নিজস্ব প্রতিনিধি, পুরুলিয়া:
বৃষ্টির রাতে মাটির ঘর চাপা পড়ে মৃত্যু হয় তিন শবরের। গুরুতর জখম অবস্থায় হাসপাতাল চত্বরে লড়ছেন আরও তিনজন। এই ঘটনায় যখন গোটা জেলা স্তব্ধ, তখন প্রশাসনের সিদ্ধান্ত—জখমরা সুস্থ হলে তাদের ঠাঁই হবে স্কুলে। ঠিকানা, রমাইগোড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়। আর এই সিদ্ধান্ত ঘিরেই প্রশ্নের পাহাড়।
পুরুলিয়া ১ নম্বর ব্লকের ভাণ্ডারপুয়াড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের শালবাগান এলাকায় সোমবার রাতে মাটির বাড়ি ভেঙে মৃত্যু হয় তিন শবরের। তাঁদের সঙ্গেই বসবাসকারী আরও তিনজন গুরুতর জখম হন। তার পরেই প্রশ্ন উঠতে থাকে—এই পরিবারগুলোর জন্য এত বছরেও কেন পাকা বাড়ি জোটেনি?
সমাজমাধ্যমে ক্ষোভ উপচে পড়ছে। একাধিক পোস্টে প্রশ্ন, “শবরদের জন্য এত প্রকল্প, এত এনজিও, এত সরকারি দফতর—তারপরও কেন এখনও মাটির ঘর?”
এক পোস্টে লেখা, “নেতারা পাচ্ছেন কেন্দ্রের আবাস, আর আদিবাসীরা পাচ্ছেন স্কুলঘর?”
একটি মন্তব্যে তীর্যক কটাক্ষ—“উন্নয়ন এখনও জন্মই নেয়নি।”
জেলা প্রশাসনের তরফে অবশ্য সিদ্ধান্ত জানানো হয়েছে, আপাতত ওই তিন শবরকে রমাইগোড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এক মাসের জন্য রাখা হবে। খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থাও করা হবে স্থানীয় স্তরে।
পুরুলিয়া ১ নম্বর ব্লকের বিডিও মনোজকুমার মাইতি বলেন, “ওঁদের যাতে কোনও সমস্যা না হয়, সেটা দেখছি। স্থানীয় প্রধানের সঙ্গে সমন্বয় রেখে কাজ চলছে। পরে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষ যা নির্দেশ দেবে, সেই মতো ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
তবে এখানেই শেষ নয় প্রশ্নের তালিকা।
জানা গিয়েছে, জখম বৃদ্ধ দলুই শবরের নামে একটি ইন্দিরা আবাস প্রকল্প ছিল। কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে—পরিবারের অন্য সদস্যদের জন্য কী কিছু নেই? কীভাবে একটি পরিবারের একাধিক সদস্য এখনও কাঁচা বাড়িতে বসবাস করছিলেন?
বিষয়টি নিয়ে সরব বিরোধী রাজনৈতিক শিবিরও।
এক বিজেপি নেতার বক্তব্য, “প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার মাধ্যমে গোটা দেশে মাটির বাড়ি কার্যত অবলুপ্ত। অথচ পশ্চিমবঙ্গে এখনও মাটির ঘর চাপা পড়ে মৃত্যু হচ্ছে আদিবাসীদের। বিগত দশ বছরের প্রকৃত তালিকা প্রকাশ হলেই বোঝা যাবে—আসলে কারা পেয়েছেন আবাস, আর কারা বঞ্চিত থেকে গিয়েছেন।”
আপাতত শবরদের আশ্রয় স্কুলঘর। কিন্তু এক মাস পর? তাদের ভবিষ্যৎ কী?
প্রশাসনের কাছে উত্তর চায় জেলা। আর শবর পরিবারগুলো চায়—স্কুলঘর নয়, পাকাবাড়ি হোক তাদের ঠিকানা।











Post Comment