নিজস্ব প্রতিনিধি, কোটশিলা :
আশি ছুঁই ছুঁই বাবা, পঞ্চাশের ছেলে আর ২০ বছরের টগবগে নাতি। তিন প্রজন্ম ভারতীয় সেনায়। বাবা ভূতনাথ গরাঁই, ছেলে সুধীরকুমার গরাঁই ইতিমধ্যে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে হাতে তুলেছেন বন্দুক। বন্দুক হাতে তুলে নিয়েছে নাতি শুভজিৎ গরাঁইও। সেও প্রস্তুত হচ্ছে পাকিস্তানের মতো শত্রুর নিকেশ করবে বলে। এই যুদ্ধের আবহে এমন আর্মি পরিবারের কথা শুনলেই আম জনতার মাথা শ্রদ্ধায় ঝুঁকে আসে। গর্বে ফুলে ওঠে বুক।

কোটশিলা বাজারে ভূতনাথ বাবুর বাড়ি। ছেলে সুধীরকে নিয়ে এখানেই তাঁর বাস। দুজনেই অবসর নিয়েছেন ইন্ডিয়ান আর্মি থেকে। আর নাতি শুভজিৎ হরিয়ানার আম্বালা আর্মি স্কুলে দ্বাদশ শ্রেণী পাশ করার পর ভারতীয় সেনার জন্য তৈরি হচ্ছে সুদূর মহারাষ্ট্রের পুনের ন্যাশনাল ডিফেন্স অ্যাকাডেমি ট্রেনিং সেন্টারে। ভারত পাকিস্তান যুদ্ধের আবহে পুরনো যুদ্ধের কত স্মৃতি এই ছোট্ট ঘরটিতে। ৭১ এর পাক ভারত যুদ্ধের অংশ ছিলেন ভূতনাথ বাবু। মধ্যপ্রদেশের গোয়ালিয়র থেকে তাঁকে পাঠানো হয়েছিল সেই সাম্বা সেক্টরে, যেখান থেকে বৃহস্পতিবার রাতে ঢুকতে গিয়ে ভারতীয় সেনার হাতে প্রাণ হারায় একের পর এক জঙ্গি।
প্রাক্তন সেনা কর্মী ভূতনাথ গরাঁই ছিলেন সিগন্যাল ম্যান। বিধি অনুযায়ী তাঁর হাতেও থাকতো রাইফেল। সাম্বা সেক্টরে থাকা রাভি নদীর ওপর সেতু বাঁচানোর দায়িত্বে ছিলেন তাঁরা। সঙ্গে সিগন্যালের ডিউটি। কিছুটা দূরে ছিল এলওসি। যুদ্ধ সেবার চলেছিল ১৭-১৮ দিন। জয়ী হয় ভারত। যুদ্ধ শেষের পরেও ওই এলাকা পর্যবেক্ষণে রাখতে ৬ মাস সেখানে থাকতে হয়। প্রায় আট মাস পর সদ্য বিবাহিত স্ত্রীর কাছে ফিরে আসেন। আর তারপর বাড়িতে হয় জয়ের উৎসব। সেই স্মৃতির সঙ্গী এক্স- সার্ভিস ম্যান আইডেন্টিটি কার্ডের সাদা-কালো ছবি আর একের পর এক মেডেল।

তিনি বলেন, “এই বয়সে আমাদেরকে তো আর যুদ্ধে নেবে না! যাতে ওদের খাওয়া- দাওয়ার কোন কষ্ট না হয়, অস্থায়ী ছাউনির রান্নাঘরে ওদের খাবার বানিয়ে দেবো। সবজি কেটে দেব।
ছেলে সুধীরকুমারের ১০ টা মেডেলও থরে থরে সাজানো। ১৯৯২ থেকে ২০২২ এই ৩০ বছর সেনাতে ছিলেন তিনি। ১৯৯৯-এর এমন মে মাসেই কারগিল যুদ্ধে লে সেক্টরে ‘অপারেশন বিজয়’-এ ছিলেন অংশীদার। হাতে ছিল ইনসাস। বাবার মতো তিনিও ছিলেন সিগন্যালের কাজে। বাবা সিগনাল ম্যান হিসেবে অবসর নিলেও সুধীরবাবু জুনিয়র কমিশন অফিসার হিসাবে অবসর নেন। আজ পাক ভারত যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে বাপ ব্যাটার চোখে ভাসছে পাকিস্তানকে পরাস্ত করার স্মৃতি। উভয়ে অবসরের এত বছর পরেও ভাঙতে চাইলেন না সিগনালের বার্তার বিষয়টি।

নিজের কার্গিলে অংশ নেওয়া ‘অপারেশন বিজয়’ যুদ্ধের স্মৃতি মেলে ধরলেন সুধীর বাবু। “তিন মাস চলেছিল যুদ্ধ। হাতে ইনসাস থাকলেও পাক গোলা বর্ষণ-এ প্রথম প্রথম ভয় লাগতো। তারপর সিগন্যালের কাজে এতই ব্যস্ত হয়ে গিয়েছিলাম যে বিপদ, ঝুঁকি থাকলেও ভয় উধাও হয়ে যায়। কার্গিল তো দখলে নিতে হবে!”
পিতা পুত্র উভয়ের স্বপ্ন এক। পাক অধিকৃত কাশ্মিরে পতপত করে উড়বে ভারতের জাতীয় পতাকা। তাঁরা নিশ্চিত এ স্বপ্ন সফল হবেই। কারণ সেনাবাহিনী কখনও কোন ভুল কাজ করতে পারে না। শুধু অপেক্ষা করে সরকারি আদেশের।
Post Comment