নিজস্ব সংবাদদাতা, বলরামপুর:
জাপানের ওসাকার মঞ্চে নাটুয়ার তালে উঠল গর্বের ঢেউ—বলরামপুর থেকে শুরু হল এক নতুন জয়যাত্রা।
দুই দেশের সংস্কৃতির সেতুবন্ধনে গর্বের নতুন অধ্যায় রচনা করলেন পুরুলিয়ার বলরামপুরের পাঁড়দ্দা গ্রামের চার নাটুয়া শিল্পী। পাঁচ হাজার কিলোমিটার দূরে জাপানের ওসাকা শহরে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক সাংস্কৃতিক উৎসব ওয়ার্ল্ড এক্সপো ২০২৫-এ নাটুয়া নাচ পরিবেশন করে বিশ্বমঞ্চে নজর কাড়লেন তাঁরা।
এই প্রথম সরকারি উদ্যোগে বিদেশের মাটিতে প্রদর্শিত হল বাংলার ঐতিহ্যবাহী বীরত্বগাথা ‘নাটুয়া’ নৃত্য। শিল্পী জগন্নাথ কালিন্দী, নৃপেন কালিন্দী, শিকার মাহাতো ও বৈদ্যনাথ মাহাতো—এই চারজনের দলটি ভারতের প্রতিনিধি হিসেবে পশ্চিমবঙ্গ থেকে অনুষ্ঠানে যোগ দেন।
২৯ সেপ্টেম্বর থেকে ৪ অক্টোবর পর্যন্ত চলা এই বিশ্বমেলায় অংশ নেয় ১৬৮টি দেশ। রঙিন সাজে নানা দেশের সাংস্কৃতিক পরিবেশনার ভিড়ে নাটুয়ার বীরত্ব, ছন্দ ও মাটির টানে ভর করা নাচ এক অনন্য মাত্রা এনে দেয়। বিদেশি দর্শকেরা ছৌ নাচের সঙ্গে নাটুয়ার মিল টানলেও, এর ভিতরে লুকিয়ে থাকা শক্তি, আবেগ ও স্থানীয় ঐতিহ্যের প্রকাশে তাঁরা মুগ্ধ হয়ে যান।
শিল্পী জগন্নাথ কালিন্দীর কথায়, “অনেকেই নাটুয়া নাচ চিনতেন না। প্রথমে অনেকে ছৌ বলে ভুল করছিলেন। কিন্তু যখন দেখলেন এই নাচের মধ্যে কত বীরত্ব, কত আবেগ—তখন সবাই অবাক হয়ে যান। অস্ট্রেলিয়া, রাশিয়া, নেপালসহ অন্তত ১৪টি দেশের প্রতিনিধি নাটুয়া নিয়ে আগ্রহ দেখিয়েছেন। বলেছেন আমাদের নিয়ে যাবেন তাদের ওখানে।”
মঙ্গলবার দেশে ফিরে গ্রামে পা রাখতেই বাজনা, মালা, উল্লাসে তাঁদের বরণ করেন গ্রামবাসীরা। আবেগে ভেসে ওঠে গোটা পাঁড়দ্দা গ্রাম। ফিরে এসে শিল্পীরা প্রখ্যাত প্রয়াত নাটুয়া শিল্পী হাঁড়িরাম কালিন্দির আবক্ষ মূর্তিতে মাল্যদান করে শ্রদ্ধা জানান।
বৈদ্যনাথ মাহাতো বলেন, “বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব দুর্গাপুজোর সময় জাপানে গিয়ে দেশের প্রতিনিধিত্ব করতে পেরে আমরা গর্বিত। চাই, আগামী দিনে আরও অনেক নাটুয়া শিল্পী এভাবেই বিশ্বমঞ্চে নিজের প্রতিভা দেখাক।”
তাঁদের সাফল্যে আপ্লুত পরিবার, পাড়া-প্রতিবেশী ও গোটা বলরামপুর। গ্রামের মানুষের মুখে একটাই কথা—“আমাদের ছেলেরা প্রমাণ করে দিয়েছে, ছোট গ্রাম থেকে উঠে এসেও বিশ্বজয় সম্ভব।”
Post Comment