নিজস্ব প্রতিনিধি,বাঘমুন্ডি:
বিশ্ব আদিবাসী দিবসে পুরুলিয়া জেলা পুলিশের উদ্যোগে শুরু হলো এক ব্যতিক্রমী সামাজিক প্রয়াস। অযোধ্যা পাহাড়ের তরুণ-তরুণীদের চাকরি পাইয়ে দিতে তিন মাসের আবাসিক প্রশিক্ষণ শিবির। এই শিবিরের মূল লক্ষ্য—ইউনিফর্মড ফোর্সে চাকরি পাইয়ে দেওয়া। অর্থাৎ পাহাড়ের তরুণ- তরুণীদেরকে প্রয়োজনীয় শারীরিক, লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার জন্য প্রশিক্ষণ দেওয়া। শনিবার ‘প্রেরণা’ নামে এই কেন্দ্রের উদ্বোধন হলেও আগামী মঙ্গলবার থেকে
এই কেন্দ্রে প্রশিক্ষণ শুরু হবে। অবৈতনিক আবাসিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র চলবে অযোধ্যা হিলটপের সিএডিসির অতিথি আবাসে। একসময় সেখানে সিআরপিএফের ক্যাম্প ছিল। এখানেই রাজ্য পুলিশ, কলকাতা পুলিশ, বিভিন্ন কেন্দ্রীয় বাহিনী এবং ভারতীয় সেনাবাহিনীতে চাকরি পাওয়ার লক্ষ্যে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। আউটডোর ও ইনডোর ইন্সট্রাক্টরের ভূমিকায় থাকবেন পুলিশ আধিকারিক থেকে কনস্টেবলরাও। পাঠ দেবেন ডিএসপি, এএসপি পদমর্যাদার আধিকারিক থেকে স্বয়ং এসপি। শনিবার এই কেন্দ্রের উদ্বোধনের মধ্যে দিয়ে পুরুলিয়ার পুলিশ সুপার অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বার্তা, কোনভাবেই যাতে অতীতের দিন ফিরে না আসে। কেউ যদি পাহাড়ে অশান্তি সৃষ্টি করতে চায় তাহলে পুলিশের মুখোমুখি হবে। অযোধ্যা পাহাড়ের সামগ্রিক উন্নয়নে এই কড়া বার্তার মধ্য দিয়েই ওই আবাসিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের দরজা খুলল এদিন।

পুলিশ সুপার অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “অযোধ্যা পাহাড়ের তরুণ-তরুণীরা যাতে শুধু স্বপ্ন না দেখে, সেই স্বপ্ন বাস্তবে রূপ দিতে পারে, সেজন্যই এই উদ্যোগ। এখানে শুধু কোচিং নয়, আমরা মানসিক দৃঢ়তা, শারীরিক সক্ষমতা এবং পরীক্ষামুখী প্রস্তুতির সমস্ত দিকেই সমান গুরুত্ব দিচ্ছি।”
২০২২ সাল থেকেই ‘পথের দিশা’ প্রকল্পের মাধ্যমে জেলার বিভিন্ন প্রান্তে চাকরির কোচিং দিয়ে আসছে পুরুলিয়া জেলা পুলিশ। এবার পাহাড়ি এলাকায় বিশেষভাবে ইউনিফর্মড ফোর্সের জন্য এই আবাসিক প্রশিক্ষণ শিবির চালু করা হচ্ছে। লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার জন্য বাইরের বিশেষজ্ঞদেরও যুক্ত করা হবে। তারা অনলাইনে পাঠ দেবেন। ১৮ থেকে ২৫ বছর বয়সীর মধ্যে ৫৬ জন প্রশিক্ষণ পেতে সুযোগ পেয়েছেন। যদিও আবেদন এসেছিল ২০০-র বেশি।

শিবিরে অংশ নেওয়া এক শিক্ষার্থী শ্যামল মুর্মু বলেন, “আমাদের জন্য এমন সুযোগ সত্যিই গর্বের। এতদিন শুধু শুনতাম, এখন নিজের চোখে দেখছি পাহাড়ে থেকেও বড় স্বপ্ন পূরণের পথ খুলে যাচ্ছে।”
পুলিশ সুপার আরও জানান,
“পাহাড়ের প্রতিটি ছেলে-মেয়েকে আমি বলতে চাই—সুযোগ এসেছে, দরজা খুলে দিতে হবে আপনাদেরই। পরিশ্রম করলে এই পাহাড় থেকেই পুলিশ, সেনাবাহিনী, কেন্দ্রীয় বাহিনীতে অসংখ্য চাকরিপ্রার্থী উঠে আসবে। পাহাড়ের উন্নয়নে যদি কেউ বাধা দেন। তাহলে বরদাস্ত করবে না পুলিশ।”

এই প্রশিক্ষণ শিবির শুধু কর্মসংস্থান নয়। পাহাড়ি যুবসমাজের আত্মবিশ্বাস ও আত্মনির্ভরতার নতুন দিগন্ত খুলে দেবে বলেই মনে করছে পুরুলিয়া জেলা পুলিশ।









Post Comment