নিজস্ব প্রতিনিধি, পুরুলিয়া
ঠেকে শিখছে বনদফতর! ঝাড়গ্রামের ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে আর হাতি তাড়াতে হুলা নয়। বুনো হাতি মোকাবিলায় বনকর্মীদের হাতে এবার ‘গজ শস্ত্র’!তবে এই শস্ত্রে গুলি-বারুদ নয়। ওই গোলা-গুলি ছাড়ায় পরিবেশবান্ধব ফায়ার আর্মস। যা কার্বাইডে জল মিশিয়ে প্লাস্টিকের পাইপ দিয়ে কৃত্রিম বন্দুক বানিয়ে ওই কার্বাইড ও জলের মিশ্রণে উৎপাদিত গ্যাসকে ট্রিগারের সাহায্যে বার করা। যে তীব্র আওয়াজে শুধু কান ঝালাপালা নয়। রীতিমতো কাঁপুনি ধরিয়ে দেয়। সেই সঙ্গে আগুনের ঝলকানি। যা দেখে ও কানফাটা আওয়াজ শুনে পিছু হঠতে বাধ্য হাতির দল। হাতি তাড়াতে আগুনের ব্যবহার না করে এমনই অভিনব উদ্ভাবনী বিষয় সামনে এনেছে পুরুলিয়া বনবিভাগ। আপাতত পুরুলিয়ার দুই বনাঞ্চল ঝালদা ও বাঘমুন্ডিতে হাতি তাড়াতে বনকর্মীদের নিয়ে গঠিত কুইক রেসপন্স টিম এই ‘গজ শস্ত্র’ ব্যবহার করছে। আগুনের ব্যবহার ঠেকিয়ে হাতি তাড়াতে সহজ বিজ্ঞানকেই অবলম্বন করেছে পুরুলিয়া বনবিভাগ। যার প্রশংসা করেছে অরণ্য ভবন। রাজ্যের বনদফতরের মন্ত্রী বিরবাহা হাঁসদা বলেন, “ঝাড়গ্রামের ঘটনায় আমাদের মন ভালো নেই। ডিএফওদের বলা হয়েছিল হাতি তাড়াতে আগুনের ব্যবহার বন্ধ করতে হবে। হুলা ছাড়া বিকল্প পথে কিভাবে অতি সহজে হাতির দলকে লোকালয় থেকে সরানো যায়।”তবে ২০১৮ সালেই একটি মামলায় সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশ দিয়েছিলো হাতি তাড়াতে হুলা ব্যবহার করা যাবে না। কিন্তু সুপ্রিম নির্দেশের পরেও হাতি তাড়াতে আগুনের ব্যবহার ঠেকানো যায়নি। শুধু বাংলা নয়, লাগোয়া ঝাড়খন্ড, ওড়িশাতেও এখনও হাতি তাড়াতে পুরোদমে হুলা ব্যবহার করা হচ্ছে বলে অভিযোগ। পুরুলিয়া বনবিভাগের এই ‘গজ শস্ত্র’ হাতি তাড়াতে নতুন দিশা দেখাতে পারে এমন-ই বলছেন বন্যপ্রাণ প্রেমীরা। পুরুলিয়া বনবিভাগের ডিএফও অঞ্জন গুহ বলেন, “বনমন্ত্রী আমাদের বারে বারে বলেছেন হাতি-মানুষ সংঘাত ঠেকাতেই হবে। তাই এই ‘গজ শস্ত্র’ প্রকল্প। যা তৈরিতে সে অর্থে কোন খরচ-ই নেই। বুনো হাতি যেহেতু আগুনকে ভয় পায়, পূর্ণবয়স্ক হাতিরা তীব্র শব্দে বিরক্ত হয়। হস্তী শাবকরা ওই শব্দে ভয় পেয়ে পিছু হঠে। তাই এই বিষয়টিকে মাথায় রেখে সহজ বিজ্ঞানকে আমরা কাজে লাগিয়েছি।” বনদপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, হাতি তাড়াতে গ্রামবাসীদেরকে নিয়ে যে র্যাপিড রেসপন্স টিম রয়েছে তাদেরকেও প্রশিক্ষণ দেবে পুরুলিয়া বন বিভাগ। হুলা পার্টি সদস্যরা যেভাবে আগুনের মশাল হাতির একেবারে কাছে গিয়ে তাদের খেদানোর চেষ্টা করে। এক্ষেত্রে তা হবে না। দূর থেকেই এই কাজ করতে পারবেন বন কর্মী, যৌথ বন পরিচালন কমিটি থেকে হাতি উপদ্রুত এলাকার মানুষজন। ফলে হাতি তাড়াতে কোন ঝুঁকি থাকবে না। বাঘমুন্ডি ও ঝালদা বনাঞ্চলের আধিকারিক যথাক্রমে শাহনাজ ফারুক আহমেদ ও অপূর্ব মাহান্তির কথায়, “ইতিমধ্যেই এই ‘গজ শস্ত্র’ প্রয়োগ করে আমরা সুফল পেতে শুরু করেছি।” # পুরুলিয়া# অরণ্যের খবর
Post Comment