সুজয় দত্ত,পুরুলিয়া :
বাঘিনী জিনাতকে বাগে এনেছিলেন তিনি। দক্ষিণ বাঁকুড়ার গোঁসাইডির জঙ্গলে। ঘুমপাড়ানি গুলিতে নিখুঁত নিশানায় টানা সাত দিন দক্ষিণ বঙ্গ তোলপাড় করে তোলা আতঙ্ককে জয় করেছিলেন। সেই কর্মদক্ষতা ও সাহসিকতারই পুরস্কার পেলেন সুন্দরবনের বিট অফিসার মৃত্যুঞ্জয় বিশ্বাস। আন্তর্জাতিক ব্যাঘ্র দিবসে তাঁকে সম্মান জানাল কেন্দ্রীয় সরকার।
মঙ্গলবার দিল্লির ন্যাশনাল জুওলজিক্যাল পার্কে একটি অনুষ্ঠানে মৃত্যুঞ্জয়বাবুর হাতে তুলে দেওয়া হয় ওয়াইল্ডলাইফ প্রটেকশন অ্যান্ড অ্যান্টি-পোচিং অ্যাক্টিভিটিস’-এর শংসাপত্র। সঙ্গে ছিল ৫০ হাজার টাকার একটি চেক। পুরস্কার তুলে দেন কেন্দ্রীয় পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনমন্ত্রী ভূপেন্দ্র যাদব। রাজ্যের তরফে আগেই পুরস্কার পেয়েছিলেন তিনি। এবার কেন্দ্রের স্বীকৃতি বাংলার বনকর্মীদের জন্য এক বড় সম্মান বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
২০২৪ সালের ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ। সিমলিপালের রয়্যাল বেঙ্গল টাইগ্রেস জিনাত ঢুকে পড়েছিল পুরুলিয়ায়। বান্দোয়ানের রাইকা পাহাড়ের জঙ্গলকে বানিয়েছিল অস্থায়ী ডেরা। সেখান থেকে দক্ষিণ বাঁকুড়ার জঙ্গলে। রেডিও কলার থাকা সত্ত্বেও বহু চেষ্টা করেও তাকে খাঁচাবন্দি করা যায়নি। ওড়িশার বাঘ বিশেষজ্ঞ, ট্র্যাংকুলাইজার শুটার, বনকর্তারা একের পর এক ব্যর্থ হচ্ছিলেন। ২৮ ডিসেম্বর বিকালে গাছে উঠে ‘পজিশন’ নেন মৃত্যুঞ্জয় বিশ্বাস। কিন্তু সেদিন সফল হননি। ডার্ট লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়নি, কিন্তু জিনাত দু’টি ঘুমপাড়ানি গুলিই দাঁতে কামড়ে ফেলে দেয়। পরের দিন, ২৯ ডিসেম্বর সকালে, নতুন করে পরিকল্পনা করে নিখুঁত শটে কাবু করা হয় বাঘিনীকে। আর সেই ঘুমপাড়ানি গুলি ছুড়েছিলেন মৃত্যুঞ্জয়বাবুই।
মাঠে তাঁর সঙ্গী ছিলেন বনরক্ষী রাজীব নস্কর, অরণ্যসাথি কালিপদ গায়েন, শম্ভু দাস ও পশু চিকিৎসক শংকর বিশ্বাস। তবে শেষ মুহূর্তের সাহসী সিদ্ধান্ত ও বাস্তবায়নের দায়িত্ব ছিল ওই বিট অফিসারের কাঁধেই। পুরস্কার হাতে পেয়ে তিনি বলেন, “এই সম্মান শুধু আমাকে নয়, বাংলার বনবিভাগকেও গর্বিত করবে। আরও ভালো কাজের অনুপ্রেরণা দেবে।”
জিনাতের স্মৃতি আজও স্পষ্ট তাঁর মনে। পুরুলিয়া মিররকে ফোনে তিনি বলেন, “ও খুব চতুর, কিন্তু ভীষণ লাজুক। তাকে কাবু করা আমাদের কাছে তখন বড় চ্যালেঞ্জ ছিল। সফল হয়েছিলাম। সেটা ভেবে আজও গর্ব হয়।”
সেই ‘জিনাত অভিযান’-এর ঠিক সাত মাস পর, আন্তর্জাতিক ব্যাঘ্র দিবসে মৃত্যুঞ্জয় বিশ্বাসকে কুর্নিশ জানাল দেশ। বন ও বন্যপ্রাণ বাঁচাতে লড়াই করা যোদ্ধার হাতে তুলে দিল সম্মান।
Post Comment