নিজস্ব প্রতিনিধি , রঘুনাথপুর :
রঘুনাথপুর পুরসভায় ফের উসকে উঠল রাজনৈতিক টানাপড়েন। শুক্রবার দুপুরে রাজ্য পুর ও নগরোন্নয়ন দফতর নির্দেশিকা জারি করে রঘুনাথপুর পুরসভার প্রশাসক পদে থাকা মহকুমাশাসককে সরিয়ে তরণী বাউরিকে পুরপ্রধানের দায়িত্বে পুনর্বহাল করা হয়। বিকেলে মহকুমাশাসকের কার্যালয়ে গিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে দায়িত্ব বুঝে নেন তরণী।
মহকুমাশাসক বিবেক পঙ্কজ বলেন, “দফতরের নির্দেশ অনুযায়ী আগের পুরপ্রধান তরণী বাউরিকেই ফের দায়িত্ব দেওয়া হল।”
পৌরসভা সূত্রে খবর, অনাস্থা আনা তিন পুর-প্রতিনিধিকে নিজের দিকে টেনে সংখ্যাগরিষ্ঠতার সমর্থন নিশ্চিত করেছেন তরণী। সম্প্রতি তরণী তাঁর পক্ষে থাকা তিন পুর-প্রতিনিধি এবং বিক্ষুব্ধ গোষ্ঠীর আরও তিনজনকে নিয়ে কলকাতায় রাজ্যের পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের কাছে যান। সেখানে ছয় পুর-প্রতিনিধি লিখিত আকারে তরণীর প্রতি তাঁদের আস্থা জানান।
প্রসঙ্গত, রঘুনাথপুর পুরসভার মোট ১৩টি ওয়ার্ডে ২০২২ সালের নির্বাচনে তৃণমূল জয়ী হয়েছিল ১০টি আসনে, কংগ্রেস ২ এবং বিজেপি ১টি আসনে। প্রথম থেকেই পুরপ্রধান পদে ছিলেন তৃণমূলের তরণী বাউরি।
অথচ চলতি বছরের ২৪ এপ্রিল তরণীর বিরুদ্ধে অনাস্থা আনেন শাসক দলের ৬ এবং কংগ্রেসের ১ জন মিলিয়ে মোট ৭ জন কাউন্সিলর। আইন অনুযায়ী, অনাস্থা প্রস্তাব এলে তা নিয়ে সভা ডাকতে হয় পুরপ্রধান বা উপপুরপ্রধানকে। তাঁরা সভা না ডাকায় অনাস্থার পক্ষে থাকা কাউন্সিলররা ২১ মে তলবি সভা ডাকেন। কিন্তু তার আগেই ১৯ মে রাজ্যের নগরোন্নয়ন ও পুর দফতর বোর্ড ভেঙে দিয়ে প্রশাসক হিসেবে মহকুমাশাসককে নিয়োগ করে। ২০ মে তরণীর কাছ থেকে দায়িত্ব বুঝে নেন মহকুমাশাসক বিবেক পঙ্কজ।
এই ঘটনায় আদালতের দ্বারস্থ হন বিজেপি কাউন্সিলর দীনেশ শুক্ল। কোলকাতা হাই কোর্ট রায়ে রাজ্য প্রশাসনের নিয়োগ করা প্রশাসককে অবৈধ ঘোষণা করে এবং বোর্ড পুনঃস্থাপনের নির্দেশ দেয়। সেই নির্দেশের ভিত্তিতেই শুক্রবার ফের দায়িত্ব বুঝে নেন তরণী বাউরি।
তবে এই পুনর্বহাল প্রক্রিয়াকে ঘিরে নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে। বিজেপি কাউন্সিলর দীনেশ শুক্লা বলেন, “আদালত পুরসভার ১৩ জন পুর-প্রতিনিধিকেই নতুন পুরপ্রধান নির্বাচন করতে বলে। তার পরিবর্তে প্রশাসন উপর থেকে তরণী বাউরিকে ফের বসিয়ে দিয়েছে। এটি আইনসম্মত নয়। দরকার হলে ফের আদালতে যাব।”
বিশেষজ্ঞদের একাংশের মতে, পশ্চিমবঙ্গ মিউনিসিপাল অ্যাক্ট অনুযায়ী অনাস্থা নির্ধারণের একমাত্র বৈধ পদ্ধতি হল বোর্ড বৈঠকে ভোটাভুটি। মন্ত্রীর সামনে কাউন্সিলরদের আস্থা প্রকাশ আইনি প্রক্রিয়ার বিকল্প হতে পারে না। এ ক্ষেত্রে তলবি সভা ডেকে সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে আস্থা প্রমাণ করা প্রয়োজন।
প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে, তরণীকে এভাবে ফের দায়িত্ব দেওয়া কি আইন মেনে হয়েছে? মন্ত্রীর সামনে সমর্থন পেশ করাটাই কি যথেষ্ট নাকি বৈধ ভোটাভুটির প্রয়োজন? অনাস্থা রীতিতে কি এইভাবে বদল আনা যায়? এই সব প্রশ্ন নিয়ে যারা অনাস্থা এনেছিলেন, তাঁরা রীতিমতো বিদ্রোহী হয়ে উঠেছেন।
Post Comment