insta logo
Loading ...
×

চাকরি নেই, যোগি রাজ্য থেকে দিদির রাজ্যে এসএসসি-তে বসতে হাজির বিপুল সংখ্যক পরীক্ষার্থী

চাকরি নেই, যোগি রাজ্য থেকে দিদির রাজ্যে এসএসসি-তে বসতে হাজির বিপুল সংখ্যক পরীক্ষার্থী

নিজস্ব প্রতিনিধি,পুরুলিয়া:

রাজ্যজুড়ে স্কুল সার্ভিস কমিশনের নিয়োগ পরীক্ষা ঘিরে রবিবার ছিল নজিরবিহীন নিরাপত্তা। সকাল থেকেই জেলার বিভিন্ন কেন্দ্রে ভিড় জমাতে থাকেন পরীক্ষার্থীরা। পুরুলিয়া জেলায় এবার মোট ১২ হাজার ৩১৬ জন পরীক্ষার্থী অংশ নিয়েছেন। জেলার ২৭টি পরীক্ষাকেন্দ্রে সকাল ১০টা থেকে প্রবেশ প্রক্রিয়া শুরু হয়। পরীক্ষার্থীদের প্রবেশের আগে সমস্ত নথি যাচাই করা হয়। মেটাল ডিটেক্টর দিয়ে পরীক্ষা ও সিসি ক্যামেরায় নজরদারির ব্যবস্থা রাখা হয়েছিল। প্রতিটি কেন্দ্রে গড়ে তোলা হয়েছিল কড়া পুলিশি নিরাপত্তা বলয়।

সবচেয়ে নজরকাড়া বিষয়, উত্তরপ্রদেশ, ঝাড়খণ্ড ও বিহার থেকেও বিপুল সংখ্যক পরীক্ষার্থী পরীক্ষায় বসতে পুরুলিয়ায় উপস্থিত হয়েছিলেন। উত্তরপ্রদেশের পরীক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, তাঁদের রাজ্যে ক্রমশ বাড়ছে বেকারত্ব। ফলে ভিনরাজ্যে চাকরির সুযোগ খুঁজতে আসতেই হচ্ছে।

উত্তরপ্রদেশের গাজীপুর থেকে আসা প্রবীর কুমার বলেন, “আমাদের রাজ্যে চাকরির সুযোগ নেই। তাই পশ্চিমবঙ্গে পরীক্ষা দিতে এসেছি। আশা করি এখানে পরীক্ষা সুষ্ঠুভাবে হবে।”

আজমগড়ের পরীক্ষার্থী আলোক তেওয়ারির বলেন, “বাংলায় আমরা ভরসা নিয়ে পরীক্ষা দিতে এসেছি। আগের মতো আর দুর্নীতি যেন না হয়, এটাই প্রত্যাশা।”

উত্তরপ্রদেশের প্রয়াগরাজ জেলার প্রতাপগড় থেকে পুরুলিয়ার জয়পুরে। এত দূর এসেছিলেন শুধু পরীক্ষার টানে। রবিবার জয়পুর আর বি বি হাইস্কুলের কেন্দ্রে এসএসসি পরীক্ষায় ভূগোল বিষয়ে পরীক্ষা দিতে বসেছিলেন সচিন তিওয়ারি। পরীক্ষার শেষে হাসতে হাসতেই বললেন, ‘‘নোটিফিকেশন দেখে চলে এসেছিলাম। হোক না এতদূর, দেশের বাইরে তো নয়। চাকরি পেলে খুশি হবই। নিয়োগ দুর্নীতির কথা আগেই শুনেছি। এ বারও হবে কি না জানি না। যেটা আমার হাতে নেই, সে বিষয়ে কী করেই বা মন্তব্য করব?’’

একই কেন্দ্রে পরীক্ষা দিতে হাজির হয়েছিলেন ঝাড়খণ্ডের হাজারিবাগের অজয় রানা। তাঁরও বিষয় ভূগোল। অভিযোগের সুরে বললেন, ‘‘আবেদন করার সময়ে পরীক্ষার মাধ্যম হিসেবে হিন্দি চিহ্নিত করেছিলাম। অথচ প্রশ্নপত্র এসেছে বাংলা আর ইংরেজিতে। ভীষণ সমস্যায় পড়েছিলাম।’’

অন্যদিকে, জেলার স্থানীয় পরীক্ষার্থী হরি কুইরি বলেন, “অতীতের দুর্নীতি নিয়ে আর ভাবতে চাই না। এবার আমরা সরকারের উপর ভরসা রেখেই পরীক্ষায় বসেছি। আশা করি স্বচ্ছ নিয়োগ হবে।”
তবে বুধেশ্বর মাহাতোর মত, “আমরা দেখেছি রাজ্যে ২৬ শিক্ষকের চাকরি বাতিল হয়েছে। তাই নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে সংশয় আছে। তবে প্রায় নয় বছর পর পরীক্ষার সুযোগ পেয়েছি। বেকারত্ব বাড়ছে, তাই আশা আর ভরসাতেই অংশ নিচ্ছি।”
প্রশাসনের দাবি, নজিরবিহীন নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে সুষ্ঠুভাবে চলেছে পরীক্ষা।

ঝালদায় পরীক্ষা শেষে ঝাড়খণ্ডের অমৃতা সিং ও অশোক কুমার জানালেন, ‘‘প্রশ্নপত্র মানসম্মত ছিল। পরীক্ষা ভালোই হয়েছে।’’ তাঁদের প্রত্যাশা, এবারের নিয়োগ প্রক্রিয়া স্বচ্ছ হবে। পাশাপাশি কৃতজ্ঞতাও প্রকাশ করলেন তাঁরা। বললেন, ‘‘উচ্চ আদালতের নির্দেশে আর রাজ্য সরকারের উদ্যোগে এ পরীক্ষার সুযোগ মিলেছে। এজন্য আমরা সত্যিই কৃতজ্ঞ।’’

দূরদূরান্ত থেকে পরীক্ষার্থীরা এসে ভিড় করেছিলেন পুরুলিয়ার প্রত্যন্ত স্কুল চত্বরে। কোথাও চাকরির স্বপ্ন, কোথাও আবার ভাষাগত জটিলতা। সব মিলিয়ে একের পর এক কেন্দ্র জুড়ে যেন নানা অভিজ্ঞতার ভাঁড়ার।

Post Comment