insta logo
Loading ...
×

দেশ ছাড়িয়ে বিদেশ, পুজোয় জাপান মাতাবে বলরামপুরের নাটুয়া

দেশ ছাড়িয়ে বিদেশ, পুজোয় জাপান মাতাবে বলরামপুরের নাটুয়া

নিজস্ব প্রতিনিধি , বলরামপুর:

নাটুয়া নাচ নিয়ে বিশ্বমঞ্চে পুরুলিয়ার শিল্পীরা।জাপানে ভারতের প্রতিনিধি বলরামপুরের চার নৃত্যশিল্পী। গ্রামের কাঁচা রাস্তা পেরিয়ে সোজা ভূমিকম্পের দেশ কাঁপাবেন পুরুলিয়ার বলরামপুর ব্লকের চার জন নাটুয়া নৃত্যশিল্পী। তাঁরা পাড়ি দিলেন জাপানের উদ্দেশে। ভারতের লোকসংস্কৃতির প্রতিনিধিত্ব করতে তাঁরা অংশ নিচ্ছেন আন্তর্জাতিক সংস্কৃতি উৎসবে। এই প্রথম ‘নাটুয়া’ নৃত্য শিল্পী হয়ে ডাক এসেছে। ও সেই গর্বের অংশীদার বলরামপুরের পাঁড়দ্দা গ্রামের শিল্পীরা।

চার শিল্পী—জগন্নাথ কালিন্দী, নৃপেন কালিন্দী, শিকার মাহাতো এবং বৈদ্যনাথ মাহাতো—বলরামপুর ব্লকের বিভিন্ন গ্রামের বাসিন্দা। জগন্নাথ ও নৃপেনের বাড়ি পাঁড়দ্দা গ্রামে, শিকার মাহাতো বেলা গ্রামের, আর বৈদ্যনাথ মাহাতোর বাড়ি জবলা গ্রামে।
জগন্নাথ কালিন্দী বলেন, “ছৌ নাচ নিয়ে আগেও বিদেশে গেছি—অস্ট্রেলিয়া, লন্ডন, বাংলাদেশ-সহ অনেক দেশে। কিন্তু ‘নাটুয়া’ নাচ নিয়ে এই প্রথম বিদেশ যাচ্ছি। খুবই গর্ব হচ্ছে। এটা আমাদের পরিবারের ঐতিহ্য। আমার দাদা প্রয়াত হাঁড়িরাম কালিন্দী নাটুয়া প্রখ্যাত নৃত্য শিল্পী। আমার দাদুও এই নাচের শিল্পী ছিলেন। ছোট থেকেই তাদের দেখে বড় হয়েছি।”

নাটুয়া পুরুলিয়ার এক জনপ্রিয় লোকনৃত্য। একদিকে যেমন গান, তেমনি থাকে নাচ ও নাটকের উপাদান। মূলত দলগতভাবে এই নাচ পরিবেশন করা হয়। বিভিন্ন সামাজিক বিষয়, ধর্মীয় কাহিনি ও রামায়ণ-মহাভারতের গল্প নিয়েই হয় নাচ।
দেবী পক্ষে ৪ জন শিল্পী যাত্রা শুরু করেন বলরামপুর থেকে। বাসে কলকাতা, সেখান থেকে দিল্লি, তারপর বিমানে জাপান। ২৯ সেপ্টেম্বর থেকে ৪ অক্টোবর এই আন্তর্জাতিক উৎসব।

ভারত সরকারের লোক সংস্কৃতি বিভাগ এই অনুষ্ঠানে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মোট ২৫ জন শিল্পীকে বেছে নিয়েছে। পশ্চিমবঙ্গ থেকে নির্বাচিত হয়েছেন শুধুমাত্র বলরামপুরের এই চার শিল্পী। এই সফরের আর একটি দিক উল্লেখযোগ্য। জাপানের টোকিও শহরের এক দুর্গাপুজোর মণ্ডপে তাঁরা পরিবেশন করবেন পুরুলিয়ার ঐতিহ্যবাহী এই নাচ। বিদেশের মাটিতে দুর্গাপুজোর সঙ্গে জড়িয়ে পড়বে বাংলার লোকসংস্কৃতি।

শিকার মাহাতো জানান, “আমরা অনেক কষ্ট করে এই জায়গায় পৌঁছেছি। গ্রামে নানা সমস্যা, অভাবের মধ্যেও নাচ বন্ধ করিনি। আজ এই আন্তর্জাতিক মঞ্চে পৌঁছতে পেরে খুব আনন্দ হচ্ছে।”

গ্রামের সাধারণ পরিবারের সন্তান তাঁরা। ছোট থেকে অভাব, অনুশীলনের জায়গার সংকট , মঞ্চে সুযোগ না পাওয়ার মতো নানা সমস্যার মধ্যে দিয়েই এগিয়ে চলেছেন। তবু থেমে থাকেননি।

টোকিওর এই অনুষ্ঠানে অংশ নেবে বিশ্বের বহু দেশের শিল্পীরা। সেই মঞ্চে বাংলার ঐতিহ্য তুলে ধরবেন বলরামপুরের এই চার সন্তান। তাঁদের হাত ধরে বিশ্বের সামনে নতুনভাবে আত্মপ্রকাশ ঘটবে পুরুলিয়ার লোকনৃত্যের।

Post Comment