সুইটি চন্দ্র, পুরুলিয়া:
চারপাশে উৎসবের আলো। গানের ছন্দে মুখরিত পুরুলিয়ার মানভূম ভিক্টোরিয়া ইন্সটিটিউশন ময়দান। আগামী ৪, ৫ ও ৬ জুলাই, ২০২৫—এই তিনদিন ধরে তথ্য ও সংস্কৃতি বিভাগের উদ্যোগে শেষ হলো “বাংলা মোদের গর্ব”—এক বিশিষ্ট প্রদর্শনী, মেলা, এক্সপো এবং মননস্পর্শী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

রাজ্য সরকারের গত ১৪ বছরের উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড ও বাংলার গৌরবময় সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে সামনে এনে মানুষের মধ্যে নতুন আশা ও আত্মবিশ্বাসের আলো ছড়িয়ে দেওয়াই এই উদ্যোগের মূল উদ্দেশ্য।
প্রদর্শনীর শুভ উদ্বোধন হয় গত শুক্রবার। তিন দিন ধরে চলা অনুষ্ঠান শেষ হয় রবিবার। বৃষ্টি-দুর্যোগের মধ্যেও এই অনুষ্ঠানে ভিড় ছিল চোখে পড়ার মত।
গত শুক্রবার নিস্তারিনী কলেজ সঙ্গীত বিভাগ, কোমলগান্ধার সঙ্গীত সংস্থা, ছায়া শিল্প সংস্কৃতি সঙ্গীত সংস্থা সমবেত সংগীত পরিবেশন করে। একইভাবে
সমবেত নৃত্যে ছিল বীণা নৃত্য সংস্থা, পাঠশালা সংস্কৃতি চর্চা কেন্দ্র, ছন্দম ও কৃষ্ণকলি নৃত্য সংস্থা।
আবৃত্তিতে সুদীপ্ত রায়। জলধর বাউরির ছৌ নৃত্য একাডেমির পালা আলাদাভাবে নজর কাড়ে।

শনিবার বিদ্যাধর কর্মকার ও মানভূম লোক শিল্পী সংঘের ঝুমুর মাত করে দেয় ওই অনুষ্ঠান। এছাড়া সুব্রতা কলা নিকেতন, সঙ্গীতা সঙ্গীত বিদ্যালয়, বেনুকা মিউজিক একাডেমির সমবেত সংগীত আলাদা ছাপ ফেলে।
কলামঙ্গলম, সুরছন্দম, শিঞ্জন, মৌলি, লাবনী, নৃত্যাঞ্জলি ও কাবেরীর সমবেত নৃত্য চোখ টানে।
এছাড়া শ্রুতিদিশার সমবেত কবিতা সকলের মন ছুঁয়ে যায়। নাটক পরিবেশন করে কোরক নাট্য সংস্থা।
বীরেন কালিন্দী ও সম্প্রদায়ের নাটুয়া ছিল নজরকাড়া।

রবিবার রসরাজ মাহাত ও শ্রীকৃষ্ণ বাউল সম্প্রদায়ের বাউল গানে অভিভূত হয়ে যান দর্শকরা। সোনার তরী, সুর ও বাণী, সাধনা, স্বরলিপি সঙ্গীত সংস্থা
এদিন সমবেত সংগীত পরিবেশন করে। সমবেত নৃত্যে ছিলো চয়নিকা, নিরুপমা, অঙ্কিতা ডান্স একাডেমি, নৃত্যাঙ্গন, সৃজনী, তাথৈ, ধ্রুপদী ও নৃত্যনীড় সংস্থা, ডায়মন্ড ডল্স ময়ূরী ড্যান্স একাডেমি।

সমবেত কবিতায় শ্রুতিনন্দন। ঝুমুরে সাইমনি মাহাত, কুড়চি ফুল কোটশিলা ঝুমুর আখড়া। এছাড়া বৈরাতি নৃত্য চোখ টানে। জেলা তথ্য ও সংস্কৃতি দপ্তরের আধিকারিক সিদ্ধার্থ চক্রবর্তীর কথায়,”বাংলা শুধু এক ভাষা নয়, এক জীবনচর্চা। তার প্রতিটি ছন্দ শব্দ ও রেখায় ইতিহাস বোনা। আমাদের এই আয়োজন সেই ঐতিহ্যকে নতুন প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দেবার এক বিনম্র প্রয়াস। এই মাটির সংস্কৃতি, এই জনজাতির গর্ব, আমাদের চেতনায় পরিচায়ক। “
এই তিনদিন শুধু সুর ও নৃত্যের নয়, আত্মপরিচয় ও গর্বের এক বৃহৎ মিলনক্ষেত্র হয়ে ওঠে পুরুলিয়া শহর।
Post Comment