দেবীলাল মাহাতো, পুরুলিয়া:
করম পরবের আবহে শিক্ষক দিবসের প্রাক্কালে অধ্যাপক, পুরুলিয়ার ভূমিপুত্র সনৎকুমার মাহাতোকে রাজ্য সরকার শিক্ষারত্ন সম্মাননা প্রদান করায় খুশি জঙ্গলমহল। বুধবার আলিপুরের ধনধান্য স্টেডিয়ামে রাজ্যের উচ্চশিক্ষা বিভাগ এই সম্মাননা প্রদান করে। ছিলেন বিভাগীয় মন্ত্রী ব্রাত্য বসু। সিধো- কানহো-বিরসা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সনৎকুমার মাহাতোর
বিষয় গণিত হলেও কুড়মালি ভাষা ও সাহিত্যকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য তাঁর অবদান উল্লেখযোগ্য। তাঁর অধীনে গণিত বিষয়ে ৯ জন পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। বর্তমানে তিনজন গবেষক নথিভুক্ত আছেন। কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাজ্যের যে ২১ জন শিক্ষারত্ন সম্মাননা পান তাঁদের মধ্যে এই বিশ্ববিদ্যালয়েরই প্রাণিবিদ্যার অধ্যাপক বিপ্লবকুমার মোদক রয়েছেন। তাঁর বাড়ি কলকাতায়।

জঙ্গলমহল পুরুলিয়ার বাঘমুন্ডি ব্লকের সেরেঙডি গ্রাম পঞ্চায়েতের ভুরসু গ্রামে বাড়ি সনৎ বাবু-র। ঝালদার জারগো হাইস্কুল থেকে তিনি মাধ্যমিক পাশ করেন। উচ্চমাধ্যমিক পাশ করেন বান্দোয়ানের ডক্টর এ এন ঝাঁ হাইস্কুল থেকে। জগন্নাথ কিশোর মহাবিদ্যালয় থেকে তিনি গণিতে অনার্স ও স্নাতক হন। বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২০০৪ সালে এমএসসি সম্পূর্ণ করার পর পরবর্তীকালে পিএইচডি করেন। ২০০৬ সালে তিনি দার্জিলিং গভর্নমেন্ট কলেজের অধ্যাপক, ২০০৯-এ দুর্গাপুর গভর্নমেন্ট কলেজ, তারপর বাঁকুড়ার মেজিয়া গভর্নমেন্ট কলেজে আসেন ২০১৫ তে। সেখান থেকে ২০১৬ তে সিধো-কানহো-বিরসা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হন। তিনি এই বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের প্রাক্তন বিভাগীয় প্রধান। কুড়মালি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ছাড়াও কম্পিউটর সায়েন্সেও
বর্তমানে ওই পদে রয়েছেন।

৪৪ বছর বয়সী এই অধ্যাপক গণিত সেইসঙ্গে কুড়মালি ভাষায় বহু গবেষণাপত্র, প্রবন্ধ, গ্রন্থ, গ্রন্থ অধ্যায় এবং মনোগ্রাফ প্রকাশ করেন বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পত্রিকা ও প্রকাশনাতে। রাজ্যের তথ্য ও সংস্কৃতি বিভাগের আওতায় থাকা মানভূম কালচারাল একাডেমির সদস্য হয়ে তিনি পুরুলিয়ার ভাষা,সংস্কৃতি ও জনজাতি নিয়ে একাধিক প্রবন্ধ প্রকাশ করেন। গণিত বিষয়ের ৯৩ টি গবেষণা পত্র, ২ টি মনোগ্রাফ, ২ টি পুস্তক ও একটি সম্পাদিত পুস্তক প্রকাশ তাঁর উল্লেখযোগ্য দিক। কুড়মালি ভাষায় ২ টি পুস্তক, ২ টি সম্পাদিত পুস্তক ও বেশ কয়েকটি প্রবন্ধ প্রকাশ করেন। ক্যালকাটা ম্যাথামেটিক্যাল সোসাইটির এবং অপারেশন রিসার্চ সোসাইটির আজীবন সদস্য তিনি। ঝাড়গ্রামের সাধু রামচাঁদ মুর্মু বিশ্ববিদ্যালয়ের বোর্ড অফ স্টাডিজের তিনি চেয়ারম্যান। তাঁর কথায়, “এই সম্মাননা আরও ভালো কাজের উৎসাহ দেবে। কুড়মালি ভাষাকে আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে কাজ করে যাব। ”

তাঁর সহকর্মী এই বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের অধ্যাপক গোরাচাঁদ চক্রবর্তী বলেন, “ভীষণই আনন্দের খবর। যোগ্য মানুষ এই সম্মাননা পেলেন। আমরা গর্বিত। ” মানভূম কালচারাল আকাদেমির সভাপতি হংসেশ্বর মাহাত বলেন, “জেলার মানুষের কাছে খুবই আনন্দের খবর। গণিত সহ কুড়মালি বিভাগের ছাত্র- ছাত্রীদের জন্য আন্তরিক ভাবে কাজ করে চলছেন
সনৎ বাবু। তাছাড়া তিনি নিজেও একজন শিল্পী মানুষ। জেলার সংস্কৃতির প্রতি তাঁর নিবিড় টান। নিজেকে কখনও প্রচারের আলোয় আনেননি। তাঁকে শিক্ষারত্ন সম্মানের জন্য বেছে নেওয়ায় মুখ্যমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাই।”
Post Comment