়ে এগোবেন প্রস্তাবিত টামনার নতুন বাসস্ট্যান্ডের দিকে, যেখানে দুপুর ১টা থেকে শুরু হবে কুড়মি সমাজের প্রতিবাদ সভা।

পুরুলিয়া জেলা পুলিশ জানিয়েছে, শহরের প্রতিটি মোড়ে থাকবে পুলিশ। “মানুষ সভাস্থলে যাবেন নিজেদের মতো,” জানিয়েছেন পুলিশ সুপার অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, “সাধারণ মানুষের চলাচলে কোনও অসুবিধা না হয়, সেই বিষয়ে নজর রাখবে পুলিশ।”
আদিবাসী কুড়মি সমাজের একটা অংশ এখন প্রতিবাদ সভার প্রচারে এখন তুলে আনছে ঝাড়খণ্ডের ডুমরির বিধায়ক ‘টাইগার’ জয়রাম মাহাতোর নাম। বলা হচ্ছে বছর একত্রিশের এই তরুণ তুর্কী বিধায়ক উপস্থিত থাকবেন সভায়।আদিবাসী কুড়মি সমাজের আসন্ন প্রতিবাদ সভার প্রচারে এখন সামনে আনা হচ্ছে তাঁর নাম। কুড়মি সমাজের কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে তাঁর জনপ্রিয়তা বর্তমানে তুঙ্গে। ঝাড়খণ্ডে আন্দোলনের অন্যতম মুখ হিসেবে পরিচিত জয়রাম মাহাতো স্থানীয় ভাষা, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য রক্ষার দাবিতে গড়ে তুলেছিলেন ‘ঝাড়খণ্ড লোকতান্ত্রিক ক্রান্তিকারী মোর্চা’। সেই আন্দোলনের সূত্রেই তিনি হয়ে উঠেছেন তরুণ সমাজের অনুপ্রেরণা।
রেল টেকা ও ডহর ছেঁকা আন্দোলনে সরব ভূমিকা নেওয়ার কারণেই পশ্চিমবঙ্গের আদিবাসী কুড়মি সমাজ তাঁকে বুধবারের পুরুলিয়া সভায় আমন্ত্রণ জানিয়েছে। সংগঠনের একাংশের দাবি, জয়রাম মাহাতো মঞ্চে থাকলে ভিড়ের মাত্রা বাড়বে বহুগুণ।
সংগঠনের দাবি, পুলিশের ‘সন্ত্রাস’ ও প্রশাসনের ‘একতরফা’ পদক্ষেপের প্রতিবাদেই এই সভার আয়োজন। জয়রাম মাহাতোকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে সভায়, যদিও তিনি উপস্থিত থাকবেন কি না, তা স্পষ্ট নয়। কুড়মি সমাজের অন্দরের খবর, আসছেন না টাইগার। সংগঠনের নেতা অজিতপ্রসাদ মাহাতো বলেন, “যে সব মাহাতো জনপ্রতিনিধি রেল টেকা ও ডহর ছেঁকা কর্মসূচিকে সমর্থন করেছেন, তাঁদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। তবে কারও নামে প্রচার না করে সংগঠনের নামে প্রচার হবে।”
আদিবাসী কুড়মি সমাজ সূত্রে খবর, শুধু জয়রাম মাহাতোই নন, বুধবারের পুরুলিয়া সভায় উপস্থিত থাকার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে ঝাড়খণ্ডের আরও দুই প্রভাবশালী নেতাকে। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন রাজ্যের প্রাক্তন উপমুখ্যমন্ত্রী ও আজসু দলের প্রধান সুদেশ মাহাতো এবং গিরিডির বাগোদর বিধানসভার বিজেপি বিধায়ক নগেন্দ্র মাহাতো।
জয়রাম মাহাতোর মতোই এই দুই নেতা অতীতে আদিবাসী কুড়মি সমাজের রেল টেকা ও ডহর ছেঁকা কর্মসূচিকে প্রকাশ্যে সমর্থন করেছিলেন। তাই সংগঠনের তরফে তাঁদেরও এই প্রতিবাদ সভায় আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। কুড়মি সমাজের নেতা-কর্মীদের মতে, “আমাদের আন্দোলনের লক্ষ্য এক — আদিবাসী তালিকাভুক্তির দাবিকে জাতীয় পর্যায়ে পৌঁছে দেওয়া। এই তিনজন নেতা সেই দাবিকে রাজনৈতিক স্তরেও শক্তিশালী কণ্ঠ দিয়েছেন।”
সংগঠনের একটি অংশের দাবি, সদ্য পার হওয়া রেল অবরোধ কর্মসূচি নিয়ে মতভেদ বাড়ছে কুড়মি সমাজের ভিতরে। কলকাতা হাইকোর্ট ওই রেল অবরোধকে অসাংবিধানিক ও বেআইনি ঘোষণা করার পর থেকেই দুই ভাগে বিভক্ত হয়েছে সংগঠন। কেউ কেউ প্রশাসনের পদক্ষেপকে ‘পুলিশি সন্ত্রাস’ বলছেন, কেউ আবার মনে করছেন—আইনভঙ্গের পথ এড়ানোই শ্রেয়। সেই কারণেই বুধবারের সভায় ভিড় কতটা হবে, তা নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে।
তবুও জঙ্গলমহলের চার জেলা—পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, পশ্চিম মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম—থেকে সমর্থকরা আসছেন। অজিতপ্রসাদ মাহাতোর কথায়, “সম্পূর্ণ মাঠ ভর্তি হয়ে যাবে। লাগোয়া ঝাড়খণ্ড থেকেও কিছু মানুষ আসতে পারেন।”
সভাস্থলে আসার পথে পুলিশের নজরদারি থাকবে সর্বত্র। গোশালা মোড় থেকে জেলা স্কুল মোড়, রাঁচি রোড থেকে পুরোনো তথ্য ও সংস্কৃতি দপ্তর পর্যন্ত জুড়ে মোতায়েন থাকবে পুলিশবাহিনী। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, সভা শেষে আদিবাসী কুড়মি সমাজের প্রতিনিধি দল একটি স্মারকলিপি দেবেন জেলা পুলিশের হাতে, যা বেলগুমা পুলিশ লাইনে গ্রহণ করা হবে।
২০২৪ সালের লোকসভা ভোটের আগে ছররার হুলহুলিটাড়ে কুড়মি সমাজের সভায় দেড় লক্ষ মানুষের জমায়েত রেকর্ড গড়েছিল। বুধবারের সভা কি সেই রেকর্ড ভাঙতে পারবে?
Post Comment