সুজয় দত্ত, বলরামপুর :
⚠️ বলরামপুর এখন ‘দুর্ঘটনাপুর’: আতঙ্কের ৫ কিমি
- চলতি বছরের প্রথম ৬ মাসে বলরামপুর কলেজ মোড় থেকে উরমা প্রাথমিক বিদ্যালয় এই ৫ কিমি পথে ৪৩টি দুর্ঘটনা। ৪০ দুর্ঘটনা নথিবদ্ধ নয় । ৩টি নথিবদ্ধ।
- অভিযোগ রাস্তাটির দুই ধারে ঢালু এবং একাধিক বাঁক থাকায় প্রায়শই নিয়ন্ত্রণ হারাচ্ছে গাড়ি।
- দুর্ঘটনা প্রবণ অঞ্চল হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে নামশোল প্রাথমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন বাঁক।
🚨 ভোরের বৃষ্টিভেজা রাস্তা: বরযাত্রী গাড়ির মুখোমুখি সংঘর্ষ
- সময়: শুক্রবার সকাল ৬:৪৫
- স্থান: নামশোল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বাঁক, ১৮ নম্বর জাতীয় সড়ক
- দুর্ঘটনা: বরযাত্রী বোঝাই ছোট গাড়ির সঙ্গে ১২ চাকার লরির মুখোমুখি সংঘর্ষ
- মৃত্যু: ঘটনাস্থলেই ৯ জন নিহত
- পরিস্থিতি: দুর্ঘটনার পর দীর্ঘ যানজট; পুলিশের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে
🧑⚕️ নিহতদের পরিচয় (সবাই ঝাড়খণ্ডের সরাইকেলা-খরসোওয়া জেলার বাসিন্দা):
- চিত্তরঞ্জন মাহাতো (২৪): গাড়ির চালক, বাড়ি মুরু গ্রাম, নিমডি থানা
- চন্দ্রমোহন মাহাতো (৫০): কৃষিজীবী, বাড়ি রঘুনাথপুর, নিমডি থানা
- কৃষ্ণপদ মাহাতো (৩৬): কৃষিজীবী, বাড়ি তিলাইটাড়
- গুরুপদ মাহাতো (৩১): কৃষিজীবী, বাড়ি তিলাইটাড়
- বিজয় মাহাতো (৪৮): সবজি ব্যবসায়ী, বাড়ি তিলাইটাড়
- অজয় মাহাতো (৪২): কৃষিকাজের পাশাপাশি ইটভাটার ব্যবসায়ী, বাড়ি তিলাইটাড়
- বৃহস্পতি মাহাতো (৪৫): কৃষিজীবী ও দুর্ঘটনাগ্রস্ত ছোট গাড়ির মালিক, বাড়ি তিলাইটাড়
- স্বপন মাহাতো (২৭): টেন্ট হাউসের ব্যবসা, বাড়ি তিলাইটাড়
- শশাঙ্কশেখর মাহাতো (৩০): হোম গার্ড, বাড়ি তিলাইটাড়
- উল্লেখ্য, অজয় ও বিজয় দুই ভাই এবং বৃহস্পতি ও স্বপন কাকা-ভাইপো।
- এঁদের মধ্যে বেশিরভাগই সাধারণ চাষি পরিবার থেকে উঠে আসা। অজয়ের ছিল একটি ছোট ইটভাটা, আর বৃহস্পতির মালিকানাতেই ছিল দুর্ঘটনাগ্রস্ত ছোট গাড়িটি।
🔍 দুর্ঘটনার কারণ (প্রাথমিক তদন্ত অনুযায়ী):
- বরযাত্রী গাড়িটি বলরামপুরের আদাবনা থেকে ঝাড়খণ্ডের নিমডি ফিরছিল।
- প্রথমে একটি ট্রাককে ধাক্কা মারে, পরে উল্টো দিক থেকে আসা ১২ চাকার লরির সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষ।
- চালকের ঘুমিয়ে পড়া বা দৃশ্যমানতা কমে যাওয়া অন্যতম কারণ বলে সন্দেহ।
- নিয়ন্ত্রণ হারানো লরিটি রাস্তার পাশে চাষের জমিতে উল্টে যায়।
🌧️ বৃষ্টি ও রাস্তাঘাটের দুরবস্থা
- মুষলধারে বৃষ্টির কারণে রাস্তার বাঁকে দৃশ্যমানতা অত্যন্ত কম।
- জাতীয় সড়কের বাঁকে স্পিড লিমিট বোর্ড, সতর্কতামূলক সংকেত বা রিফ্লেক্টর অনুপস্থিত।
- স্থানীয়রা বলছেন, রাস্তার গঠনগত সমস্যা ও নজরদারির অভাবই বারবার দুর্ঘটনার কারণ।
🧟♂️ ভূতের আতঙ্কে গ্রাস: জাতীয় সড়কে ‘অতৃপ্ত আত্মার’ আতঙ্ক
