নিজস্ব প্রতিনিধি, পুরুলিয়া :
মহিলাদের রণং দেহী তাণ্ডব। ব্যাপক ভাঙচুর রেস্টুরেন্ট কাম বারে৷ আগুনে ভস্মীভুত পানশালা। মাটিতে বয়ে নষ্ট ১২ লাখ টাকার মদ।
পুরুলিয়ার শান্ত ছন্দে এক নজিরবিহীন বিস্ফোরণ ঘটল বৃহস্পতিবার। পুরুলিয়া মফস্বল থানার গোলামারা পঞ্চায়েতের লালবাজারে ঘটে গেল এমন এক ঘটনা, যা একদিকে যেমন সাহসিকতার নিদর্শন, তেমনি আইনকে হাতে তুলে নেওয়ার জটিল প্রশ্নও তুলে ধরছে।
লালবাজারে একটি রেস্টুরেন্ট কাম বারে মদ বিক্রি এবং তার জেরে এলাকায় মাতলামি, ইভটিজিং ও জনজীবনে নৈরাজ্যের অভিযোগে ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেছিল স্থানীয় মহিলারা। গত দু’দিন ধরে টোটোতে করে মদের বিরুদ্ধে প্রচারে নামেন তাঁরা। আর বৃহস্পতিবার সেই ক্ষোভ ভয়াবহ রূপ নেয়।

প্রায় ৪০টি স্বনির্ভর দলের প্রায় ১০০ জনেরও বেশি মহিলা এদিন লাঠি সোঁটা হাতে রীতিমতো মিছিল করে এসে চড়াও হন রেস্টুরেন্ট কাম বারের উপর। তাঁদের অভিযানে চলল অগ্নিসংযোগ, ভাঙচুর এবং কর্মীদের মারধর। প্রায় দেড় ঘণ্টা ধরে চলে এই অভিযান। তাঁদের দাপটে এলাকার কেউ ছবিও তুলতে পারলেন না। এমনকি সিসিটিভি ক্যামেরাও ভেঙে দেওয়া হয়েছে যাতে প্রমাণ মুছে ফেলা যায়।
রেস্টুরেন্ট কাম বারটির মালিক চরণ দাস বলেন,” আমি তো সরকারের বিধি মেনে মদের লাইসেন্স পেয়েছি। এরকম ঘটনা হওয়া তো উচিত ছিল না। সমগ্র বিষয়টি পুলিশকে জানিয়েছি। হামলার ঘটনায় প্রায় ২৫ লাখ টাকা ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। তার মধ্যে সাড়ে ১২ লাখ টাকার মদ। ওই হামলায় দু-তিনজন কর্মী গুরুতর জখম।” অভিযোগ, দমকলকে খবর দেওয়া হলেও প্রথমে বাহিনীকে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। আগুনের লেলিহান শিখায় দাউ দাউ করে রেস্টুরেন্ট কাম বার জ্বলতে থাকে তাঁদের চোখের সামনেই।

এই রেস্টুরেন্ট কাম বারটি খোলার পর থেকেই এলাকার পরিবেশ নাকি বদলে গিয়েছিল । অভিযোগ, মাঠে, পুকুরঘাটে, এমনকি চাষের জমিতে পড়ে থাকত ভাঙা মদের বোতল। এক শিশুর পা কেটে যাওয়ার ঘটনাও ঘটেছে বলে জানা যায়। মাতাল ইভটিজারদের দাপটে মেয়েদের রাস্তায় চলাফেরা করাও দুর্বিসহ হয়ে উঠেছিল।
স্থানীয় প্রমীলা বাহিনীর এক নেত্রী বলেন, “আমরা পঞ্চায়েত, ব্লক অফিস, পুলিশ, আবগারি—সবার কাছে গিয়েছিলাম। কেউ কিছু করেনি। আর মেয়েদের সম্ভ্রম নিয়ে খেলা হতে থাকলে আমাদের হাত গুটিয়ে বসে থাকলে চলবে না।”
পুরুলিয়া মফস্বল থানায় দায়ের হয়েছে অভিযোগ। তবে পুলিশ কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি। মদ্যপানের বিরুদ্ধে জনজাগরণের মুখ হয়ে উঠলেও এই প্রমীলা বাহিনী আইন ভেঙে কোন বার্তা দিলেন? নৈরাজ্যের কোন নজির গড়লেন, উঠছে প্রশ্ন।
যে রেস্টুরেন্ট কাম বারে কালকেও জমেছে পানের আসর, সেই জায়গায় আজ ছাই আর পুড়ে যাওয়া কাঠামো। চুপচাপ এলাকা। আর মহিলাদের চোখে—চাপা উত্তাপের জয়গান।
Post Comment