নিজস্ব প্রতিনিধি, পুরুলিয়া :
ছিলো দলীয় কর্মসূচি। কিন্তু দলেরই ২০ জন কাউন্সিলারের মধ্যে অনুপস্থিত ১৭ জন। আর তখনই অনুপস্থিত কাউন্সিলারদের ভাইরাস বলে পুরুলিয়ার রাজনৈতিক মহলে শুরু হয়েছে বিতর্কের ঝড় তুলে দিলেন পুরুলিয়া শহর তৃণমূল যুব সভাপতি গৌরব সিং। রবিবার পুরুলিয়া শহর তৃণমূলের ‘চায়ের সাথে আড্ডা’ নামক শ্রদ্ধাঞ্জলি কর্মসূচিতে এমন বিতর্কিত মন্তব্য করে ক্ষোভ প্রকাশ করলেন তিনি। শহর যুব তৃণমূল সভাপতি গৌরব সিং বলেন,“আগামী দিনে পুরুলিয়া শহরে আমাদের জিততে হলে, আগে ভাইরাসগুলোকে টিকা দিতে হবে।”
এই মন্তব্যে বিস্ফোরণ ঘটে শাসক দলের অন্দরে । গৌরব সিংয়ের এই ‘ভাইরাস’ মন্তব্য ঘিরে প্রতিবাদে মুখর হন কাউন্সিলার থেকে শুরু করে জেলা স্তরের নেতারাও। কাউন্সিলার বিভাসরঞ্জন দাস বলেন, “আমি চারবার কাউন্সিলার হয়েছি, সর্বোচ্চ ভোটে জিতেছি। যারা এইসব বলছে, তারা আগে একবার কাউন্সিলার হয়ে দেখাক। আসলে পদ বাঁচাতে এসব নাটক।”
জেলার যুব নেতারাও গৌরবের ভাষা ব্যবহার নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। এক নেতা স্পষ্ট বলে দিলেন, “দলের জেলা সভাপতি স্পষ্ট ভাবে বলেছিলেন— সামাজিক মাধ্যমে বা প্রকাশ্যে এমন কোনও মন্তব্য করা যাবে না, যাতে দলের ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাহলে কীভাবে এই বক্তব্য এল?”
প্রসঙ্গত, গৌরব সিং একসময় বজরং দল ও তার আগে এসএফআই-এর সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তিনি নাকি এখন তৃণমূল জেলা যুব সভাপতি পদের অন্যতম দাবিদার। তাঁর এই বক্তব্যকে অনেকে সেই দৌড়ের প্রস্তুতি হিসেবেই দেখছেন। যদিও তাঁর অতীত ঘিরে দলীয় অন্দরেও প্রশ্নও উঠছে।
এ বিষয়ে জেলা তৃণমূল চেয়ারপার্সন শান্তিরাম মাহাতো বলেন, “সব কাউন্সিলার জনবিচ্ছিন্ন নন। ‘ভাইরাস’ বলা অত্যন্ত অনভিপ্রেত। দল এই বক্তব্য সমর্থন করে না।” অন্যদিকে তৃণমূল সূত্রে জানা গেছে বিজেপির চায়ে পে চর্চার অনুকরণে আয়োজিত গৌরবের ওই অনুষ্ঠানের কোনও অনুমতি দলের তরফে দেওয়া হয়নি। এমনকি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি ব্যবহারের বিষয়েও অনুমতি নেওয়া হয়নি।
তৃণমূলের পুরুলিয়া শহর ঘিরে মাথা ব্যাথার শেষ কিন্তু এখানেই নয়। অভিযোগ উঠছে তৃণমূল শহর সভাপতি প্রদীপ ডাগা বিভিন্ন জায়গায় নাকি বলে বেড়াচ্ছেন শান্তিরাম বাবু তাঁকে দায়িত্বে থাকতে বলছেন। আর তাই নাকি তাঁর পদত্যাগ গৃহীত হয়নি। এমন অভিযোগ নস্যাৎ করেছেন জেলা তৃণমূল চেয়ারম্যান শান্তিরাম মাহাতো। তিনি বলেন, ” কে কোন পদে থাকবেন, তা আমার দেখার কথা নয়। ” শহর সভাপতির এই আচরণকে রাজনৈতিক কৌশল বলেও অভিহিত করেছেন অনেকেই।
সব মিলিয়ে, পুরুলিয়া শহর তৃণমূল এখন অভ্যন্তরীণ টানাপোড়েন অব্যাহত। ২০২১ সালের বিধানসভা ও ২০২৪ সালের লোকসভা ভোটে শহর এলাকায় দলের ভরাডুবির পর এই সংঘাত আরও বড় চিন্তার কারণ হয়ে উঠছে জেলা নেতৃত্বের কাছে। প্রশ্ন একটাই— কাউন্সিলারদের দায় ঠিক কতটা, আর সংগঠনের শহর নেতৃত্ব কতটা দায়িত্ব নিতে প্রস্তুত?
Post Comment