insta logo
Loading ...
×

পহেলগাঁও চলে এলো পুরুলিয়ার বুকেই, ভাইরাল

পহেলগাঁও চলে এলো পুরুলিয়ার বুকেই, ভাইরাল

নিজস্ব সংবাদদাতা , পুরুলিয়া:

কাশ্মীরের পহেলগাঁও যখন ভয়াবহ জঙ্গি হানার জেরে শিরোনামে, তখনই দেশের অন্য প্রান্তে, বাংলার পুরুলিয়ায় উঠে এল এক অন্য ছবি। ঝালদা আর বাঘমুন্ডির টুরগা জলাধারের প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা দুই সবুজ উপত্যকা যেন এক স্বস্তির নিঃশ্বাস। সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল সেই ছবি, ভিডিও। কেউ বলছেন—‘মিনি পহেলগাঁও’। কেউ তুলনা করছেন বৈশরণ ভ্যালির সঙ্গে। আর তাতেই ভিড় বাড়ছে পর্যটকের।

ঝালদা শহর থেকে একটু দূরে, দেড় কিলোমিটারের মধ্যে এক বিস্তৃত ঘাসজমি—স্থানীয় ভাষায় ‘সোনাদাঁড়ি’। কথিত আছে, একসময় সেই মাঠ লাগোয়া ঝোরা থেকে সোনার কণা পাওয়া যেত। তাই এই নাম। স্থানীয়রা বলেন ‘বেহড়াতল’। মাঠের পাশে ছড়িয়ে আছে কাঁদরা, কুলাজাঙ্গা, ডুরগি, মহাদেবপুরের মতো গ্রাম। বিকেল হতেই মাঠে ছেলেমেয়েদের খেলাধুলা, প্রবীণদের হাঁটাচলা, যুবকদের শরীরচর্চা। কিন্তু সেই সাদামাটা মাঠই একদিন হয়ে উঠবে পহেলগাঁওয়ের প্রতিচ্ছবি—ভাবেনি কেউ।

তবে ভাবেন এক ঝালদাবাসিনী, যিনি ব্লগের মাধ্যমে তুলে ধরেন এই ঘাসজমির অপরূপ দৃশ্য। সবুজের ভাঁজে মাঠের বাঁকে ক্যামেরার ফ্রেমে ধরা পড়ে কাশ্মীরের সৌন্দর্যের ছায়া। নেটমাধ্যমে ভাইরাল সেই ভিডিও। মুহূর্তে বদলে যায় ছবিটা। পর্যটক, ইউটিউবার, নেচার ব্লগার—হুড়মুড় করে ভিড় জমে ঝালদায়।

স্থানীয় বাসিন্দা বিশ্বজিৎ মাহাতো বলেন, “পহেলগাঁও আমরা দেখিনি। তবে এখন যখন সোশ্যাল মিডিয়ায় ছবিগুলো দেখি, বুঝতে পারি আমাদের মাঠটাও কম কিছু নয়। সত্যিই এক টুকরো ভূস্বর্গ যেন এখানে লুকিয়ে আছে।”

পুরাতন ঝালদারই এক বাসিন্দা জিতু প্রামাণিক জানালেন, “প্রতিদিন পর্যটকের আনাগোনা বাড়ছে। আমরা চাই এই জায়গা পুরুলিয়ার পর্যটন মানচিত্রে জায়গা পাক। সরকারি উদ্যোগ হোক।”

আরেকদিকে, পুরুলিয়ার বুকে দ্বিতীয় ‘মিনি পহেলগাঁও’ খুঁজে পাওয়া গিয়েছে অযোধ্যা পাহাড়ের কোলে—টুরগা জলাধারের পাড়ে। গ্রীষ্মে জল কমে যাওয়ায় ফুটে উঠেছে বিস্তৃত সবুজ মাঠ, চারপাশে ঘন জঙ্গল, শান্ত পাহাড়তলি। টুকটুক করে ছুটে চলেছে জলের ধারা। শোনা যাচ্ছে হাতির পায়ের শব্দ, পাখির ডাক। ফ্রেমে ফ্রেমে বন্দি হচ্ছে অনন্য এক প্রকৃতি।

এই দৃশ্যই ক্যামেরায় ধরেছেন বাঘমুন্ডির শিক্ষক ও প্রকৃতিপ্রেমী জনার্দন মাহাতো। তাঁর কথায়, “সবাই তো কাশ্মীর যেতে পারেন না। তাই বলছি, আসুন পুরুলিয়াতেই। এখানে কোনও ভয় নেই, শুধু প্রকৃতির নিঃশব্দ সৌন্দর্য।”

তুলনা টানা হচ্ছে হিমাচলের খাজিয়ার, অন্ধ্রপ্রদেশের আরাকু, উত্তরাখণ্ডের চোপতার সঙ্গেও। কোথাও বরফ নেই, পাইন বন নেই, কিন্তু আছে তৃণভূমির শান্ত ছায়া। নেই রক্ত, নেই ভয়। শুধু শান্তি, আর প্রকৃতির নির্ভেজাল আলিঙ্গন।

পুরুলিয়ার এই দুই ‘মিনি পহেলগাঁও’ যেন নতুন করে দেখিয়ে দিচ্ছে বাংলার প্রাকৃতিক সম্ভাবনার মুখ। একটু উদ্যোগ, সামান্য পরিকাঠামো, আর একটু পরিকল্পনা—তাহলেই পর্যটনের মানচিত্রে জ্বলজ্বল করবে ঝালদা ও টুরগা।

Post Comment