insta logo
Loading ...
×

করমে মাতলো জঙ্গলমহল পুরুলিয়া, ডালা-নাচের প্রতিযোগিতাও

করমে মাতলো জঙ্গলমহল পুরুলিয়া, ডালা-নাচের প্রতিযোগিতাও

দেবীলাল মাহাত, আড়শা:

“আইজ্ রে করম ঠাকুর ঘরে দুয়ারে। কাইল রে করম ঠাকুর কাঁসাই নদীর পাড়ে ।” এভাবেই করম পরবের দিন পুরুলিয়া সহ ছোটনাগপুর মালভূমি অঞ্চলের আকাশে- বাতাসে ধ্বনিত হল করম ঠাকুরের বন্দনা । কৃষিভিত্তিক প্রাণের উৎসবে, আনন্দে মেতে উঠল কুড়মি সহ আদিবাসী জনজাতির মানুষজন । নানা আচার, অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে পালিত হল এই উৎসব ।

করম পরব তিথি নির্ভর । প্রতিবছর ভাদ্র মাসের শুক্ল একাদশীর তিথিতে পালন হয় এই উৎসব। যদিও এর প্রস্তুতি শুরু হয় সাত দিন আগে থেকেই। প্রকৃতির আরাধনার জন্য পূজো করেন কৃষিজীবি মানুষ। ফুটে ওঠে প্রকৃতির সাথে তাদের নিবিড় আখ্যান। মূলত কুমারি মেয়েরাই করম ঠাকুরের উপাসক। তারা ডালায় বালি ভর্তি করে গম, যব , ভুট্টা, সরষে ,মটর সহ বিভিন্ন শস্যবীজ বুনে দেন । অঙ্কুরোদগম হবার পর ‘জাওয়া ডালা’ নিয়ে সাত দিন ধরে চলে পরিচর্যা। এই সময় মেয়েরা নানা নিয়ম মেনে চলেন। পার্শ্ব একাদশীর দিন কুমারী মেয়েরা বিভিন্ন ফুল সংগ্রহ করেন। এক জায়গায় জড়ো হয়ে পূজো দিয়ে, জাওয়া ডালা মাঝে রেখে করম গান গেয়ে করম ঠাকুরের কাছে প্রার্থনা করেন। পরের দিন হয় বিসর্জন।


এইভাবেই করম পরবের মধ্য দিয়ে কৃষিকর্মের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হয়। ফুটে ওঠে কুড়মি সহ আদিবাসী জনজাতির মধ্যে প্রকৃতি প্রেমের এক নিবিড় সম্পর্ক। বছর দুয়েক আগে রাজ্য সরকার করম পরবের দিনটিকে পূর্ণাঙ্গ ছুটি ঘোষণা করায় জঙ্গলমহলে এই উৎসব আলাদা মাত্রা পেয়েছে। সিধো-কানহো-বিরসা বিশ্ববিদ্যালয় গনিত বিভাগের অধ্যাপক ডঃ সনত মাহাত বলেন, “বৃহত্তর ছোটনাগপুরের মানুষ আদিকাল থেকে এই উৎসব পালন করে আসছে। ভারতবর্ষের বিভিন্ন রাজ্যের পাশাপাশি বাংলাদেশও এই পরবের রীতি রেওয়াজ রয়েছে। কৃষিজীবি মানুষের কাছে এই উৎসব অত্যন্ত প্রাণের।

জমিতে ভালো ফসল, পরিবারের সবার মঙ্গল কামনার এই পূজো অনুষ্ঠিত হয়। পাশাপাশি উৎসবের মধ্য দিয়ে ভাই- বোনের বন্ধনের বার্তা তুলে ধরা হয়। কৃষিকাজের পর মানুষ এই সময় বিশ্রাম পান। ফলে তারা আনন্দে মেতে ওঠেন। এইভাবেই আদি কাল থেকে করম পরর কৃষি সভ্যতার পরিচয় বহন করে।
করম পরব উপলক্ষে এদিন জেলার বিভিন্ন প্রান্তে অনুষ্ঠিত হয় করম ডালা, করম নাচের প্রতিযোগিতা।

Post Comment