সুইটি চন্দ্র, বাঘমুন্ডি :
মহা ভারতের বিশাল ভূখণ্ডে দুর্গাপূজার বাজারে চ্যাম্পিয়ন চড়িদা। বিশ্বে মুখোশ গ্রাম নামে পরিচিত বাঘমুন্ডির এই ছোট্ট জনপদে পুজো উপলক্ষে লাখ লাখ টাকার ব্যবসা শুধুমাত্র মুখোশ বেচেই। দিল্লি থেকে কলকাতা, চাকদা থেকে জোকা—দেশ জুড়ে দুর্গাপুজোর মণ্ডপ সাজাতে পাড়ি দিয়েছে চড়িদার ছৌ মুখোশ।
আগস্টের গোড়া থেকেই ঘুম নেই মুখোশ শিল্পীদের চোখে। বাঁশ, কাগজ, মাটি, রঙ—এই কয়েকটি উপাদানেই যেন মিশে আছে শিল্পীদের প্রাণ। জগদীশ সূত্রধর ও সোমু সূত্রধর এই দুই পিতাপুত্র এ বার প্রায় তিন লক্ষ টাকার বরাত সামলাচ্ছেন। এর মধ্যে নতুন দিল্লির একটি বড় পুজো মণ্ডপের জন্য ইতিমধ্যেই পাঠিয়ে দিয়েছেন দুর্গা, গণেশ, ব্রহ্মা, বিষ্ণু, হনুমান, মহিষাসুর ও বাঘের মুখোশ। সব ক’টাই ছৌ মুখোশের ছাঁচে তৈরি। সোমুর গলায় গর্ব, ‘‘দিল্লি পৌঁছে গেছে এক লক্ষ টাকার বরাত। সামনে কলকাতা, শহরতলি আর চাকদা মিলিয়ে আরও দু’ লক্ষ টাকার কাজ বাকি।’’
সবচেয়ে বড় অর্ডার এসেছে জোকা থেকে। সেখানে ৩৪টি পেল্লাই সাইজের দুর্গার মুখোশ, সঙ্গে নবদুর্গা, রাবণ, বিভীষণ, সুগ্রীব, কৃষ্ণ, ব্রহ্মা, বিষ্ণু, শিব—পঞ্চাশেরও বেশি মুখোশ তৈরি হচ্ছে শুধু এক মণ্ডপের জন্য। ব্যস্ত সময়ের ফাঁকেই সোমু জানালেন, ‘‘গণেশ পুজোর পরই এই মুখোশগুলো নিয়ে যাবেন থিম আর্টিস্টরা।’’ শুধু সাজানো নয়, এ বার জোকার আবাসনের পুজো কমিটি তাঁদের জন্য আলাদা স্টলের ব্যবস্থা করেছে। মানে, মণ্ডপে দর্শনার্থীরা যেমন মুখোশ দেখে মুগ্ধ হবেন, তেমনই চাইলে কিনতেও পারবেন।
থিম আর্টিস্টরাও ভরসা রাখছেন চড়িদার উপর। কালীঘাটের দেবাশিস মজুমদার বললেন, ‘‘আমাদের মণ্ডপে এ বার ছৌ মুখোশেই সাজছে দুর্গা। প্রচুর অর্ডার দিয়েছি চড়িদায়।’’ নদিয়ার চাকদহে পুজো সাজাচ্ছেন মানস মণ্ডল। তাঁর কথায়, ‘‘মহালয়ার আগে মুখোশ নিয়ে আসব। আমাদের মণ্ডপে গ্রাম্য ছৌ শিল্পের ছোঁয়া থাকবে।’’
এখানকার শিল্পীরা এখন সিনেমা জগতেও পা রেখেছেন। দক্ষিণী ছবির শুটিংয়ে ব্যবহারের জন্য গিয়েছে চড়িদার মুখোশ। কলকাতার বাগুইআটির মণ্ডপের জন্য ফাল্গুনী সূত্রধর ও ত্রিগুণী সূত্রধর ইতিমধ্যেই দু’লক্ষ টাকার অর্ডার সামলেছেন। তাঁদের বানানো দুর্গা ও সপরিবারের মুখোশ পৌঁছে গেছে ঠিক সময়ে।
মহিষাসুর থেকে হনুমান, দুর্গা থেকে কৃষ্ণ—পুজোর মরসুমে একনাগাড়ে কাজ চলছে গ্রামে। আর পর্যটকদের চাহিদাও কম নয়। অযোধ্যা পাহাড়ের পাদদেশে দাঁড়িয়ে থাকা এই মুখোশ গ্রাম তাই শুধু লোকশিল্পের ঐতিহ্যই বহন করছে না, আজ মহা ভারতের দুর্গাপুজোর বাজারে নিজের জায়গা পাকা করেছে ‘চ্যাম্পিয়ন চড়িদা’।
Post Comment