নিজস্ব প্রতিনিধি , পুরুলিয়া :
টানা দু’বছর আমন ধানের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়নি। স্বাভাবিকের চেয়েও বেশি বৃষ্টিপাত হলেও আমন ধান চাষে মার খেয়েছে পুরুলিয়া জেলা। তাই চলতি বছরে কিছুটা ‘রক্ষণাত্মক খেলায়’ নামল কৃষি দপ্তর। আমনের লক্ষ্য কমিয়ে এবার রাখা হয়েছে ৩ লক্ষ ৪৫ হাজার হেক্টর। তবে উৎপাদন বাড়াতে জেলার ১৩ হাজার ২৯২ হেক্টর জমিতে বীজ বিতরণ শুরু করেছে প্রশাসন।
কৃষি দপ্তর সূত্রের খবর, ২০২৩ সালে ৩ লক্ষ ৪৮ হাজার হেক্টরের লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও চাষ হয়েছিল মাত্র ২ লক্ষ হেক্টরে। ২০২৪ সালে বৃষ্টি বেশি হলেও উৎপাদন দাঁড়িয়েছিল ৩ লক্ষ ২৮ হাজার হেক্টরে। সেই কারণেই এই বছর টার্গেট কিছুটা কমানো হয়েছে।
তবে ক্ষতির আশঙ্কায় বসে নেই দপ্তর। বরং ‘ডেমো প্লট’ তৈরিতে জোর দেওয়া হয়েছে এবার। চলতি খরিফ মরশুমে আমন ছাড়াও ভুট্টা, বাদাম, ডাল, রাগি ও কালো কলাই মিলিয়ে মোট ১৩,২৯২ হেক্টর জমিতে প্রদর্শনী ক্ষেত্র গড়া হচ্ছে। জেলা উপ-কৃষি অধিকর্তা (প্রশাসন) আদিত্য দুয়ারী জানিয়েছেন, “চাষিদের আরও বেশি পরিমাণে আধুনিক কৃষি পদ্ধতির সঙ্গে যুক্ত করতেই এই উদ্যোগ। প্রদর্শনী জমিতে ফলন ভালো হলে, অন্য চাষিরাও উৎসাহ পাবেন।”
সেচ ব্যবস্থা আগের থেকে উন্নত হলেও, বৃষ্টির উপর নির্ভরতা এখানকার কৃষিতে এখনও প্রবল। জেলা কৃষি দফতরের পরিসংখ্যান বলছে, ২০২৩ সালে ১৩০৮.৬ মিলিমিটার, আর ২০২৪ সালে ১৫৮৬.২৫ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছিল। চলতি বছরে ১৫ জুন পর্যন্ত হয়েছে ৩০৭.০৭ মিলিমিটার। টার্গেট পূরণ হবে কি না, তা নিয়ে এখন থেকেই চিন্তিত দপ্তর।
এছাড়া চলতি বছরে খরিফে—
◾২,৭৩২ হেক্টর জমিতে আমনের বীজ
◾৪,৩৫০ হেক্টরে হাইব্রিড ভুট্টা
◾১,৫২০ হেক্টরে বাদাম
◾২,২৪০ হেক্টরে অড়হর ডাল
◾৪৫০ হেক্টরে রাগি
◾২,০০০ হেক্টরে কালো কলাই -এর বীজ দেওয়া হবে।
রবি মরশুমের জন্যও প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। খেসারি, মসুর, ছোলা, সরষে ও তিলে ৭৯০০ হেক্টর জমিতে বীজ দেওয়া হবে। রাষ্ট্রীয় কৃষি বিকাশ যোজনা, স্টেট ডেভেলপমেন্ট স্কিম ও ন্যাশনাল ফুড সিকিউরিটি মিশনের মাধ্যমে বীজ বিতরণ চলছে।
বৃষ্টিপাত ও টার্গেটের খতিয়ান (সূত্র: পুরুলিয়া কৃষি দপ্তর):
২০২৩:
লক্ষ্যমাত্রা – ৩.৪৮ লক্ষ হেক্টর |
চাষ – ২ লক্ষ হেক্টর |
বৃষ্টি – ১৩০৮.৬ মিমি
২০২৪:
লক্ষ্যমাত্রা – ৩.৪৮ লক্ষ হেক্টর |
চাষ – ৩.২৮ লক্ষ হেক্টর |
বৃষ্টি – ১৫৮৬.২৫ মিমি
২০২৫: লক্ষ্যমাত্রা – ৩.৪৫ লক্ষ হেক্টর | ১৫ জুন পর্যন্ত বৃষ্টি – ৩০৭.০৭ মিমি
চাষিরা যাতে ক্ষতির মুখে না পড়েন, তাই আগেভাগেই প্রদর্শনী ক্ষেত্র ও বীমা প্রকল্পের প্রস্তুতি জোরদার করেছে প্রশাসন। এখন দেখার, আকাশের মুখ কেমন থাকে।
Post Comment