নিজস্ব প্রতিনিধি, পুরুলিয়া :
জেলা তৃণমূলের নতুন সভাপতি হলেই জঙ্গলমহলের এই জেলায় বদলে যায় পার্টি অফিস। সেটাই চলে আসছে জন্মলগ্ন থেকে। শুরু হয় সবকিছু নতুন করে। শহরেই রয়েছে সিপিআইএম ও কংগ্রেসের নিজস্ব পার্টি অফিস। সম্প্রতি বিজেপিরও নিজস্ব জেলা পার্টি অফিস হয়ে গিয়েছে । আর বিজেপির নতুন পার্টি অফিসই ,উস্কে দিয়েছে তৃণমূলের নতুন পার্টি অফিস গড়ার স্বপ্ন।
কংগ্রেস থেকে বেরিয়ে, ১৯৯৮ সালে ১লা জানুয়ারি সর্বভারতীয় তৃণমূলের প্রতিষ্ঠা হয়। ৩৪ বছরের বাম রাজত্বের অবসান ঘটিয়ে ২০১১ সালে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় আসে তৃণমূল কংগ্রেস। জন্মলগ্ন দিন থেকেই জেলাতেও বিস্তার লাভ করে তৃণমূল। কিন্তু স্থায়ী পার্টি অফিস গড়ে ওঠেনি আজও। আর এরই মধ্যে ২৭ বছরে জেলায় দলের জেলা সভাপতি বদল হয়েছে ৭ বার। তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বদলেছে পার্টি অফিসও । যার মধ্যে এক সভাপতি থাকাকালীন-ই বদলেছে দু-‘দু বার। প্রতিবারই ভাড়া অফিস। যার মাসিক ভাড়া গুনতে হয়েছে সংশ্লিষ্ট জেলা সভাপতিকেই। রবিবার নতুন জেলা সভাপতির হাত ধরে ,আবার দুলমি নডিহায় পরিবর্তন হল জেলা পার্টি অফিস। সেই ট্র্যাডিশন একই ,নতুন জেলা সভাপতি, নতুন পার্টি অফিস, নতুন ভাড়া ঘর। গত ২৭ বছরেও পুরুলিয়া জেলা তৃণমূলের স্থায়ী কার্যালয় না থাকায় হতাশ কর্মীরাও। তাঁদের প্রশ্ন এভাবে আর কত দিন?
১৯৯৮ সাল থেকে তৃণমূলের পথচলা শুরু হতেই এই জেলায় সেই সময় প্রভাত কুন্ডুকে ( বর্তমানে প্রয়াত) আহবায়ক রেখে দলের কাজকর্ম চলে। তখন পুরুলিয়া জেলা তৃণমূলের পার্টি অফিস ছিল বি টি সরকার রোডে, জেলা স্কুল মোড় এলাকায়। বর্তমানে সেখানে পুরুলিয়া শহর তৃণমূলের শ্রদ্ধাঞ্জলি অনুষ্ঠান হয়। তারপর দলের জেলা সভাপতি হন সীতারাম মাহাতো। তিনিও ওই জেলা স্কুল মোড়ে বি টি সরকার রোডের পার্টি অফিসে বসতেন। সেটাই ছিল পুরুলিয়া জেলা তৃণমূলের প্রথম পার্টি অফিস। এরপর পঞ্চকোট রাজ পরিবারের সদস্য কে পি সিং দেও জেলা সভাপতি হতেই বদলে যায় জেলা পার্টি অফিসের ঠিকানা। তাঁর রাঁচি রোডের বাঁশ বাংলোতে জেলা পার্টি অফিসকে নিয়ে আসেন তিনি। এই নিয়ে দলে ক্ষোভ- বিক্ষোভ থাকলেও কর্মীরা বাঁশ বাংলোতেই যেতেন। তারপর ২০০৯ সালের আগস্ট মাসে রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী শান্তিরাম মাহাতো কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে এলে তিনি জেলা সভাপতির পদ পান। তিনিও বদলে ফেলেন জেলা পার্টি অফিস। জেলা স্কুল মোড়ের কাছে আদি অফিসে না গিয়ে বাসস্ট্যান্ডের কাছাকাছি হুচুকপাড়া এলাকায় সীতারাম মাহাতো ভবনে গড়ে তোলেন জেলা পার্টি কার্যালয়। ফলে দলের কর্মীরা ক্ষুব্ধ হয়ে ওই পার্টি কার্যালয় ভাঙচুর করেন।
২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে বিপর্যয়ের পর ওই বছরের মাঝামাঝিতে আবার জেলা সভাপতি বদল হয়। শান্তিরাম মাহাতোর জায়গায় জেলা সভাপতির কুরসিতে বসেন রাজ্যের পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন বিভাগের স্বাধীন দায়িত্বপ্রাপ্ত রাষ্ট্রমন্ত্রী সন্ধ্যারানি টুডুর স্বামী তথা আদিবাসী নেতা গুরুপদ টুডু। পার্টি অফিসের ঠাঁই বদলে দুলমিতে নিয়ে যান তিনি। ২০২১ সালের ১৬ই আগস্ট গুরুপদ টুডুকে সরিয়ে দেওয়া হয় জেলা সভাপতির পদ থেকে। ওই পদে দায়িত্ব পান সৌমেন বেলথরিয়া। পার্টি অফিস বদলের রেওয়াজ থেকে তিনিও বেরিয়ে আসতে পারেননি। পুরুলিয়া শহরের উপকণ্ঠে বেলগুমাতে হয় নতুন জেলা পার্টি অফিস। ওই পার্টি অফিস শহর থেকে অনেকটা দূরে হওয়ায় আবার বদল হয় দলের জেলা কার্যালয়ের সাকিন। দেশবন্ধু রোড এলাকায় আনা হয় জেলা পার্টি অফিস। সদ্য সৌমেনের জায়গায় জেলা সভাপতির পদ পান বান্দোয়ানের বিধায়ক রাজীবলোচন সরেন। তিনিও দেশবন্ধু রোডের জেলা পার্টি অফিস বদলে নডিহা-দুলমি এলাকায় নতুন পার্টি অফিসের ব্যবস্থা করলেন। রবিবার ওই জেলা পার্টি কার্যালয়ের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয় পুরুলিয়া জেলা তৃণমূলের চেয়ারপার্সন তথা রাজ্য তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক তথা প্রাক্তন মন্ত্রী শান্তিরাম মাহাতোর হাত ধরে। দলীয় পতাকা উত্তোলন এবং ফিতে কেটে এই পার্টি অফিসের পথ চলা শুরু হয়। এখানেই নতুন জেলা সভাপতির কাছে কর্মীরা আবেদন জানান -এবার তৃণমূলের স্থায়ী পার্টি অফিস গড়তেই হবে। পুরুলিয়া জেলা তৃণমূলের নতুন জেলা সভাপতি তথা বিধায়ক রাজীব লোচন সরেন বলেন, “এবার আমাদের লক্ষ্যই হবে শহরে নতুন জেলা তৃণমূলের স্থায়ী পার্টি অফিস গড়ে তোলা।”
Post Comment