সুইটি চন্দ্র, কাশিপুর:
ছোট্ট গ্রাম কাশীপুর। এখানেই এক শিক্ষক পিতা-মাতার ঘরে জন্ম সিদ্ধার্ত মন্ডলের। ওরফে ভিকির। সরল জীবন, সীমিত সুযোগ। কিন্তু চোখে- আর অন্তরে এক অদম্য স্বপ্ন। অভিনেতা হবেন। আজ সেই ছেলেই দেশের নামকরা ওটিটি প্ল্যাটফর্মে দাপটের সঙ্গে অভিনয় করছেন। মিঠুন চক্রবর্তী থেকে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের সঙ্গে স্ক্রিন শেয়ার করছেন। অথচ শুরুটা ছিল ঠিক উল্টো।
👉গ্রাম থেকে শহর এক বিশাল ব্যবধান

গ্রামে প্রাথমিক সুযোগ-সুবিধার অভাব ছিল চোখে পড়ার মতো। নামমাত্র গ্রন্থাগার। নাটক-অভিনয়ের কোনো অবকাশ-ই নেই! মোবাইল বা ইন্টারনেট তখনও পৌঁছায়নি সেসব অঞ্চলে। প্রতিদিন ১৪ কিলোমিটার সাইকেল চালিয়ে আদ্রায় টিউশন করতে যেতেন ভিকি। তবু থেমে থাকেননি। সরস্বতী পুজোর কুইজ, আবৃত্তি, নাটক সব কিছুতেই অংশগ্রহণ। পুরস্কার পেলে যেন গোটা দুনিয়ার আনন্দ পেতেন।
👉কলেজ হোস্টেল থেকেই আত্ম-আবিষ্কার

পুরুলিয়া পলিটেকনিক কলেজে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে এসে অভিনয়ের প্রথম প্র্যাকটিস শুরু। হোস্টেলেই বন্ধুদের সামনে অভিনয়, অনুকরণ, নাচ। শীতের সকালে সাইকেল নিয়ে গেট টপকে কলকাতার অডিশনে পৌঁছে যেতেন। ই-টিভি বাংলা-র “মেগাস্টার”-এ প্রথম ব্রেক। ১০০০ টাকার পারিশ্রমিক। সেই প্রথম স্বীকৃতি।
👉সংগ্রামের মধ্যেই বিকাশ

কিন্তু স্বপ্নের পথে প্রতিবন্ধক ছিল অজস্র। টাকার অভাব, থাকার জায়গা নেই, কলকাতায় কোনও চেনাশোনা নেই। তবু ভিকি দমেননি। হাওড়া স্টেশনের প্ল্যাটফর্মেও রাত কাটিয়েছেন। দিনের বেলায় ১০০ দিনের প্রকল্পে ইঞ্জিনিয়ার, রাতে কলকাতায়
বি টেক-র ক্লাস। অভিনয়ের জন্য গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষাও মিস করেছেন। তবু শেষ করেছেন বি টেক। তারপর যাদবপুরে ইন্ডাস্ট্রিয়াল সেফটি নিয়ে পড়া, আইআইটি খড়গপুর থেকে ই-ওয়েস্ট কোর্স, এমবিএ- সবকিছুই অভিনয়ের সমান্তরালে।
👉চাকরি থেকে সিনেমা সাহসী সিদ্ধান্ত

২০১০ সালে চাকরি ছেড়ে কেবল অভিনয়ে মনোনিবেশ করেন। প্রথম বড় কাজ ‘প্রফুল্ল’ সিরিয়ালে, এরপর ‘নায়িকা’, ‘পাগলু ২’-এ ছোট চরিত্রে। ধীরে ধীরে রাজ চক্রবর্তীর পরিচালনায় ‘কানামাছি’, ‘বোঝেনা সে বোঝেনা’, ‘প্রলয়’, ‘যোদ্ধা’, ‘পারবো না আমি ছাড়তে তোকে’। প্রত্যেকটি প্রজেক্টেই নিজের জায়গা তৈরি করেন। ২০২৪ সালে ‘সন্তান’ সিনেমায় মিঠুন চক্রবর্তীর সঙ্গে স্ক্রিন শেয়ার এক অনন্য অভিজ্ঞতা।
👉নেটফ্লিক্সে অভিষেক এবং জাতীয় পরিচিতি

ভিকির কর্মজীবনের অন্যতম সেরা মুহূর্ত নেটফ্লিক্স-র ‘খাকি: দ্য বেঙ্গল চ্যাপ্টার’-এ গ্যাংস্টার চরিত্রে অভিনয়। সৌরভ গাঙ্গুলির সঙ্গেও নেটফ্লিক্সের একটি প্রচারমূলক ভিডিওতে অভিনয় করেছেন। এছাড়াও হৈ চৈ এর ‘চুপকথা-২’, ‘নিখোঁজ-২’, জি-৫ এর ‘লালবাজার’-এ গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে ছিলেন।
👉বর্তমান প্রকল্প ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা:

বর্তমানে ডিসনে প্লাস হটষ্টার -র একটি জাতীয় স্তরের হিন্দি ওয়েব সিরিজে অভিনয় করছেন। আসছে ‘রাশ এবং বানসারা’ নামক নতুন প্রজেক্টও। সহকারী পরিচালক হিসেবেও সফলভাবে কাজ করেছেন একাধিক ছবিতে।

“স্বপ্ন হার মানে না, স্বপ্ন জিতে নিতে হয়”—এই মন্ত্রে আজও নিজেকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন কাশীপুরের সন্তান সিদ্ধার্থ মণ্ডল। তিনি দেখিয়ে দিয়েছেন, ইচ্ছাশক্তি থাকলে কোনও বাধাই চূড়ান্ত গন্তব্যে পৌঁছাতে পারে না। বরং সহজ না হলেও নিজের লক্ষ্যে পৌঁছানো যায়।
Post Comment