সুইটি চন্দ্র, পুরুলিয়া :
পরিবেশবিদ সুভাষ দত্তর হাত ধরে বিষ থেকে বাঁচতে জাতীয় পরিবেশ আদালতে যাচ্ছে সাহেব বাঁধ। পুরুলিয়া শহরের ঐতিহ্যশালী এই জাতীয় সরোবর দীর্ঘদিন ধরেই দূষণের কবলে। মাছের মড়ক, পচা কচুরিপানা, দুর্গন্ধে হাঁটা দায়— ক্রমশ মানুষের কাছে দুঃস্বপ্নে পরিণত হচ্ছে জেলার ‘ফুসফুস’ নিবারণ সায়ের। মঙ্গলবার এই বিষময় পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে সাহেব বাঁধ পরিদর্শনে আসেন প্রখ্যাত পরিবেশবিদ সুভাষ দত্ত। তিনি বলেন,”সরোবর সংস্কারে যে বিপুল অর্থ দরকার পুরসভার পক্ষে তা জোগাড় করা সম্ভব নয়। সংস্কারের বিষয়টিতে নগরোন্নয়ন মন্ত্রককে যুক্ত করতে হবে।” পাশাপাশি বিষয়টি জাতীয় পরিবেশ আদালতে তুলবেন বলে জানান সুভাষ বাবু। তবে এদিন পুরসভার চেয়ারম্যান নবেন্দু মাহালির সঙ্গে দেখা করার ইচ্ছে থাকলেও চেয়ারম্যানের অসুস্থতার কারণে তা হয়নি।

ইতিহাসে চোখ রাখলে দেখা যায়, ১৮৩৮ সালে তৎকালীন ডেপুটি কমিশনার কর্নেল টিকলে জেলের বন্দিদের দিয়ে সাহেব বাঁধ খনন করান। লাগে ৫ বছর। তাঁর নামেই ‘সাহেব বাঁধ’। ২০০১ সালে তৎকালীন জেলা শাসক দেবপ্রসাদ জানার উদ্যোগে স্বাধীনতা সংগ্রামী ঋষি নিবারণ চন্দ্র দাশগুপ্তর নামে এর নামকরণ হয় ‘নিবারণ সায়ের’।
প্রস্তাবিত জাতীয় সরোবর হিসেবে সাহেব বাঁধকে সাজাতে একাধিক পদক্ষেপ নেওয়ার কথা ছিল। কাশ্মীরের ডাল লেকের ধাঁচে নৌকা বিহার ফেরানো থেকে শুরু করে ফোয়ারা বসানো, অকেজো হয়ে থাকা ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট চালু করা, ম্যানহোল পরিষ্কার, চুন-নুন দিয়ে জীবাণুনাশ, পচা কচুরিপানা সরানো বা তা সার বানানো— অন্তত ছ’টি উদ্যোগ ঘোষণা হয়েছিল। কিন্তু একটিও কার্যকর হয়নি।

পুরুলিয়া পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যান ময়ূরী নন্দী বলেন, ” সাহেব বাঁধ পুরুলিয়ার গর্ব। চলতি পুর বোর্ড ৩০ লক্ষ টাকা এর সংস্কারে খরচ করেছে বলে জানি। পরিবেশবিদ প্রশংসা করার বদলে কেন উষ্মা প্রকাশ করলেন, তা আমাদের লজ্জার বিষয়। যাঁরা টাকা খরচ করেছেন, দেখভাল করেছেন তাঁরাই বলতে পারবেন কী হয়েছে।”
সবেমিলে পরিস্থিতি ভয়াবহ। ৮৫ একর জুড়ে বিস্তৃত এই জলাশয়ে বারবার মাছের মড়ক দেখা দিচ্ছে। ২০২০ ও ২০২২ সালের মে মাসে ভয়ঙ্করভাবে মরেছিল মাছ। এখনও মরছে। সাহেব বাঁধে মাছ চাষের অধিকার প্রাপ্ত সমিতির সদস্য বিশ্বেশ্বর ধীবর বলেন, ” সাহেব বাঁধের পাড়ঘেঁষা হাসপাতাল- নার্সিংহোমের নোংরা জল সরাসরি মিশছে দিঘিতে। তাতেই বিষাক্ত হয়ে পড়ছে জল, ভেসে উঠছে মৃত মাছ।”

অতীতের কোটি কোটি টাকার প্রকল্প ব্যর্থ হওয়ার পর এখন নজর আদালতের দিকে। যে সাহেব বাঁধ একসময় শহরের গর্ব ছিল, আজ তা মৃত্যুযন্ত্রণায় কাতর। নিবারণ সায়ের প্রাণহীন মাছের মতোই নীরবে প্রশ্ন করছে, আদালতের হস্তক্ষেপ কি ফিরিয়ে আনতে পারবে পুরুলিয়ার প্রাণ, সাহেব বাঁধের হারানো জৌলুস?
Post Comment