insta logo
Loading ...
×

নিম্নচাপের আকাশভাঙ্গা বৃষ্টিতে ভাসছে পুরুলিয়া, মৃত ছাত্রী

নিম্নচাপের আকাশভাঙ্গা বৃষ্টিতে ভাসছে পুরুলিয়া, মৃত ছাত্রী

নিজস্ব প্রতিনিধি, পুরুলিয়া :

পুরুলিয়ায় আকাশভাঙা বৃষ্টির জেরে জেলার একাধিক এলাকা জলমগ্ন। হুড়ায় বজ্রপাতে মৃত্যু হয়েছে এক কলেজ ছাত্রীর। জখম আরেক ছাত্রী। প্রবল বৃষ্টিতে পড়ে গিয়েছে গাছ, ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কাঁচাবাড়ি ও অস্থায়ী সেতু।

আবহাওয়া দপ্তর আগাম সতর্কতা দিয়ে বুধবার পুরুলিয়া জেলায় রেড অ্যালার্ট জারি করেছিল। মঙ্গলবার রাত থেকে শুরু হয়ে বুধবার রাত পর্যন্ত মুষলধারে বৃষ্টিপাত হয়েছে।

জেলার কৃষকরা যদিও এখনও স্বস্তিতে নেই। জুন মাসের অর্ধেক পেরিয়ে গেলেও বৃষ্টির ঘাটতিতে বীজতলা তৈরি করা সম্ভব হয়নি। এরই মাঝে হঠাৎ অতি বৃষ্টিতে জমিতে জল জমে যাওয়ায় পরিস্থিতি আরও জটিল হয়েছে।

◾বজ্রাঘাতে কলেজ ছাত্রীর মৃত্যু

হুড়া থানার বড়িয়ারপুর গ্রামের জবা মাহাতো (২০), লালপুর কলেজের ছাত্রী। বুধবার কলেজ থেকে সাইকেলে বাড়ি ফেরার পথে বজ্রাঘাতে জখম হয় সে ও তাঁর সঙ্গী সুস্মিতা মাহাতো। স্থানীয়রা তাদের হুড়া ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে গেলে চিকিৎসক জবাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। সুস্মিতার চিকিৎসা চলছে।

◾জলমগ্ন পুরুলিয়া শহর

পুরুলিয়া শহরের ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের সাধুডাঙ্গা সহ একাধিক ওয়ার্ডে জল ঢুকে পড়ে। জেলা গ্রন্থাগারও জলমগ্ন হয়। রঘুনাথপুরের বারিকবাঁধ এলাকাও জলে ডুবে যায়। দামদা ও বলরামপুর সহ বহু ব্লকে কাঁচা বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিভিন্ন কজওয়ের উপর জল বইছে, ঝুঁকি নিয়ে পারাপার করছেন সাধারণ মানুষ।

বৃষ্টির জেরে জলমগ্ন হয়ে পড়েছে পুরুলিয়া শহরের বেশিরভাগ ওয়ার্ড। বিশেষ করে ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের সাধুডাঙ্গা এলাকায় পরিস্থিতি সবচেয়ে উদ্বেগজনক। শহরের পাঁচ নম্বর ওয়ার্ডের জেলা গ্রন্থাগারেও জল ঢুকে পড়ে।

বুধবার পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে নিজে শহরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখেন পুরুলিয়া পৌরসভার পুরপ্রধান নবেন্দু মাহালি। তিনি জলমগ্ন ওয়ার্ডগুলির অবস্থা দেখে দ্রুত জল নিষ্কাশনের ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট দফতরকে নির্দেশ দেন।

এছাড়া জেলা গ্রন্থাগারে জল ঢোকার খবর পেয়ে সেখানে পৌঁছন ৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলার বিভাসরঞ্জন দাস। তিনি লাইব্রেরি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেন এবং ক্ষয়ক্ষতির হিসেব নেন।

◾গাছ পড়ে রাস্তা অবরুদ্ধ, কজওয়ে ভাসছে জলে

ঝালদা ১ নম্বর ব্লকের পুতিডি গ্রামের কাছে রাস্তায় গাছ পড়ে যান চলাচল বন্ধ হয়। বাঘমুণ্ডির শালডাবরা এবং বান্দোয়ান-গালুডি রাজ্য সড়কের গুঁধলুবেড়া কজওয়ে জলে ডুবে যায়।

◾ভেঙে গেল অস্থায়ী সেতু

আড়শা ব্লকের বামুনডিহা ঘাটে কাঁসাই নদীর উপর নির্মীয়মাণ অস্থায়ী সেতু প্রবল বৃষ্টিতে ভেঙে যায়। কৃষক বিরিঞ্চি মাহাতো বলেন, “গত বছরের মতো এবারও জুনে বৃষ্টির ঘাটতির কারণে বীজতলা তৈরি করতে পারিনি। এখন হঠাৎ অতিবৃষ্টিতে জমিতে জল জমে থাকায় আরও কয়েকদিন বীজতলা তৈরি সম্ভব নয়।”

◾চাষাবাদে অনিশ্চয়তা

পুরুলিয়া কৃষি দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, জুন মাসে এ পর্যন্ত জেলায় মাত্র ৪১.৫৪ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছিল। কিন্তু মঙ্গলবার সকাল সাড়ে আটটা থেকে বুধবার সকাল সাড়ে আটটা পর্যন্ত ৯১.৭৪ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। তবে এই বৃষ্টিও কৃষকদের সমস্যার সমাধান আনেনি। বরং সবজি চাষ বিপুলভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে বলে আশঙ্কা।

◾প্রশাসনের প্রতিক্রিয়া

পুরুলিয়ার অতিরিক্ত জেলাশাসক (উন্নয়ন) সুদীপ পাল জানান, “পুরুলিয়া ১ নং ব্লকের দামদা এলাকায় একটি কাঁচা বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অন্য ব্লকগুলি থেকেও রিপোর্ট এলে বিস্তারিত বোঝা যাবে।”

Post Comment