নিজস্ব প্রতিনিধি, ঝালদা:
বনমহোৎসবের অনুষ্ঠানে দাঁড়িয়েই বনদপ্তরের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তুললেন পুরুলিয়া জেলা পরিষদের সহ- সভাধিপতি সুজয় বন্দ্যোপাধ্যায়। বুধবার ঝালদা ১ নম্বর ব্লক সংলগ্ন মাঠে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে প্রকাশ্যেই তিনি বলেন, বনদপ্তরের আর্থিক লেনদেনে স্বচ্ছতা নেই।

সুজয়বাবুর অভিযোগ, “বনদপ্তরের কাজের টাকা পেতে সময় লেগে যায়। এমনকি একাধিক ক্ষেত্রে অর্থ পৌঁছচ্ছে এমন অ্যাকাউন্টে। যারা প্রকৃত কাজের সঙ্গে যুক্ত নন। কিছু ভুয়ো অ্যাকাউন্টে অর্থ পাঠানো হচ্ছে। গাছ লাগানোর মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পে কাজ করা শ্রমিকরা ন্যায্য মজুরি পাচ্ছেন না।” তিনি ওই দপ্তরকে অনুরোধ করেন, এই বিষয়ে নজরদারি বাড়াতে। তবে তাঁর এই অভিযোগকে গুরুত্ব দিতে নারাজ রাজ্যের বনমন্ত্রী বিরবাহা হাঁসদা। তিনি পাল্টা বক্তব্য ও প্রতিক্রিয়ায় বলেন, “অর্থ ছাড় পেতে কিছুটা সময় লাগতেই পারে। কিন্তু দুর্নীতির অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। রাজ্য জুড়ে প্রতিটি প্রকল্পে কড়া নজরদারি চালানো হয়।”

এই মন্তব্য ঘিরে রাজনৈতিক মহলে শুরু হয়েছে চর্চা। বিশেষ করে শাসকদলের অভ্যন্তরেই বন দপ্তরের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে বলে একাংশের দাবি। কেউ কেউ মনে করছেন, সুজয়বাবুর মন্তব্য শাসক শিবিরের অন্দরের অসন্তোষের ইঙ্গিত বহন
করছে। বনমন্ত্রী বলেন, “রাজ্যের বনভূমির সবুজায়ন
১৩ শতাংশ থেকে বেড়ে ২২ শতাংশ হয়েছে। বনভূমির বাইরেও বৃক্ষরোপন করা হচ্ছে।”

রাজ্যের বন বিভাগ সূত্রে জানা গিয়েছে, জঙ্গলমহলের জেলাগুলিতে জঙ্গল বাড়ার কারণেই বিভিন্ন বন্যপ্রাণ স্থায়ীভাবে বসবাস করছে। এই জেলাগুলিতে ন্যাড়া পাহাড় গুলির যেমন চেহারা ছিল। এখন আর তা নেই। এখন কার্যত সবুজে সবুজ ওই ন্যাড়া পাহাড়। এদিকে জঙ্গল বাড়ার জন্য বাস্তুতন্ত্রের সুফলে পরিবেশগত পরিবর্তনের পাশাপাশি আবহাওয়ার পরিবর্তন হচ্ছে।
ওই অনুষ্ঠানে পুরুলিয়ার পুলিশ সুপার অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় সেই কথাই তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ” জঙ্গল বাড়ার কারণেই এই জেলায় বিভিন্ন ধরনের বন্যপ্রাণের উপস্থিতি মিলছে। এছাড়া আবহাওয়ার পরিবর্তন হয়েছে। এবার বর্ষায় রীতিমতো অতিবৃষ্টি হচ্ছে এই জেলায়। যা অতীতে এই সময় সেভাবে দেখা যায়নি। এমনকি তাপপ্রবাহের ক্ষেত্রেও পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে। চলতি বছরের মার্চের শেষে অযোধ্যা পাহাড়ে রাতের বেলায় গায়ে চাদর দিতে হয়েছে। আবহাওয়ার এই পরিবর্তন জঙ্গল বৃদ্ধির কারণেই। ” ওই বনমহোৎসবের পদযাত্রা জেলার লোকশিল্পের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠিত হয়। হয় নানান সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। সেই সঙ্গে বন ও বন্যপ্রাণ রক্ষাতে ভালো কাজের জন্য বিভিন্ন রেঞ্জকে যেমন পুরস্কৃত করা হয় সরকারি প্রকল্পের সুবিধাও প্রদান করা হয় এদিন। অনুষ্ঠানে ছিলেন রাজ্যের পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন বিভাগের স্বাধীন দায়িত্বপ্রাপ্ত রাষ্ট্রমন্ত্রী সন্ধ্যারানী টুডু, পুরুলিয়া জেলা পরিষদের সভাধিপতি নিবেদিতা মাহাতো, বাঘমুন্ডির বিধায়ক সুশান্ত মাহাতো প্রমুখ।
Post Comment