নিজস্ব প্রতিনিধি, মানবাজার :
রবিবার দুপুর। আগের দিনের রান্না করা মাংস আর মুড়ি খেয়ে খাটিয়ায় ঘুমিয়ে পড়েছিলেন গৌতম সিং সর্দার। পুরুলিয়ার মানবাজারের ঘাসতোড়িয়া গ্রামের সেই যুবকের তখনও আঁচ ছিল না, মৃত্যুর ছায়া ঘোরাফেরা করছে তাঁর চৌকাঠেই। ঘুমন্ত স্বামীর ঘরে ঢোকেন স্ত্রী জ্যোৎস্না ও ভাই উত্তম। পুলিশের দাবি, ষড়যন্ত্র আগেই পাকা ছিল। ঠিক কীভাবে খুন হবে গৌতম, তাও ঠিক করে রাখা ছিল।
জেরায় উত্তম জানিয়েছে, গৌতমের দুটি হাত শক্ত করে ধরে রেখেছিল স্ত্রী। আর সেই ফাঁকেই গলায় দড়ির ফাঁস টেনে ধরে ভাই উত্তম। নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে এলে, নিথর দেহে চাদর চাপা দিয়ে রেখে দেয় দেওর বউদি —যাতে কেউ কিছু টের না পায়।
তারপর?
দুপুর থেকে রাত অবধি মৃতদেহ পাশের ঘরে রেখে দিব্যি স্বাভাবিকভাবে কাজকর্ম সারেন ওই দুই অভিযুক্ত। রাতে, যখন গোটা গ্রাম নিস্তব্ধ, তখনই লাশ তুলে নিয়ে গিয়ে ফেলে দেওয়া হয় পুকুরে। একই সঙ্গে খুনে ব্যবহৃত দড়িও।
পুরুলিয়ার মানবাজারের ঘাসতোড়িয়া গ্রামে যুবক গৌতম সিং সর্দার খুনের ঘটনায় একে একে খুলছে নাটকের পরত। তদন্তকারীদের দাবি, ভাই উত্তম সিং সর্দার ও গৌতমের স্ত্রী জ্যোৎস্না মিলে খুনের ছক কষেছিল বহু আগেই।
কেন?
পুলিশ জানতে পেরেছে , বিয়ের পর মাত্র এক মাস সংসার করার পরেই বাপের বাড়িতে ফিরে যায় জ্যোৎস্না। এরপর প্রায় এক বছর ধরে শ্বশুরবাড়ি ছেড়ে দুর্জয়পাড়ার বাপের বাড়িতেই থাকে সে। অথচ, স্বামী গৌতমের সঙ্গে না থাকলেও দেওর উত্তমের সঙ্গে তাঁর নিয়মিত ফোনে যোগাযোগ চলত। তদন্তকারীরা বলছেন, শুধু যোগাযোগই নয়, জেরায় উঠে এসেছে একাধিকবার ঘনিষ্ঠতাতেও লিপ্ত হয়েছিল তারা।
এই সম্পর্ক থেকেই তৈরি হয় খুনের ষড়যন্ত্র। তদন্তে উঠে এসেছে, সম্প্রতি ১১ মাস পর গর্ভবতী অবস্থায় ফের স্বামীর বাড়ি ফিরে আসেন জ্যোৎস্না। কিন্তু মনে আশঙ্কা গর্ভস্থ সন্তানের পিতৃ পরিচয় নিয়ে যদি প্রশ্ন ওঠে? তার আগেই দু’জনে মিলে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, “পথের কাঁটা” গৌতমকে সরাতে হবে।
তদন্তে নেমে ধৃত উত্তমকে জেরা করে এইসব ভয়াবহ তথ্য জানতে পেরেছে পুলিশ। বুধবার দুপুরে সেই ঘটনার পুনর্নির্মাণে উত্তমকে নিয়ে ঘটনাস্থলে যান তদন্তকারীরা। প্রথমে সেই বাড়িতে, তারপর পুকুরে গিয়ে চলে তল্লাশি। পুকুরের জলে নামানো হয় কয়েকজন যুবক। কিন্তু এখনও পর্যন্ত দড়ির হদিশ মেলেনি।
তদন্তকারীরা এখন ভাবছেন, এই অন্তঃসত্ত্বা মহিলার সন্তানের ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে নিশ্চিত হওয়া দরকার, মৃত গৌতমই কি সেই সন্তানের পিতা? তদন্তের গতি পেতে এবং মোটিভ একশো শতাংশ নিশ্চিত করতে সেই দিকেই এগোচ্ছে প্রশাসন।
Post Comment