নিজস্ব প্রতিনিধি ,পুরুলিয়া:
মাধ্যমিকের মেধা তালিকায় নেই পুরুলিয়া। ছ বছর পর ঘটল এমন হতাশা জনক ফল। শেষ ২০১৯ সালে মাধ্যমিকের মেধা তালিকায় ছিল না রুখামাটির এই জেলা। এবারও তেমনটাই ঘটল ছ বছর পর। কিছুটা হলেও হতাশ জেলার শিক্ষা মহল। রাজ্যে ১০ জনের মেধা তালিকায় রয়েছে ৬৬ জনের নাম। ঠাঁই পায়নি
জঙ্গলমহল পুরুলিয়া। হতাশা সাধারণ মানুষজনের মধ্যেও।
গত বছর পুরুলিয়া জেলা স্কুলের ছাত্র রাজ্যের মেধা তালিকায় দ্বিতীয় হয়েছিল। এমন সাফল্য অতীতে মাধ্যমিকে জেলায় ছিল না। কিন্তু এবার হতাশ জেলার এই নামকরা স্কুলগুলো। ২০২৩ সালে পুরুলিয়া রামকৃষ্ণ মিশন বিদ্যাপীঠের যে ৬ জন মেধাতালিকায় ছিল তার মধ্যে পঞ্চম স্থান দখল করেছিল ২ জন। ষষ্ঠ স্থান ২ জন, সপ্তম স্থান ১ জন, অষ্টম স্থান ১ জন।
২০২২ এও রাজ্যের মেধা তালিকায় অষ্টম স্থান দখল করেছিল পুরুলিয়া রামকৃষ্ণ মিশন বিদ্যাপীঠ। কোভিডের কারণে ২০২১ সালে কোন মেধা তালিকা প্রকাশিত হয়নি। তবে ২০২০ তে ষষ্ঠ নবম ও দশম স্থান দখল করেছিল এই জেলা। ষষ্ঠ ও দশম স্থান অধিকার করে পুরুলিয়া রামকৃষ্ণ মিশন বিদ্যাপীঠ। নবম হয় রঘুনাথপুর ২ নম্বর ব্লকের মঙ্গলদা বি এন জে হাইস্কুল।
২০১৯-এ মেধা তালিকায় পুরুলিয়ার কেউ না থাকলেও ২০১৮তে রামকৃষ্ণ মিশন বিদ্যাপীঠের ছাত্র দশম স্থান অধিকার করে। ২০১৪ সালে দশম স্থান অধিকার করে এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। ২০১৬ সালে পুরুলিয়া জেলা স্কুলের তিন ছাত্র অষ্টম স্থান পায়। ২০১২ সালেও এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চতুর্থ, ষষ্ঠ ও দশম স্থান পেয়েছিল। ১৯৯০ ও ৯৩ সালে পুরুলিয়া রামকৃষ্ণ মিশন বিদ্যাপীঠের ৯ জন করে ছাত্র মেধা তালিকায় জায়গা করে নিয়েছিল। ১৯৯০ সালে প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ, ষষ্ঠ, দশম, একাদশ ও যুগ্মভাবে ২ জন দ্বাদশ স্থান দখল করে। ১৯৯৩ সালে দ্বিতীয়, তৃতীয়, ষষ্ঠ, সপ্তম, নবম, একাদশ, দ্বাদশ, ত্রয়োদশ, অষ্টাদশ স্থান পায় এই স্কুল। তখন অবশ্য মাধ্যমিকে ২০ জনের মেধা তালিকা প্রকাশ হত।
এবার মাত্র ১ নম্বরের জন্য পুঞ্চা ব্লকের নপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রী মাম্পি দাস রাজ্যের মেধা তালিকায় জায়গা করতে পারেনি। ৬৮৫ নম্বর পেয়েছে সে। দশম স্থানে যে ১৬ জন রয়েছে তাদের প্রাপ্ত নম্বর ৬৮৬। ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ২৬৩ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে উত্তীর্ণ হয়েছে ২৩৩ জন। ৬০০ থেকে ৬৫০-র মধ্যে নম্বর রয়েছে ৭ জনের। ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক শুকদেব মাহাতো বলেন, “খুবই খারাপ লাগছে। আর এক নম্বর পেলেই আমরা রাজ্যের মেধাতালিকায় স্থান পেয়ে যেতাম।”
বরাবরের মতো এবারও জেলার নামকরা স্কুল পুরুলিয়ার রামকৃষ্ণ মিশন বিদ্যাপীঠ ৯৯ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে সকলেই উত্তীর্ণ। বিদ্যাপীঠের সর্বোচ্চ নম্বর ৬৮৪। হাওড়ার আন্দুলের বাসিন্দা অভিনব মিত্র এই নম্বর পায়। এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ৯০ শতাংশের উপর নম্বর পেয়েছে ৭১ জন। ৮০ শতাংশের উপর নম্বর পেয়েছে ৯১ জন। ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক স্বামী জ্ঞানরূপানন্দ মহারাজ বলেন, “আক্ষেপ সামান্য রয়েছে। আমরা আশা করেছিলাম আমাদের স্কুল মেধা তালিকায় থাকবে। “
অন্যদিকে জেলার আরেকটি নামকরা স্কুল পুরুলিয়া জেলা স্কুলে এবার সর্বোচ্চ নম্বর ৬৭৮। অর্ণব পাল চৌধুরি এই নম্বর পায়। ৯৩ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে সকলেই উত্তীর্ণ হয়। ৬০০-র উপরে নম্বর পেয়েছে ১৯ জন।
পুরুলিয়া জেলা স্কুলের টিচার- ইন-চার্জ সুজিত খাঁ বলেন, ” আমরা আশা করেছিলাম এবারও আমরা মেধা তালিকায় থাকবো। তবে কোথাও ত্রুটি বিচ্যুতি রয়েছে। সেই ত্রুটি বিচ্যতি দূর করে আগামী বছরের জন্য সতর্ক হবো।” ওই স্কুলের সংস্কৃতের শিক্ষক শেখ মজফফর আলি বলেন, ” আমরা আশা করেছিলাম মেধা তালিকায় আমাদের চারজন ছাত্রের নাম থাকবে। টেস্ট পরীক্ষায় আমাদের সর্বোচ্চ নম্বর উঠেছিল ৬৮৬। কিন্তু আমরা হতাশ। আমাদের স্কুলের ছাত্রদের বাংলা এবং ইতিহাসে নম্বর কমে গিয়েছে। এমন না হলে মেধা তালিকায় আমরা জায়গা করে নিতাম।”
পুরুলিয়া জেলা স্কুলের প্রাক্তনী তথা তৃণমূল শিক্ষা সেলের মুখপাত্র বিকাশ
মাহাতো বলেন , “রাজ্যের মেধা তালিকায় নাম না থাকাটা খুব
বেদনার। মাত্র এক নম্বরের জন্য পুঞ্চার নপাড়া হাই স্কুলের ছাত্রীর মেধা তালিকায় জায়গা হয়নি। এটা খুবই কষ্টের। আগামী বছর যাতে মাধ্যমিকে আমাদের জেলার স্কুলগুলি মেধা তালিকায় জায়গা পায়, সমস্ত ত্রুটি-বিচ্যুতি খতিয়ে দেখে তার চেষ্টা এখন থেকেই করতে হবে ।”
Post Comment