নিজস্ব প্রতিনিধি , পাড়া :
চাপুড়ি গ্রামের মাটিতে আজও শুকোয়নি রক্ত। সোমবার রাতে ‘ডাইনি’ অপবাদে পদবী টুডু নামে এক আদিবাসী গৃহবধূর নৃশংস হত্যার পর গোটা পুরুলিয়া কেঁপে উঠেছে। তিনদিন কেটে গেলেও গ্রামের বাতাসে এখনও ভাসছে আতঙ্ক, অসহায় কান্না আর ক্ষোভের গন্ধ।
এই ভয়াবহ ঘটনার প্রতিবাদে বুধবার চাপুড়ি পৌঁছালেন বিজ্ঞানমনস্ক সংগঠন ‘ব্রেকথ্রু সায়েন্স সোসাইটি’-র পুরুলিয়া জেলা শাখার প্রতিনিধি দল। পরিবারের সদস্যদের পাশে দাঁড়িয়ে তাঁরা জানালেন, ‘‘এই আধুনিক যুগে কুসংস্কারের বশে এক মহিলাকে খুন করা সভ্য সমাজের পক্ষে লজ্জাজনক।’’
সংগঠনের পক্ষে জেলা সম্পাদক স্বদেশপ্রিয় মাহাত, চিকিৎসক ডা. বুবাই মণ্ডল, বিপিন মাঝি, কৃষ্ণপদ মাহাত, শেখ নাদিম-সহ অন্যান্যরা নিহতের পরিবারের সঙ্গে দেখা করেন। পরে তাঁরা পাড়া থানার ওসি-র কাছে স্মারকলিপি জমা দেন। তাঁদের দাবি, এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত সব অভিযুক্তের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি, পরিবারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, আর্থিক সাহায্য দেওয়া এবং যিনি এই কুসংস্কারের আগুনে ঘি ঢেলেছেন সেই ওঝার বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে।
স্বদেশপ্রিয় মাহাত বলেন, ‘‘আজও মানুষ যখন ডাইনি খোঁজে, তখন বুঝতে হবে বিজ্ঞানমনস্ক চিন্তা ও শিক্ষার প্রসার কতখানি জরুরি। পদবী টুডুর মৃত্যু যেন সমাজের চোখ খুলে দেয়। আমরা শুধু প্রতিবাদ করেই থামব না, ওই এলাকায় বিজ্ঞানচেতনা ছড়াতে ধারাবাহিক কর্মসূচি নেব।’’
প্রসঙ্গত, সোমবার রাত প্রায় ন’টা নাগাদ চাপুড়ি গ্রামের এই ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়ায়। অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরেই পদবী টুডুকে ‘ডাইনি’ বলে অপবাদ দেওয়া হত। পারিবারিক অশান্তির জেরে সেদিন রাতে তাঁর উপর চড়াও হয় শ্বশুরবাড়ির লোকজন। প্রথমে বচসা, তারপর নির্মম প্রহার। ধারালো অস্ত্র ও লোহার রডে আঘাতে রক্তাক্ত অবস্থায় মাটিতে লুটিয়ে পড়েন পদবী। ঘটনাস্থলেই তাঁর মৃত্যু হয়।
পাড়া থানার পুলিশ তড়িঘড়ি ঘটনাস্থলে পৌঁছে দেহ উদ্ধার করে রঘুনাথপুর সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে পাঠায়। পরে খুনের মামলা রুজু করে পুলিশ মোট ছ’জনকে গ্রেফতার করে—যার মধ্যে দুই মহিলা রয়েছেন। মঙ্গলবার তাঁদের রঘুনাথপুর আদালতে তোলা হয়।
নিহতের স্বামী সুভাষ টুডু বলেন, ‘‘বছরের পর বছর আমার স্ত্রীকে ডাইনি বলে অপমান করা হয়েছে। সোমবার রাতে শ্বশুরবাড়ির লোকজন মিলে মেরে ফেলল তাঁকে।’’ মেয়েও নিজের চোখে দেখেছে মায়ের শেষ দৃশ্য। কান্নাজড়ানো গলায় ঊষারানি টুডু বলল, ‘‘মা অনেকদিন ধরে নির্যাতিত হচ্ছিলেন। সেদিন আমি নিজের চোখে দেখেছি ওরা কীভাবে মাকে মেরে ফেলল। দোষীদের কড়া শাস্তি চাই।’’










Post Comment