সুজয় দত্ত, পুরুলিয়া:
ধুঁকতে থাকা যাত্রা শিল্প যেন এক লহমায় ফিরে পেল প্রাণ। পুরুলিয়া রবীন্দ্র ভবনে অক্টোবরের পয়লা পাঞ্চজন্য অপেরার প্রথম প্রযোজনা পৌরাণিক যাত্রাপালা নরনারায়ণ এক মাইলস্টোন হয়ে রইল। সম্পূর্ণ পরিপূর্ণ প্রেক্ষাগৃহে শেষ দৃশ্য পর্যন্ত দর্শক মুগ্ধ হয়ে বসে রইলেন।
চির পরিচিত মহাভারতের গল্পকে এক নতুন আঙ্গিকে দেখা হয়েছে প্রবাদপ্রতিম পালাকার প্রসাদকৃষ্ণ ভট্টাচার্যর এই পালায়। সোশাল মিডিয়া মহালয়ার সকাল থেকে যাত্রার প্রশংসায় পঞ্চমুখ। পালার নির্দেশক জন্মেজয় চট্টোপাধ্যায় জানালেন, বিগত প্রায় ৩০-৩৫ বছর পুরুলিয়া শহরে সেই অর্থে মানুষের ভালোলাগার মতো কোনো যাত্রা পালা মঞ্চস্থ হয়নি। কোন দল বিচ্ছিন্নভাবে হয়তো করে থাকতে পারে, কিন্তু সেই ভাবে তাদের প্রচারও ছিল না আর মানুষদের মধ্যে তার আলোড়ন তৈরি হয়নি। আমি পুরুলিয়ার স্থায়ী বসবাসকারী মানুষ হলেও পুরুলিয়া শহর ছাড়া অন্যান্য বহু জায়গায় আজ প্রায় মোটামুটি ৪০ বছর এই যাত্রা শিল্পের সঙ্গে জড়িয়ে।অভিনয় , নির্দেশনা, সম্পাদনা ইত্যাদি নানান কাজ করে চলেছি। কিন্তু বর্তমানে পুরুলিয়া শহরে কোন দল স্থায়ীভাবে যাত্রার চর্চা করে করছে না। অথচ আজ থেকে ৪০-৪৫ বছর আগেও পুরুলিয়া শহরে স্থায়ীভাবে অ্যামেচার পার্টি ছিল। যথেষ্ট দক্ষতার সঙ্গে তারা অনেক ভালো ভালো যাত্রাপালা উপহার দিয়েছেন পুরুলিয়ার মানুষকে। আমার শৈশব কৈশোরে আমি দেখেছি , বাণী অ্যামেচার ক্লাব চাষাপাড়া , ধীবর সমিতি জেলে পাড়া, মধ্যবাজার যাত্রার দল , তেলকল পাড়া যাত্রার দল , সতী মেলা, ধোবঘাটা, নাপিত পাড়া এইসব জায়গায় শখের দলের যাত্রার একটা চর্চা ছিল। এখন সেটা আর হয় না। তাই মনের মধ্যে তো একটা তৃষ্ণা ছিলই যে পুরুলিয়াতে একটা যাত্রার দল গড়ে ওঠা উচিত। হঠাৎ করেই ডঃ দয়াময় রায় , রথু লাল মুখোপাধ্যায় , শুভেন্দু বিকাশ মিত্র , দিব্যেন্দুশেখর বন্দ্যোপাধ্যায় , ব্রতীন দেওঘোরিয়া , শুভাশিস গুহ নিয়োগী , সুদিন অধিকারী এইসব বিশিষ্টজনের কাছে কথা প্রসঙ্গে আমার এই মনের ইচ্ছাটা প্রকাশ করি। এঁরা প্রত্যেকেই যাত্রা অনুরাগী মানুষ। আমাদের ঐকান্তিক ইচ্ছায় গড়ে উঠল এই পাঞ্চজন্য যাত্রা সংস্থাটি।
বাঙলা যাত্রার প্রাচীন লোকশিল্পের যে নিজস্ব আঙ্গিক আছে সেই আঙ্গিকটি ধরে রাখতে পৌরাণিক পালার বিকল্প নেই। আমার প্রস্তাব ডঃ দয়াময় রায় সহ সবাই সমর্থন করলেন। নারী নির্যাতন হোক আর সম্পত্তি সংক্রান্ত বিবাদ মহাভারত মহাকাব্যের যে কোনো অংশের বিষয়বস্তু আজকেও সমানভাবে প্রাসঙ্গিক। তাই এই পালা মঞ্চস্থ করার সিদ্ধান্ত।
Post Comment