নিজস্ব প্রতিনিধি, পুরুলিয়া :
ফের হয়েছে জনস্বার্থ মামলা। আদিবাসী কুড়মি সমাজের ডাকে পুজোর মুখে রেল টেকা আর ডহর ছেঁকাকে উপলক্ষ করে প্রশাসন ও আন্দোলনকারীদের মানসিক দ্বন্দ্ব চরমে। বৃহস্পতিবার আদালতের শুনানির দিকে তাকিয়ে সব পক্ষ।
পুনরায় আদিবাসী তালিকাভুক্ত হওয়ার দাবিতে ফের অনির্দিষ্টকালীন রেল ও সড়ক অবরোধের কর্মসূচি নিয়েছে কুড়মি সমাজ। আগামী ২০ সেপ্টেম্বর সকাল ৬টা থেকে শুরু হওয়ার কথা এই টানা আন্দোলনের। বাংলা, ঝাড়খন্ড ও ওড়িশা মিলিয়ে প্রায় ১০০টি জায়গায় অবরোধের ডাক দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে পুরুলিয়াতেই প্রায় ৪০টি, ঝাড়গ্রাম ও মেদিনীপুর মিলিয়ে আরও ৫টি অবরোধ পয়েন্ট থাকবে। পুজোর মুখে এই কর্মসূচি ঘিরে আশঙ্কায় সাধারণ মানুষ। বিশেষত, কর্মস্থল থেকে বাড়ি ফেরা বা কেনাকাটার জন্য রেল ও সড়কের ওপর নির্ভরশীল মানুষজনের সমস্যার আঁচ মিলছে আগেভাগেই।
তবে এই কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে কুড়মি সমাজের ভেতরেই দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে এসেছে। কুড়মিদেরই একাংশ মনে করছে, এমন রেল-সড়ক অবরোধে জনজীবন বিপর্যস্ত হবে। আবার অন্য অংশের মতে, মৌলিক অধিকার আদায়ের জন্য এ ছাড়া আর উপায় নেই। সংগঠনের মূল মানতা অজিতপ্রসাদ মাহাতো সাফ জানাচ্ছেন, “অধিকার আদায়ে আমরা জীবন দিতেও প্রস্তুত।”
এই পরিস্থিতিতে প্রশাসনও প্রস্তুতি নিচ্ছে। মঙ্গলবার পুরুলিয়া-আদ্রা শাখার কুস্তাউর স্টেশনের কাছে আরপিএফ ও জিআরপি যৌথভাবে মক ড্রিল করেছে। কাঁদানে গ্যাস ব্যবহার থেকে ভিড় নিয়ন্ত্রণের নানা কৌশল মহড়ায় খতিয়ে দেখা হয়েছে। পুলিশ প্রশাসন জানাচ্ছে, আদালতের নির্দেশ মতোই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পুরুলিয়ার পুলিশ সুপার অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “বৃহস্পতিবার হাইকোর্টে শুনানি আছে। সেই রায়ের দিকেই আমরা তাকিয়ে আছি।”
এই প্রথম নয়। ২০১৫-১৬ সাল থেকে পুনরায় আদিবাসী তালিকাভুক্তির দাবিতে ধারাবাহিকভাবে আন্দোলন চালিয়ে আসছে কুড়মি সমাজ। ২০২২ সালে পাঁচ দিন রেল অবরোধ, তিন দিন সড়ক অবরোধ হয়েছিল। ২০২৩ সালে কলকাতা হাইকোর্ট রায় দিয়েছিল, এ ধরনের আন্দোলন অসাংবিধানিক ও অগণতান্ত্রিক। তবুও ফের অবরোধের পথে হাঁটতে চলেছে কুড়মিরা। ২০২৪ সালেও একই কর্মসূচির ঘোষণা হয়েছিল, কিন্তু রাজ্য সরকারের সঙ্গে আলোচনার পরে তা প্রত্যাহার করা হয়।
এ বার পুজোর মুখে ফের সেই আশঙ্কা। সংগঠনের দাবি, কেন্দ্র ও রাজ্য কোনও পক্ষই তালিকাভুক্তির বিষয়ে তাদের দাবিকে গুরুত্ব দেয়নি। এমনকি রাষ্ট্রপতি, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, সুপ্রিম কোর্ট এবং বাংলা-ঝাড়খন্ড-ওড়িশার হাইকোর্ট—সব জায়গায় আবেদন জানিয়েও ফল মেলেনি। তাই বাধ্য হয়েই বড় আন্দোলনের পথে তারা।
তবে মতভেদের জেরে ২০ তারিখ থেকে এই কর্মসূচি কতটা সংগঠিতভাবে শুরু করা যাবে, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। প্রশাসন, আদালত ও আন্দোলন—সব দিক মিলিয়ে ফের এক অনিশ্চয়তার মেঘ ঘনাচ্ছে জঙ্গলমহলে।
Post Comment