সুইটি চন্দ্র, পুরুলিয়া:
অতিবৃষ্টিতে যেন থমকে গিয়েছিলো আমন চাষ। একটানা বৃষ্টিতে ভেসে যাচ্ছিল কৃষকের স্বপ্ন।
বীজতলা যেন গলা জলে ডুবে হাহাকার করছিল। তবুও থেমে থাকেনি পুরুলিয়ার কৃষক সমাজ। প্রকৃতির বিরূপতাকেও অগ্রাহ্য করে মরিয়া চেষ্টা চালিয়ে গিয়েছেন তারা। বৃষ্টির ফাঁকে, মাটির ভেজা শরীরে কখনও ঘরের কোণে, কখনো উঠোনে
যেভাবে সম্ভব, তেমনভাবেই অঙ্কুরোদ্গম করিয়েছেন বীজ। বোরো ধানের মত পদ্ধতি অনুসরণ করে, বাড়িতে অঙ্কুরোদ্গম করিয়ে তা জমিতে সরাসরি রোপণের চেষ্টা করেন কেউ কেউ। তারই ফাঁকে ফাঁকে কিছুটা বীজতলা তৈরি হয়েছে—আর সেই সামান্য প্রস্তুতি নিয়েই শুরু হয়েছে আমনের চারা রোপণ। শনিবার পুরুলিয়া ১ নম্বর ব্লকের চাকলতোড় গ্রাম
পঞ্চায়েতের পুয়াড়া গ্রামে নিজের জমিতে আমনের চারা রোপন করেন।
একেবারে রাষ্ট্রমন্ত্রী মর্যাদার প্রোটোকল ভেঙেই।
তবে পথ এখনও দীর্ঘ। এখনও পর্যন্ত জেলাজুড়ে ৫০ শতাংশেরও কম জমিতে চাষ শুরু হয়েছে। সরকারি পরিসংখ্যান বলছে, ১১ জুলাই পর্যন্ত প্রায় ১১,২০০ হেক্টর জমিতে চারা রোপণ সম্পন্ন হয়েছে। কৃষি দপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, আবহাওয়ার প্রতিকূলতাই এই দেরির মূল কারণ।
পুরুলিয়ার উপ-কৃষি অধিকর্তা (প্রশাসন) আদিত্য দুয়ারি বলেন,
“চাষ শুরু হয়েছে বটে, কিন্তু এখনও অনেক জমি বীজতলার অপেক্ষায়। বৃষ্টির আধিক্যেই এমন দেরি হচ্ছে। তবে কয়েকদিনের মধ্যেই সবুজে ছেয়ে যাবে জেলার মাঠ।”
এই আশ্বাসের মাঝেও শঙ্কা থেকেই যাচ্ছে কৃষকদের মধ্যে। বামুনডিহা গ্রামের কৃষক অশ্বিনী মাহাতো জানালেন, “চারা রোপনের উপযুক্ত পরিস্থিতি এখনও আসেনি। জমি জলে থই থই করছে। তবুও অপেক্ষা করছি সেইক্ষনের জন্য যখন ধানের গন্ধে মুখরিত হবে আমাদের জনপদ।” তবুও আশা ছাড়েনি পুরুলিয়ার মাটি ও মানুষ। প্রকৃতির
চোখরাঙানিকে পাশ কাটিয়ে তারা এগিয়ে চলেছেন সবুজের প্রত্যাশায়। বর্ষার ভেজা বাতাসে এখন গুঞ্জন উঠছে—এই যে শুরু, এ যেন আবারও জীবনের জয়গান।
Post Comment