নিজস্ব প্রতিনিধি, রঘুনাথপুর :
একসময় দামোদরের বুকেই ছিল কোলাহলপূর্ণ নদীবন্দর। নবম থেকে একাদশ শতাব্দী পর্যন্ত তেলকূপি অঞ্চলের তৈলকম্প নদী বন্দর জুড়ে ব্যবসা-বাণিজ্যের সমৃদ্ধ ইতিহাস। তাম্রলিপ্তের সঙ্গে ছিলো নৌ–যোগাযোগ। এখান থেকে তামা, আকরিক ও তৈলবীজ রপ্তানি হতো বিদেশে। ইতিহাস বলছে, একসময় এলাকায় ছিলো ২৬টি দেউল। আজ একের পর এক দামোদরের গর্ভে হারিয়ে গিয়ে তিনটিই টিকে আছে। বর্তমানে এই এলাকা পর্যটন ক্ষেত্র হিসেবে গুরুত্ব পেয়েছে। কিন্তু দুর্ভাগ্য! বেহাল রাস্তার জেরে সেই ঐতিহ্যবাহী তেলকূপি পর্যটন আজ ধুঁকছে। বারুনী ঘাটে যাওয়ার রাস্তা সংস্কার না হওয়ায় পর্যটকরা যেতে পারছেন না। স্থানীয়দের অভিযোগ, রাজনীতি দ্বন্দ্বের জেরে তেলকূপির উন্নয়ন আটকে রয়েছে।
বড়রা গ্রাম পঞ্চায়েতের বিজেপির উপপ্রধান পরমেশ্বর বাউরির অভিযোগ,”এলাকার রাস্তাঘাটের করুণ দশা নিয়ে আমরা বারবার প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছি। কিন্তু তৃণমূল পরিচালিত রঘুনাথপুর পঞ্চায়েত সমিতি কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।” সেই কারণেই কি বিপুল পর্যটনের সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও অবহেলিত তেলকূপি? উঠছে প্রশ্ন।
এলাকার রাজনৈতিক পরিস্থিতি গোলমেলে। পঞ্চায়েত প্রধান রানু মাহাতো নির্দল হিসেবে জয়লাভ করে পরে বিজেপিতে যোগ দেন। এদিকে জামুয়াডি সংসদে তৃণমূল কংগ্রেসের সদস্য মহারানী হেমব্রম অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, “রাস্তাটির বিষয়ে বারে বারে বলা হয়েছে পঞ্চায়েতে। কোন কাজ হয়নি। “
স্থানীয় বাসিন্দা জিতেন মুর্মু ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “রাস্তা এতটাই খারাপ যে বাইক বা গাড়ি নিয়ে যাওয়া যায় না। রোগীকে খাটিয়ায় শুইয়ে কাঁধে চাপিয়ে নিয়ে যেতে হয়। “
অভিযোগ উঠছে পঞ্চায়েত বিজেপি পরিচালিত বলে রঘুনাথপুর ব্লক প্রশাসন ও রঘুনাথপুর–২ নং ব্লকের পঞ্চায়েত সমিতিও বিষয়টিতে উদাসীন।
রাজনৈতিক তরজার ফলে বেহাল রাস্তা সংস্কার আটকে থাকায় মার খাচ্ছে ঐতিহাসিক তেলকূপি পর্যটন। দামোদরের তীরে হাজার বছরের ইতিহাসের সাক্ষী এই অঞ্চল—যেখানে একসময় নদী বন্দরে ছিল
জমজমাট পরিবেশ। আজ সেখানে নীরবতা। স্থানীয়দের আশা, রাজনীতি সরিয়ে রেখে পর্যটনের স্বার্থে দ্রুত ব্যবস্থা নেবে প্রশাসন।
Post Comment