- দুর্ঘটনা বারবার ঘটায় স্থানীয়দের মধ্যে ‘ভূতের ভয়’ প্রবল হয়ে উঠেছে।
- অনেকেই বলছেন, রাতে সাদা ছায়া, গাড়ির সামনে আচমকা মানুষের মতো অবয়ব দেখা যাচ্ছে।
- বিশেষত নামশোল প্রাথমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন অঞ্চলকে ঘিরে ‘অতৃপ্ত আত্মাদের আনাগোনা’ নিয়ে জনশ্রুতি ছড়িয়েছে।
- রাস্তাটি এখন ‘অভিশপ্ত বাঁক’ নামেই পরিচিত।
🛕 কালী মন্দির প্রতিষ্ঠার দাবি:
- ভূতের আতঙ্ক রুখতে নামশোল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশে একটি কালী মন্দির প্রতিষ্ঠার দাবি উঠেছে।
- স্থানীয়দের বিশ্বাস, দেবীর শক্তিতে অশুভ শক্তির প্রভাব হ্রাস পাবে এবং দুর্ঘটনা কমবে।
🏥 উদ্ধার ও প্রশাসনিক ব্যবস্থা
- পুলিশ ও জেলা প্রশাসন দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছায়।
- মৃতদেহ উদ্ধার করে বাঁশগড় গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
- ময়নাতদন্তের পর পুলিশের তত্ত্বাবধানে অ্যাম্বুল্যান্স ও বাসে করে মৃতদেহ ও পরিবারের লোকজনদের পৌঁছে দেওয়া হয় ঝাড়খণ্ডের গ্রামে।
- মৃতদের আত্মীয়দের খাবারের বন্দোবস্ত করে পুলিশ।
💰 ক্ষতিপূরণ ও প্রশাসনিক প্রতিক্রিয়া
- রাজ্য সরকারের নির্দেশে ক্ষতিপূরণ প্রদানের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
- ঘটনাস্থলে যান জেলা পরিষদের সভাধিপতি নিবেদিতা মাহাতো।
- এসেছিলেন এলাকার প্রাক্তন বিধায়ক তথা রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী শান্তিরাম মাহাতো।
- পুলিশ সুপার অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, ফরেন্সিক টিম তদন্ত শুরু করেছে।
🕛 ৫ ঘণ্টার ব্যবধানে দ্বিতীয় দুর্ঘটনা
- দুপুর ১২টা নাগাদ, নামশোল ও ছোট উরমার মাঝখানে একটি ছোট গাড়ি রাস্তা থেকে পড়ে যায়।
- গাড়ির চালক গুরুতর আহত, যাত্রীরা অল্পের জন্য প্রাণে বাঁচেন।
- স্থানীয়দের মতে, উল্টো দিক থেকে আসা ট্রাক থেকে বাঁচতে গিয়ে নিয়ন্ত্রণ হারায় গাড়ি।
🕯️ শোকস্তব্ধ গ্রাম, বাতিল প্রীতিভোজ
- বর নবকুঞ্জ মাহাতোর বাড়িতে ঝাড়খণ্ডের ইছাগড়ে এদিন রাতে প্রীতিভোজ ছিলো। তা বাতিল করে নিয়মরক্ষা মাত্র হয়।
📣 জনগণের দাবি ও প্রশ্ন
- দুর্ঘটনা প্রবণ এলাকায় স্মার্ট সিগনাল, স্পিড ব্রেকার, সতর্কতামূলক বোর্ড স্থাপন
- সিসিটিভি ও ট্রাফিক নজরদারির ব্যবস্থা
- সড়ক সংস্কার ও রাত্রিকালীন আলো বসানো
বলরামপুরের এই ৫ কিমি রাস্তা এখন শুধুই জাতীয় সড়ক নয়—এ যেন এক মরণফাঁদ। গত বুধবার জাতীয় সড়কের ওই প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশেই একটি মোটর বাইকের সঙ্গে পিকআপ ভ্যানের
সংঘর্ষে ওই বাইক চালক মারা যান। জখম হন বাইক আরোহী। বারবার মৃত্যুর মিছিল, ভয় আর ভূতের গল্পে আচ্ছন্ন এই রাস্তার পাশে এখন সবাই চাইছেন শুধু একটাই জিনিস—নিরাপত্তা, শান্তি আর পরিত্রাণ।
Post Comment