সুইটি চন্দ্র , পুরুলিয়া:
বেতন হয়ে গিয়েছে সরকারি কর্মীদের। সেই টাকাই যেন আগুন ধরিয়ে দিল পুজোর বাজারে। রবিবার সকাল থেকেই পুরুলিয়া শহরের দেশবন্ধু রোড থেকে সিটি সেন্টার—সবখানেই উৎসবের আমেজ। সাধারণত রবিবারে বাজার অর্ধেক ঘুমিয়ে থাকে। কিন্তু এই রবিবার ব্যতিক্রম। কাপড়ের দোকান থেকে শপিংমল, শাড়ির বিপণি থেকে জুতোর শোরুম—সবখানেই ভিড় উপচে পড়েছে। হাতে বেতন, সামনে পুজো—এ যেন একসঙ্গে উৎসব আর কেনাকাটার মেলা।

শাড়ির বাজারে এখন ট্রেন্ডিং ফ্যান্সি আর ট্র্যাডিশনালের মিশ্রণ। টিশু ক্রাস টিশু, অরগেঞ্জা, কোরা, দোপিয়েন, মসলিনের ভিড়ে পাল্লা দিয়ে চলছে পৈঠান, কাঞ্জিভরম, কাতান, তসর ঘিচা। দেশবন্ধু রোডের একটি নামকরা শাড়ির দোকানে দাঁড়ালেই বোঝা যায় কেমন ভিড়। সেখানকার কর্মী নাজ পরভিন ও বিজয় নন্দী বললেন, “এই রবিবার থেকেই ভিড়টা সবে শুরু হলো। আসলে সরকারি কর্মচারীদের অনেকেরই বেতন হয়ে গিয়েছে তো। আমাদের বিপণিতে ট্র্যাডিশনাল শাড়ির বিক্রি সবচেয়ে বেশি। তবে ফ্যান্সি শাড়ির বিক্রিবাটাও এবার বেশ ভালো।”
তরুণ প্রজন্মের ফ্যাশনে যেন ফিরে এসেছে নব্বইয়ের দশক। ব্যাগি প্যান্ট, কার্গো, ডবল পকেট শার্ট আবার ফিরে এসেছে নতুন স্টাইল নিয়ে। মেয়েদের মধ্যে হিট বুটকার্ট। হাজার টাকার মধ্যে ট্রেন্ডি ফ্রক, টপও চলছে দেদার। দেশবন্ধু রোডের এক ব্র্যান্ডেড শোরুমের কর্মী সাধন দাস ও কৃষ্ণ দাস জানালেন,
“মেয়েদের বুটকার্ট ব্যাপক বিক্রি হচ্ছে। সেই সঙ্গে ছেলেদের ব্যাগি প্যান্ট আর কার্গো। দুটি পোশাকের প্রচুর কালেকশন এসেছে। আগামী পাঁচ থেকে সাত দিনের মধ্যে আরও প্রচুর কালেকশন আসবে।”

অঞ্জলি ছাড়া পুজোর সকাল ভাবাই যায় না। আর অঞ্জলির জন্য পুরুলিয়ায় এ বছর জমকালো অফ হোয়াইট বোমকাই শাড়ির কদরই বেশি। সঙ্গে অবশ্যই পাঞ্জাবি। সদর থানার উল্টোদিকের বাজারে সারি সারি পাঞ্জাবির দোকানে রবিবার দুপুরেও গিজগিজ করছে ক্রেতা। সেখানকার বিপণি-মালিক মনোজকুমার গুপ্তা বলেন, “পুরুলিয়ায় সেভাবে পাঞ্জাবি বিক্রি হতো না। ২০২১ সাল থেকে পাঞ্জাবির বিক্রি বেশ ভালো। তাই প্রচুর কালেকশন নিয়ে এসেছি আমরা।”
শুধু কাপড় নয়, জুতোর বাজারেও উৎসবের হাওয়া। ফর্মালের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ফ্লোটাজ কিনছেন প্রায় সবাই। কমফর্টেবল, অ্যান্টি-স্লিপ আর ব্যবহারিক সুবিধার কারণে এ বছর এটাই হিট। সিটি সেন্টারের এক জুতো দোকানের ম্যানেজার অলোক দাস বলেন, “ছেলেরা বা মধ্যবয়স্করা ফরমালের পাশাপাশি একটা করে ফ্লোটাজ কিনছেন-ই। আসলে এই জুতো একেবারে কমফর্ট ও অ্যান্টি-স্লিপ। এছাড়া মোকাশিনো, হাসপাপিসের বিক্রিবাটাও বেশ ভালো।”

তবে বাজারের ভিড় ভাগ হয়ে গিয়েছে এখন দুই জায়গায়—দেশবন্ধু রোড আর সিটি সেন্টার। তবু কাপড়গলির টান এখনও আলাদা। সেখানকার ভিড়ই যেন পুজোর কেনাকাটাকে সম্পূর্ণ করে। আইনজীবী অনির্বাণ অধিকারী ও তাঁর স্ত্রী অর্পিতা অধিকারী বললেন, “পুজোর কেনাকাটা আমরা শুরু করে দিয়েছি কয়েকটা দিন আগে থেকেই। অনলাইনেও কেনাকাটা হয়েছে। আজ মূলত বাবা-মা-র জামাকাপড় কিনলাম। কাপড়গলি না এলে মনে হয় পূজোর কেনাকাটা হলো না। যতই শপিংমলের রমরমা হোক না কেন, পুজোর বাজারে কাপড় গলির গন্ধই যেন আলাদা।”
বেতন হাতে আসতেই রবিবারের শহর যেন সাজপোশাকে রঙিন হয়ে উঠল। হাতে মাত্র কয়েকটা সপ্তাহ। পুরুলিয়ার প্রতিটি দোকান, প্রতিটি বাজারই যেন ঘোষণা করছে—দুর্গাপুজো দরজায় কড়া নাড়ছে।
Post Comment